X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা বাজেট ২০২১-২০২২: বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ

কে এম এনামুল হক
০৬ জুন ২০২১, ১৭:১৯আপডেট : ০৬ জুন ২০২১, ১৭:১৯

কে এম এনামুল হক বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির দ্বিতীয় বছরে জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথ বাংলাদেশ গড়তে ৩ জুন ২০২১ তারিখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি, জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫%। পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ১১.৯২%।  জাতীয় আয়ের (জিডিপি) হিসেবে তা ২.০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ। সরকারের অঙ্গীকার এবং আন্তর্জাতিক মানের দিকে তাকালে এ বরাদ্দ অত্যন্ত নগণ্য। উল্লেখ্য, যেকোনও দেশের শিক্ষা বাজেট সেই দেশের মোট বাজেটের ন্যূনতম ১৫-২০% বা জাতীয় আয়ের ৪-৬% হওয়া প্রয়োজন।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ। এখানে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

জীবন-জীবিকা সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ধরিত্রীকে রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, শান্তি-সম্প্রীতি ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং যথাযথভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অংশীজনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে এই বাজেটে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সাযুজ্যতা রেখে রূপকল্প-২০৪১ এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৩ জুন ২০২১ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮,০৫,৯৮০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১২,৭২৪ জন মারা গিয়েছে এবং ৭,৪৬,০৩৫ জন আরোগ্য লাভ করেছে। এখন দেশে দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। কোভিড-১৯ অতিমারির এমন বিরূপ প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এই বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রণোদনা, কৃষি সম্প্রসারণ ও খাদ্য নিরাপত্তা, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, পল্লি উন্নয়ন এবং কর্মসৃজনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষাকে চতুর্থ অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই এই বাজেটে শিক্ষা পুনরুদ্ধারে প্রত্যাশাও অনেক।

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে বিগত ১৬ মাস যাবৎ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে, শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার কথা দীর্ঘদিন যাবৎ বলা হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয় কমে যাওয়ার ফলে, তাদের ও সন্তানদের লেখাপড়া এবং জীবন-জীবিকা বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা দুরূহ। এর পাশাপাশি সরকারের দিক থেকে বিশেষ উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু টেলিভিশন, ইন্টারনেট, কমিউনিটি রেডিও এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেসব দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

এবারের বাজেট ঘোষণার পর একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে প্রথমেই বুঝতে চেয়েছিলাম size, share, sensitivity এবং scrutiny-র লেন্সে এবারের বাজেটটি কেমন হলো? অর্থাৎ, শিক্ষা বাজেটের আকার (size) কত, মোট বাজেটের তুলনায় শিক্ষা বাজেট কতটুকু (share) বড় বা ছোট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসহ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার পূরণে এবং প্রান্তিক ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করতে বা তাদের বিশেষ চাহিদা পূরণের জন্য বাজেটে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে (sensitivity) এবং বিগত বছরের বাজেট কোথায় কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে (scrutiny) বা এবারের বাজেট কীভাবে ব্যবহার হবে, ইত্যাদি জানা।


বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দকৃত ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা, যা এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৩৬.৫৭%। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা শিক্ষা বাজেটের ৫০.৭১%। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা শিক্ষা বাজেটের ১২.৭২%। বরাবরের মতো এবারও মোটাদাগে শিক্ষা বাজেটে আকার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাজেট একত্রিত করে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় ন্যূনতম ৪৫% বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের অধিকাংশ বিদ্যালয় স্বল্প খরচের বেসরকারি বিদ্যালয় হওয়ায় এবং শিক্ষকদের পূর্ণ বেতন-ভাতাদি সরকারি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও সেখানে মোট বাজেটের ৫০.৭১% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনায় এবং অর্থ বরাদ্দে একটি বড় ঘাটতি রয়েছে।  আরও লক্ষণীয় যে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ১০ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও ২০২১-২২ বছরে এক খাতে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ হাজার ২২ কোটি টাকা মাত্র, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা কম।

প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় বরাদ্দ মাথাপিছু অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি না করায় মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তার ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। বিদ্যালয়গামী শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ২০১৯ সালে একটি জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ধাপে ধাপে ১৭, ২৫০, ৩৫০, ৪৫০, ৫১৩টি উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল কার্যক্রম সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা ছিল যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখছে না।

‘সাপোর্ট টু কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট ইন প্রাইমারি এডুকেশন প্রকল্প’ এবং ‘কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স প্রকল্প’ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য বিশেষ প্রকল্প/ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

কোভিডকালীন শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সব শিক্ষার্থীর আইসিটি ডিভাইস প্রদান এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আইসিটি-ভিত্তিক ব্লেনডেড লার্নিং পদ্ধতি প্রণয়ন বহুল প্রত্যাশিত হলেও বাজেটে তার যথাযথ প্রতিফলন দেখা যায়নি। শুধু ৫০৯টি আইসিটি ল্যাব স্থাপন করে সামনে আগানো অত্যন্ত কঠিন।

অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ইঙ্গিত থাকলেও এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। সুবিধাবঞ্চিত যুবদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে স্বল্পমেয়াদি কোর্সের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইত্যাদি এলাকার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ ঢেলে সাজানো এবং সিঙ্গাপুর ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত এগুনো প্রয়োজন।

এছাড়াও সরকার যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ঘোষণা দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ শ্রমিকের জোগানের সিংহভাগ এই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা থেকেই আসতে হবে।  সে জন্য দরকার বিপুল সংখ্যক দক্ষ প্রশিক্ষক।

কোভিড-১৯-এর প্রতিঘাত কমাতে, বিশেষ করে গার্মেন্ট সেক্টরে কর্মরত ৫০ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি তুলনায় ভবিষ্যৎ কর্মবাজারে প্রবেশের উপযোগী করতে চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ছিল অপ্রতুল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লক্ষ ছয় হাজার ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৬১ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে মোট ৭৫ কোটি টাকার নগদ সহায়তা ছিল অপর্যাপ্ত। এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃশর্ত সুদবিহীন শিক্ষা ঋণ প্রবর্তন করে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছা বাংলাদেশের জন্য এখন সময়ের দাবি।

শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হলেও তাতে সবার প্রবেশগম্যতা ছিল না। অপ্রত্যাশিতভাবে বিদ্যালয় বন্ধ এবং হঠাৎ দূরশিক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই ২০২০ সাল ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। যেসব পরিবারে বাবা মার শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলনামূলক কম তাদের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটি ছিল আরও প্রকট। এ যেন ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহরের পার্থক্যের মতো একটি ডিজিটাল ডিভাইড তৈরি করেছে। মূলধারার সব বিদ্যালয়ের (প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম একটি করে আইসিটি ডিভাইস দেওয়া এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে আইসিটি ভিত্তিক কার্যক্রমে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ থাকা বাঞ্ছনীয়।

করোনার শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কার্যক্রমের আওতায় জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা পরিচালনার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষার নতুন চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করা জোরদার হলেও বছরের শেষ প্রান্তে গিয়ে অনেকটা ছন্দপতন লক্ষ করা গেছে।

দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে, বেসরকারি উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থান বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যেসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার অধিকাংশই মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। সরকারের দিক থেকে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রায় ৫০০০ টাকা করে একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা হলেও তা ছিল শিক্ষকদের জীবন-জীবিকার জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল।

অনেকেই ধারণা করছেন সরকারি উদ্যোগে মূলধারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটিভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও মানোন্নয়ন না ঘটলে কোভিড-১৯ পরবর্তীকালে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা একদিকে যেমন বিদ্যালয়ে না যাওয়ার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে ছিল, অন্যদিকে তেমনি অভাব-অনটনসহ অন্যান্য সামাজিক অনাচারের প্রভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এর পাশাপাশি অনেক শিশু গৃহকর্ম অথবা শিশু শ্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে অনেক মেয়ে এবং আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বিবেচনার দাবি রাখে।  উচ্চশিক্ষায় গবেষণা কার্যক্রম প্রসারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
২০২০-২১ অর্থবছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ চাহিদা, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার মতো কার্যক্রমগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

গত বছর ইউনেস্কো এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড ১৯-এর ফলে পারিবারিক অর্থ সংকট, শিশুশ্রম, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, ঝরে পড়া, অপুষ্টিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও বাল্যবিবাহের কারণে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বিগত দুই দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে তা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল তা এখনও বলবৎ। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং অধিকারের কথা বিবেচনা করে মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

বাজেট বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সব ক্ষেত্রেই মজুরি ও বেতন এবং প্রশাসনিক ব্যয় খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

“Made in Bangladesh” ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা, একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা অর্জন,এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর অবকাশের আওতায় আনা একটি ভালো উদ্যোগ। পক্ষান্তরে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের ওপর ১৫% হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মধ্যম আয়ের পরিবারে পারিবারিক খাতে শিক্ষা ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেবে।

অর্থাৎ, অনেক উদ্যোগ সত্ত্বেও বরাবরের ন্যায় শিক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো রয়েই গেলো। জাতীয় বাজেটের পর বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করে এ ঘাটতি দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। যা পরবর্তীতে সম্পূরক বাজেট অথবা সংশোধিত বাজেটের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে।

লেখক: উপ-পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান ও জাতীয় সমন্বয়ক, এডুকেশন আউট লাউড।

email: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ