X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৈধ নৌযান বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার, অবৈধের হিসাব নেই

সুবর্ণ আসসাইফ
১৫ জুলাই ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১১:১৩

গত ১০ বছরে দেশে নতুন নৌযান নিবন্ধিত হয়েছে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি। প্রতিবছর নৌযানের সংখ্যা বাড়লেও সব নিবন্ধনের আওতায় আসছে না। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। নৌপরিবহন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত অভ্যন্তরীণ নৌযানের মোট সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৮০টি। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৩৬৭টি। অর্থাৎ ১০ বছরে নৌযানের সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৬১৩টি।

বৈধ নৌযানের সংখ্যা
নৌপরিবহন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নৌযানের মধ্যে নিবন্ধিত আছে—যাত্রীবাহী ৮৫৭টি, যাত্রীবাহী বোট ৫৪৯টি, মালবাহী ৩৭৪৪টি, তেলবাহী ৩৯০টি, বালুবাহী ৬৩৭৯টি। ড্রেজার ১৭৯৬টি, পণ্যবাহী নৌযান ১২১২টি, বার্জ ৫৪৪টি, টাগবোট ১৭৯টি, স্পিডবোট ১০০৩টি, ফেরি ৪৬টি, ওয়ার্কবোট ১৩৭টি, পরিদর্শন বোট ২৬টি, ট্যুরিস্ট লঞ্চ ১০টি ও অন্যান্য ১০৮টি। এছাড়া ২০২৩ সালের পহেলা মে পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ১৫ হাজার ৯২৯টি সমুদ্রগামী ও কোস্টাল জাহাজ। অর্থাৎ দেশে বৈধ অভ্যন্তরীণ নৌযান এবং সমুদ্রগামী ও কোস্টাল জাহাজের সংখ্যা ৩২৯০৯।

অবৈধ নৌযানের সংখ্যা কত?
‘অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ (আইএসও) ১৯৭৬’-এর অধীনে প্রণীত বিধি এবং এ সংক্রান্ত দফতর আদেশ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন ১৬ হর্স পাওয়ার (অশ্বশক্তি) ক্ষমতাসম্পন্ন অথবা ১২ জনের অধিক যাত্রী ধারণক্ষমতার ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলের জন্য নকশা অনুমোদন, নিবন্ধন ও সার্ভে (ফিটনেস) বাধ্যতামূলক।

দেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যার বাইরে কত নৌযান আছে তার কোনও তথ্য নেই নৌপরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে। দেশে কত সংখ্যক নৌযান চলাচল করছে তার পরিসংখ্যান তৈরি করতে ২০১৬ সালে নৌযান শুমারির উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে এই সংখ্যা এক থেকে দুই লাখ।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'নৌশুমারির একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেটার অগ্রগতি হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে অধিদফতরের মহাপরিচালকদের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পেরেছি অবৈধ নৌযানের সংখ্যা লক্ষাধিক।'

নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, 'কিছু যান আছে একেবারেই নিবন্ধন নেই। আবার কিছু যান আছে অভ্যন্তরীণ লাইসেন্স আছে কিন্তু তারা সমুদ্রেও যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ধরলে সংখ্যাটা অর্ধ লাখের কাছাকাছি হবে।'

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাজাদা তরফদার বলেন, 'অনিবন্ধিত নৌযান কতটি এটা বলা মুশকিল। ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচলের অধ্যাদেশটি ২০০১ সালে আপডেট করা হয়। এরপর ২০ বছর এটিতে আর হাত দেওয়া হয়নি। তবে অবৈধ নৌযান প্রতিবছর যতই বাড়ুক, নিবন্ধনের আওতায় না আনলে সরকার রাজস্ব হারাবে। এছাড়া এসব নৌযান নিয়ন্ত্রণ করাও কষ্ট। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।'

লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, 'নিবন্ধিত নৌযানের বাইরে কতগুলো নৌযান রয়েছে—এটি জানা নেই। তবে বর্তমানে নৌযানের নিবন্ধন সংখ্যা বাড়ছে। মালিকরাও সচেতন হচ্ছে।'

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, বাড়ছে অপরাধ
অনিবন্ধিত নৌযানের ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি নৌপথে অপরাধও বাড়ছে। একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নৌপথের যাত্রী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, 'প্রথমত সরকার নৌপথে নাব্য ঠিক রাখতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু অবৈধ যানগুলো থেকে কোনও রাজস্ব পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, অবৈধ নৌযান দুর্ঘটনার শিকার হলে নথিভুক্ত করা হয় না। এসব যানে যারা মাস্টার-ড্রাইভার থাকে তাদেরও সার্টিফিকেট থাকে না। ফলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তারাও চেষ্টা করে বিষয়টা গোপন করে যেতে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার মনে হয় কর্তৃপক্ষ এটিতে মনোযোগী না। এসব নৌযান নির্দিষ্ট করে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ছাড় দিতে হবে। যাতে অবৈধ এসব যান নিবন্ধনে মালিকদের আগ্রহ তৈরি হয়। সরকার শিথিল হলে, সচেতনতা বাড়ানো হলে, নৌযান নিবন্ধন বাড়বে, এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।'

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'দেশে একটি নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেই দেখা যায়, ওইটির কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য কমানো না গেলে নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব না। নদীপথে চলাচলরত নৌযান দেখে বোঝার উপায় থাকে না কোনটা নিবন্ধিত আর কোনটা অনিবন্ধিত। অনিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা কত এ বিষয়ে কোনও ধরনের তথ্য পাওয়া যায় না। এসব কারণে নদীপথে যেমন দুর্ঘটনা বাড়ছে, অপরাধ বাড়ছে, যাত্রীদের ঝুঁকিও বাড়ছে।'

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, 'চাঁদাবাজি বৈধ, অবৈধ সব নৌযানেই হয়। এর বাইরে অবৈধ নৌযান থেকে প্রশাসনও সুবিধা নিয়ে থাকে। বিশেষ করে বালুবাহী জাহাজগুলো রাতে চলার অনুমতি নেই, তারপরও তারা রাতে চলছে।'

/এমএস/এমওএফ/
টাইমলাইন: নাগরিক পরিবহন
১৫ জুলাই ২০২৩, ১০:০০
বৈধ নৌযান বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার, অবৈধের হিসাব নেই
১৩ জুলাই ২০২৩, ১০:০০
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট, ৫ উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
সর্বশেষ খবর
দুর্গম চর থেকে সিনেমার নাম ভূমিকায় এই শিশু
দুর্গম চর থেকে সিনেমার নাম ভূমিকায় এই শিশু
মোহামেডানকে ফাইনালে তোলা গোল করে আনন্দে ভাসছেন ইমন
মোহামেডানকে ফাইনালে তোলা গোল করে আনন্দে ভাসছেন ইমন
শান্ত-শরিফুলকে নিয়ে ক্লেমনের নতুন ক্যাম্পেইন
শান্ত-শরিফুলকে নিয়ে ক্লেমনের নতুন ক্যাম্পেইন
পোশাক শিল্পের হাত ধরেই দেশ উন্নত হবে: পাটমন্ত্রী
পোশাক শিল্পের হাত ধরেই দেশ উন্নত হবে: পাটমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা