শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা খুশি-উচ্ছ্বসিত। সরকারি ও স্কুলের বিধিনিষেধ মেনেই চলেছেন সবাই। তবে কিছু বিষয়ে এখনও আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। স্কুল ফটকে অভিভাবকদের জটলা পাকানো এবং শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে আড্ডার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার কথা বলছেন সবাই।
স্কুলের সামনে সামনে ছিল অভিভাবকদের জটলা
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুল খোলার প্রথম দিনে সকাল সকাল বাবা মায়ের হাত ধরে আসা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে স্কুলটির সামনে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পরে যে শিক্ষার্থীরা এসেছে তারা এই ভিড় ঠেলেই স্কুলের মধ্যে প্রবেশ করেছে। বারবার হ্যান্ড মাইক দিয়ে স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করলেও তারা সেটাতে কর্ণপাত করেননি। ফুটপাতে পথচারী অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের এই ভিড় ছিল শেষ পর্যন্ত।
রাহাদ ইবনে হাসান নামে এক শিক্ষার্থীর বাবা জাহাঙ্গীর হাসান। তিনি তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে স্কুলে এসেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাসায় খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি। কিন্তু এখানে স্কুলের গেটে সবাই যাচ্ছেন, তাই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
সন্তানদের স্কুলে এনে অভিভাবকরা ছিলেন প্রফুল্ল
প্রায় দেড় বছর পর স্কুলে এসেছে শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেকেরই নতুন শ্রেণি। যে শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল বন্ধ হয়েছিল, সেই শ্রেণিতে নেই কেউ। নতুন শ্রেণিতে আজই ছিল সশরীরে পাঠদান। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ছিল সমান উচ্ছ্বাস। ধানমণ্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে রিজিয়া পারভীন নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাসায় বসে গত দেড় বছর ধরে মোবাইল আর কম্পিউটারে ছেলে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। স্কুলে আসা-যাওয়া থাকলে একটু ব্যস্ততা বাড়বে। স্কুল খোলায় আমরা খুশি। তবে আরও স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। স্কুলে যাতে আজকের মতো সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় সেই অনুরোধও করেন তিনি।’
বাসা থেকে পানি ছাড়া অন্য খাবার আনেনি শিক্ষার্থীরা
প্রথম দিনে রাজধানীর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পড়েই এসেছে। তাদের ব্যাগও ছিল ভর্তি। অল্প সময়ের জন্য স্কুলে আসলেও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ছিল না ঘাটতি। তবে টিফিন আনতে দেখা যায়নি কাউকে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা কেউ টিফিন নিয়ে আসেনি। তারা আগে থেকেই জানতো, খাবার আনা যাবে না। তাছাড়া অল্প সময়ের জন্য অভিভাবকরাও খাবার দিতে আগ্রহ দেখায়নি।
শিক্ষার্থীরা ছিল উচ্ছ্বসিত
রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডি বয়েজ, আজিমপুর গার্লস স্কুলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার স্কুলে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকরা স্কুল খোলার প্রথম দিন কেমন কাটে তা পর্যবেক্ষণে ছিলেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্কুলে এসে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে। সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুল আঙিনায়, ফুটপাতে গল্প করেছেন। তবে এ সময় অভিভাবকরা তাদের বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য সতর্ক করেছেন।
সিহাব নামে রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের স্কুল আঙিনা অনেক বড়। এখানে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারে। আমরা বন্ধুরাও শারীরিক দূরত্ব মেনে শ্রেণিকক্ষে বসেছি। অনেকদিন পর সবার সঙ্গে দেখা, তাই কথা বলতেই হয়।’
সচেতন অভিভাবকদের রয়েছে উৎকণ্ঠাও
অনেক অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীন থাকলেও কেউ কেউ ছিলেন সতর্ক ও উৎকণ্ঠায়। ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর বাবা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুলগুলোতে এমনিতেই আসনের সংখ্যার চেয়ে শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি করা হয়। এখানে প্রতিটি শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীদের চাপ রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কঠিন। তারপরও সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। স্কুল না খুলে দিলেও চিন্তা, আবার খুলে দিয়েছে তাতেও চিন্তা রয়েছে।’
স্কুল খোলার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতায় খুশি সরকার
প্রথম দিনে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে যে তৎপরতা, আগ্রহ দেখিয়েছে তাতে খুশি সরকার। তবে এ বিষয়ে ছাড় না দেওয়ার অনুরোধ। প্রতিটি দিনই এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এটা শুরু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের জটলা না পাকানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে হাত ধরে দিয়ে স্কুলে দিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে তারা যেন স্কুলগুলোর সামনে জটলা না করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সন্তানদের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই সবাইকে মানতে হবে।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন ও এস এম আববাস