X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে ফিরতে হবে ৭২-এর সংবিধানে

লীনা পারভীন
২২ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৮আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৮

লীনা পারভীন ‘আফগানিস্তানের শিয়া মসজিদে হামলায় ৪৭ জন মুসলিম নিহত হয়েছে। দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’– এমন সংবাদ অহরহই আসছে। দু’দিন পর পর এমন হামলা হচ্ছে এবং মুসলমানরা মারা যাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা সরাসরি কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে ধারণ করেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে অন্য কোনও ধর্মের লোক থাকতে পারবে না। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ঘরবাড়ি, মন্দির ভেঙে দিচ্ছে, লুটপাট করছে। এবারের দুর্গাপূজায় যা ঘটে গেলো এরপর বাংলাদেশ আর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দাবিকে শক্তভাবে সামনে আনতে পারবে না।

কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হলো পূজামণ্ডপ ভাঙা, লুটপাট। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে। চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় শুরু হলো মন্দির, মণ্ডপ ভাঙা। হামলায় নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

কেন? এর পেছনের কারণ কি শুধুই ধর্মীয় বিদ্বেষ? তারা কোন ইসলাম ধর্মকে ধারণ করে এ হামলা করলো? ইসলামের কোথায় বলা আছে দুনিয়ার মাটিতে কেবল ইসলাম ধর্মের লোকেরাই থাকতে পারবে?

তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যে মুসলমানেরা কেবল নিজেদের একটি পৃথিবী চায়। তাহলে আফগানিস্তানে তো হিন্দু নেই, পূজা নেই, মণ্ডপ নেই, সেখানে হামলা হয় কেন? মসজিদ তো মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান, যেখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা হয়। সেই মসজিদে হামলা করলো কারা? হামলাকারীর পরিচয় তো মুসলিম। এর কী ব্যাখ্যা আছে?

এর ব্যাখ্যা আসলে একটাই। এরা কেউই কোনও ধর্মকে বিশ্বাস করে না। এদের মগজে আছে কেবল হিংসা আর বিদ্বেষ। এরা মানবতা কাকে বলে জানে না। এদের পরিচয় জঙ্গি। জঙ্গিদের কোনও ধর্ম হয় না। এর প্রমাণ আমরা আফগানিস্তানের ঘটনাতেই পাচ্ছি।

তার মানে বাংলাদেশেও যারা সাম্প্রদায়িক হামলা চালাচ্ছে তারা কেউই ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে কিছু করছে না। দেশে যদি একজন হিন্দু বা অন্য ধর্মের লোকও না থাকে তাহলে দেখা যাবে এরা মুসলমানদের ওপর হামলা করছে। তখন ইস্যু আসবে কেবল মুসলমান হলেই হবে না, কে কোন বিশ্বাসের অনুসারী সেই হিসাব। ঠিক আফগানিস্তানে যা ঘটছে।

অর্থাৎ, এখানে পেশিশক্তিই হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। নিজেদের সংখ্যাগুরু ঘোষণা দিয়ে চলবে এসব হামলা।

তাই বলছি, জঙ্গিদের যেমন কোনও ধর্ম নেই, ঠিক তেমন তাদের কোনও নির্দিষ্ট রাষ্ট্রও নেই। রাষ্ট্র নেই, তাই রাষ্ট্রীয় নীতিকেও তারা তোয়াক্কা করে না। এরা একটি রাষ্ট্রে বসবাস করবে কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়মনীতি বা বিশ্বাসকে পরোয়া করে না। এদের কাছে নিজেরটাই সেরা। গোটা পৃথিবীজুড়ে এখন এমন জঙ্গিবাদের জোয়ার চলছে। সেই ধাক্কায় দুলছে বাংলাদেশও।

আমি জানি না আমাদের সরকার, প্রশাসনের কর্তারা কী ভাবছেন? কেন এই জঙ্গিদের রুখে দেওয়া গেলো না। কুমিল্লার ঘটনার পর আরও হামলা হতে পারে এমন ইঙ্গিত কিন্তু ছিলই। আমরা সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছিলাম বিষয়টি। তাহলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন কেন সচেতন হলো না?

জানা যায়, নোয়াখালীতে হামলার সময় পুলিশকে কাছে পাওয়া যায়নি, স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসেনি ঘটনা থামাতে। নির্বিচারে হামলা চালিয়ে চলে গেলো জঙ্গিগুলো। এর দায় কার? রাষ্ট্র কি নেবে এই দায়? নিতে তো হবেই। কারণ, এ ব্যর্থতা যে রাষ্ট্রেরই।

একটি রাষ্ট্র তৈরি হয় সব মানুষের অবদানে। এখানে কে কোন ধর্ম বা জাত, সে নারী না পুরুষ সে বিবেচনা আসে না। রাষ্ট্রের আইন তাই সবার জন্য সমান। সকল সুযোগ-সুবিধা সবার জন্য সমান থাকে। সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। সেই সংবিধানেই বলা আছে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা। তাহলে সরকার কেন সেই বিধান মানতে পারবে না? সরকার কেন একজন হিন্দুকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না? শপথ নেওয়ার সময় তো সবার দায়িত্ব নেবে এমনটাই কথা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তখন এরা কারা যখন বলে বেড়ায়, ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার। কাদের এত বড় সাহস যারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে উপেক্ষা করে দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালায়? প্রশাসনের ভেতরে কারা আছে যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করলেও জঙ্গি মানসিকতাকে ধারণ করে? কারা তারা যারা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়?

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। কোথায় সেই সফলতার ফসল? তলে তলে এত জঙ্গি কেমন করে জন্ম নিচ্ছে। কেবল প্রকাশ্যে এলেই আমরা দেখতে পারি কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে জঙ্গি মানসিকতার চাষ হচ্ছে তাকে রুখবে কারা? কেমন করে?

এর সমাধান একটাই। রাষ্ট্রের গা থেকে মুসলমানের তকমা সরিয়ে দেওয়া।

রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও ধর্ম থাকতেই পারে না। রাষ্ট্র হবে উদার, গণতান্ত্রিক, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার সংরক্ষণ করতে বাধ্য রাষ্ট্র। সংবিধানকে সংশোধন করে অবিলম্বে ৭২-এর সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ