উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাধারণ করদাতাদের জন্য বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার (২ জুন) বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের বর্তমান সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আগের মতোই বহাল থাকছে।
তবে কর কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ আয়ের অংশে নতুন করে ৩০ শতাংশ করহার সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, বছরে কারও আয় যদি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে সীমা অতিক্রান্ত অংশের ওপর তাকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি কর স্তর পুনর্বিন্যাস করে নিম্নরূপ হারে কর নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে:
প্রথম ৩.৫ লাখ টাকা: করমুক্ত
পরবর্তী ১ লাখ টাকা: ৫%
পরবর্তী ৪ লাখ টাকা: ১০%
পরবর্তী ৫ লাখ টাকা: ১৫%
পরবর্তী ৫ লাখ টাকা: ২০%
পরবর্তী ২০ লাখ টাকা: ২৫%
অতিরিক্ত আয়ের ওপর: ৩০%
বিশেষ শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা পুনর্বিন্যস্ত করা হয়েছে:
নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতা: ৪ লাখ টাকা
তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রতিবন্ধী করদাতা: ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা: ৫ লাখ টাকা
প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকের জন্য অতিরিক্ত করমুক্ত সুবিধা: ৫০ হাজার টাকা
‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪’-এ আহত গেজেটভুক্ত যোদ্ধাদের জন্য (২০২৬–২৭ অর্থবছর থেকে): ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা
নতুন করদাতার জন্য ন্যূনতম কর নির্ধারণ
নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা, যা করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলেই প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকাভেদে ন্যূনতম করহার ভিন্নরূপে রয়েছে:
ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: ৫ হাজার টাকা
অন্যান্য সিটি করপোরেশন: ৪ হাজার টাকা
সিটি করপোরেশন বহির্ভূত অঞ্চল: ৩ হাজার টাকা
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ১১ লাখের বেশি টিআইএনধারী (কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী) রয়েছে, তবে এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করেছেন প্রায় ৪০ লাখ করদাতা।
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা— যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
এর আগে সোমবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনা। যা বিকাল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।