গত দেড় দশকে দেশে সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল— এমন মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, দেশকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তারা ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে ১১টি সংস্কার কমিশন, যারা ইতোমধ্যেই তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।
এ সমস্ত সংস্কার বাস্তবায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন, বিচারব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু খাতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থ বাজেটে।
সোমবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুদক সংস্কার
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থ বাজেট ঘোষণায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশোধন কার্যক্রম চলমান। জাতিসংঘের দুর্নীতি দমন কনভেনশন (UNCAC) অনুযায়ী বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গঠিত ‘দুদক সংস্কার কমিশন’ ইতিমধ্যে সুপারিশ জমা দিয়েছে, যা যাচাইপূর্বক বাস্তবায়ন করা হবে।
ভূমি ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর
ভূমি-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অটোমেটেড ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল ভূমিসেবা চালু করা হয়েছে। এবং জনগণের দোরগোড়ায় ভূমিসেবা পৌঁছে দিতে অটোমেশন প্রকল্প দ্রুত এগোচ্ছে।
নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার
নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে এ বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা সংস্কার হচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন
সারা দেশে অধস্তন আদালতগুলোর তত্ত্বাবধানে ১৩টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে জারি করা হয়েছে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫।
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতে পরিবর্তন
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খাতে পরিবর্তন নিয়ে এ বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, পাসপোর্ট প্রদানে বাতিল করা হয়েছে পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণের শর্ত। কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরের লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন।
আর্থিক খাতের সংস্কার
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে প্রণয়ন করা হয়েছে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫। মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্ব রোধ ও ব্যাংক পরিচালনায় তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে উদ্যোগ
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি বড় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কারসাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা এবং বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহে সুযোগ বাড়ানো হবে।
সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল সেবা
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, বাজেট প্রণয়ন ও বেতন প্রদানে iBAS++ ও EFT পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ১৭২টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের PL অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। Public Procurement Act সংশোধন করে সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও অচিরেই চালু হচ্ছে 'নাগরিক সেবা' অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
বিশেষ টাস্কফোর্স ও শ্বেতপত্র কমিটি
বিশেষ টাস্কফোর্স ও শ্বেতপত্র কমিটির বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা জানান, Re-strategizing the Economy এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বিষয়ে সুপারিশ পাওয়া গেছে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী অর্থবছরের বাজেট ও খাত ভিত্তিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।