ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রথম অংশ আজ (২ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসা যাবে মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটে। যোগাযোগের নতুন এই সুবিধা যানজটের শহরে ভোগান্তি কমাবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।
তারা বলছেন, সড়কপথে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে সাধারণত আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লেগে যায়। সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে কখনও কখনও দেড়-দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি লেগে যায়। সেখানে ১২ বা ১৫ মিনিটে এই পথে গন্তব্যে যাওয়া যেন স্বপ্নের মতো!
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনকে সামনে রেখে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে নিয়মিত যাতায়াত করা দুই ডজনের বেশি যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদক। তাদের অধিকাংশই বলছেন, রাজধানীর যেসব রুটে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়, তার মধ্যে এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট রুট অন্যতম। এই রুটে প্রতিদিন যাতায়াতের সময় কম-বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এমন বাস্তবতায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সময় বাঁচাবে, স্বস্তি বয়ে আনবে, জীবনে গতিশীলতা আনবে বলে আশা করছেন তারা। তবে এই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল থাকায় ভাড়া কত বাড়বে, সেটি নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন অনেক যাত্রী।
কাওলায় বসবাস করা মহিবুল আলম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিন ফার্মগেট দিয়ে যাতায়াত করেন তিনি। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চালু হলে মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি। মহিবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের মতো যারা তরুণ, তারা সময় আর ভোগান্তি এড়িয়ে চলতে চান। টাকার ব্যাপারে কম চিন্তা করেন। এক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেসওয়ে সুফল দেবে বলেই আশা করি।
টোলের পরিমাণ নিয়ে আরশাদুল ইসলাম নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, ভালো সার্ভিস নিতে হলে আপনাকে ভালো চার্জ দিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। প্লেনের ইকোনমিক ক্লাসের থেকে বিজনেস ক্লাসের ভাড়া এ কারণেই বেশি হয়। তবে অবশ্যই সাধারণ মানুষের আয়ত্বের মধ্যে যেন থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। না হলে সবার ওপর চাপ বেড়ে যাবে।
তাজুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলছেন, যদি সব গাড়ি এখানে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে করে দেওয়া হয় তাহলে উপকার হবে। কেউ যদি সিএনজি নিয়ে কোথাও যেতে চায় আর যদি সেটা না পারে তাহলে কোনও লাভ হবে না।
নগরীতে যারা মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করেন তাদের একজন শিপন। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে হলো কিন্তু শুধু চার চাকা উঠতে পারবে এটা তো হলো না। আমরা টোল দিয়েই উঠবো, কিন্তু আমাদের ওখানে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হোক। তাহলে আমরা এর সুবিধাটা পাবো।
গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। তবে পথচারী ও বাইসাইকেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর চলবে না। আপাতত মোটরসাইকেলও চলাচল করবে না।
কাওলায় বাসের জন্য অপেক্ষমান প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করা আরিফুজ্জামান রিপন বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। আমরা যারা ঢাকা সিটির মধ্যে দূরের জায়গায় কাজ করি তারা বেশি সুবিধা পাবো। কারণ আমাদের দীর্ঘ সময় বাসে জ্যামে বসে কাটাতে হয়। এতে সময় যেমন নষ্ট হয় আবার শারীরিক এনার্জিও নষ্ট হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ের ফলে আমাদের টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে অনেক সুবিধা হবে।
কাওলা থেকে প্রতিদিন মতিঝিল গিয়ে অফিস করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে উন্নয়নমূলক কাজের খুবই দরকার। তবে এটা আংশিকভাবে চালু হচ্ছে, যদি পুরাপুরিভাবে চালু হতো তাহলে হয়তো এর পুরো সুবিধাটা পাওয়া যেতো। এখন যদি আমি এখান থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠি তাহলে আমাকে ফার্মগেট গিয়ে নামতে হবে। আবার ফার্মগেট থেকে বাসে উঠে মতিঝিল যেতে হবে। আমাকে আবার সেই জ্যামেই পড়তে হবে। তাই আসলে পুরো সুবিধাটা পাচ্ছি না। তাও আমি বলতে চাই যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আর সরকার যে অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নিচ্ছে সেটা বলতেই হবে।
জুরাইন থেকে কাওলা প্রতিদিন ক্লাস করতে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তুলি। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে যে সুবিধা হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর পুরোপুরি চালু হলে আমার জন্য অনেক বেশি সুবিধা হবে। কারণ আমার প্রতিদিন জুরাইন থেকে কাওলা এসে ক্লাস করতে হয়। আমার আসতে অনেক সময় লেগে যায়, অনেক সময় ক্লাস মিসও করে ফেলি। তবে এটার যে চার্জ (টোল) সেটা যেন সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে সেটা সরকারের দেখা উচিত। কারণ চার্জ বেশি হলে সবার জন্য সুবিধা হবে না। তাই সবার যাতে সুবিধা হয় সে দিকটা যেন দেখা হয়।
এদিকে, লোকাল বাস যদি এক্সপ্রেসওয়েতে না যায় তাহলে যানযট কমবে না বলে মনে করছেন বাসে চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রী। তারা বলেন, লোকাল বাসগুলো টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে না। কারণ তাহলে জায়গায় জায়গায় থামতে পারবে না। আর এটা যদি কমানো না যায় রাস্তায় যানযট কমবে বলে মনে করি না।
অন্যদিকে, বিমানবন্দর-ফার্মগেট রুটে চলাচল করা এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু পরিবহনের চালক রাকিব বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে আমাদের গাড়ি চলবে নাকি নিচ দিয়ে চলবে, তা এখনও মালিকপক্ষ জানায়নি। টোল থাকায় ভাড়া কত বাড়বে, তাও ঠিক হয়নি। এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। মালিক যেখান দিয়ে গাড়ি চালাতে বলবে, সেখান দিয়ে চালাবো।
অপর একটি বাসের হেলপার নাসির বলেন, আমরা তো লোকাল গাড়ি চালাই। আমাদের ওইটা (এক্সপ্রেস ওয়ে) দিয়ে উঠলে পোষাবে না। আমরা নিচের রাস্তা দিয়েই যাবো। কিন্তু ওপর দিয়ে গেলে দ্রুত যাওয়া যাবে। তাতে আমাদের যাত্রী কমে যাবে। কারণ সবাই তখন দ্রুত যেতে চাইবে।