X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার পরে কারা কেমন থাকবেন

আমীন আল রশীদ
১৫ মে ২০২০, ১৭:৩১আপডেট : ১৫ মে ২০২০, ১৭:৩৪

আমীন আল রশীদ সাংবাদিক হাসান মামুন ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতায় লিখেছেন, রাজধানীর যে এলাকায় তিনি থাকেন, সেখানের রাস্তাঘাটে ইদানীং এমন সব অপরিচিত লোককে সহায়তার জন্য হাত পাততে দেখা যাচ্ছে, যাদের কথাবার্তা আর চালচলনে বোঝা যায় তারা পেশাদার ভিখারি নন; বরং কিছুদিন আগেও হয়তো তারা কোনও কাজ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন বেকার। ঘরে খাবার নেই। সরকারের খাদ্য সহায়তাও হয়তো সবাই পাচ্ছেন না। পেলেও তাতে দু-চারদিন হয়তো চলে। কিন্তু এরপর আবার খাবারের চিন্তা।
অস্বীকার করার উপায় নেই, সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া মোটামুটি সব পেশার মানুষই করোনার ফাঁদে পড়েছেন। বিশেষ করে বেসরকারি চাকরিজীবীরা। আর পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত দিনমজুরদেরও দুশ্চিন্তা কাটছে না। হাতেগোনা কিছু রিকশাচালক ছাড়া অন্য দিনমজুররা এখন বেকার। এমনকি গৃহকর্মীরাও। রিকশা ছাড়া সব পাবলিক পরিবহন বন্ধ। ফলে এক অর্থে দিনমজুর বাসের চালক-হেলপার-কন্ডাকটররাও এ মুহূর্তে বড় সংকটে রয়েছেন। সেসব মানুষও যদি এখন রাস্তায় নেমে মানুষের কাছে হাত পাতেন, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, করোনার কারণে সারা বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ বেকার হবে। বিকল্প আয়ের উৎস ছাড়া এই মানুষদের টিকে থাকার কোনও উপায় থাকবে না। প্রশ্ন হলো, সেই ১৬০ কোটির মধ্যে বাংলাদেশে কত? সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য সব পেশার মানুষই এখন ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন। করোনার কারণে সারা দেশের অর্থনীতি যে ভয়াবহ সংকটে এরইমধ্যে পড়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাতে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কতগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, আবার যেগুলো চালু থাকবে সেখানে কত লোক ছাঁটাই হবেন, তা এখনই বলা মুশকিল। এমনকি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানও নিজেদের বাজেট কমাবে। বাজেট কমানো মানে কর্মী ছাঁটাই। এখন করোনার সময়ে মানবিক কারণে হয়তো অনেকে ছাঁটাই করছে না। কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের সঙ্গে কী আচরণ করবে, তা বলা যাচ্ছে না।

সন্দেহ নেই করোনার ফলে দেশে বেকারত্ব বাড়বে। আর বেকার হওয়া মানুষগুলো রজধানীসহ বড় শহরগুলো ছেড়ে নিজেদের ছোট শহর অথবা গ্রামে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে তারা নিজেদের মতো কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন। অনেকে হয়তো গ্রামের জায়গা-জমি বিক্রি করে কোনও ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন। জমি বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। যাদের পয়সা আছে তারা অল্প দামে জমি কিনে নেবেন। অনেকে এসবের মধ্য দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন। অনেকে ব্যর্থ হবেন। অনেক আবার শহরে ফিরে আসবেন। সব মিলিয়ে অসংখ্য পরিবারে অশান্তি শুরু হবে। পারিবারিক কলহ এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় শক্তি তৈরি পোশাক খাত। করোনার কারণে অন্যান্য খাতের মতো এই খাতও বিপদের সম্মুখীন। কারণ সারা বিশ্ব লকডাউন থাকায় বিদেশি ক্রেতারা এখন পোশাক কিনছেন না। কিনলেও তাদের বিক্রির বাজার বন্ধ। ফলে দেশীয় এবং রফতানিমুখী—সব ধরনের পোশাক কারখানাই বড় ধরনের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি শুরুর অনেক আগে থেকেই দেশে পোশাক খাতে সংকট ঘনীভূত হচ্ছিলো। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। অটোমেশনের কারণেও অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে করোনার প্রকোপে আরও কী পরিমাণ শ্রমিক বেকার হবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও করোনাভাইরাসের চলমান সংকট কেটে গেলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ে উল্লম্ফন হতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

২৩ এপ্রিল এক ভার্চুয়াল আলোচনায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বৈশ্বিক ঝুঁকি চলে গেলে অল্প মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য কেনার চাহিদা বাড়বে। যেহেতু অনেকের আয় কমে যাবে, ফলে নিম্নমূল্যের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হবে। যেগুলোর জন্য আমাদের দেশের চাহিদা তৈরি হবে। ফলে এটি আমাদের দেশের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি যে রেমিট্যান্স, তাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে। ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রু মাইগ্রেশন লেন’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টেও বলা হয়েছে, করোনা মহামারির ধাক্কায় বাংলাদেশে এ বছর প্রবাসীদের পাঠানো আয় ২২ শতাংশ কমে যেতে পারে। তার মানে করোনার প্রভাবে যেসব প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের অনেকেই হয়তো আর সেসব দেশে ফিরতে পারবেন না। কারণ, তাদের জন্য আগের কাজ নাও থাকতে পারে। করোনায় যেহেতু সারা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত, অতএব সব দেশেই প্রবাসী শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে। ফলে যারা এখনও বিদেশে আছেন, তাদেরও অনেককে হয়তো চলে আসতে হবে। অথবা থাকতে পারলেও তাদের প্রত্যেকের আয় কমে যাবে। তার মানে, যে এক কোটি প্রবাসী বাঙালি এতদিন দেশের বাইরে বসে ভালো ইনকাম করে নিজের ও পরিবারের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশই সংকটে পড়বেন। যারা ফিরে এসেছেন তারা দেশেই যে কিছু একটা করতে পারবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই।

তবে দেশের অর্থনীতিতে যত বড় সংকটই হোক, কৃষি-মৎস্য-ডেইরি ও পোল্ট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা হয়তো ভালো থাকবেন। কারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট যতই তীব্র হোক, বেঁচে থাকতে গেলে তাকে খেতে হবে। অতএব, কৃষকরা ভালো থাকবেন। ফসলের ন্যায্যমূল্য কতটা পাবেন, সেটি যেমন একটি বড় তর্ক, তেমনি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে কৃষক অন্তত নিজের ফসল উৎপাদন করে খেয়ে পরে বাঁচতে পারবেন। একইভাবে মৎস্য-পোল্ট্রি ও ডেইরি পণ্যের চাহিদা থাকবে। ফলে এসব খাতের লোকেরাও বেঁচে যাবেন। তাদের জন্য সরকার সহজ শর্তে ঋণ এবং বাজার ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে  আপাতত সংকটে থাকা এসব খাত পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে। শুধু বাণিজ্যিকভাবে মৎস্যচাষিরাই নন, বরং প্রাকৃতিক জলাশয়, খাল, নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরে যাদের জীবন-জীবিকা চলে, তারাও খুব বেশি সংকটে পড়বেন বলে মনে হয় না। কারণ, মাছের চাহিদা চিরকালই থাকবে। আয়ের পরিমাণ কমে গেলেও জেলেদের অন্তত না খেয়ে থাকতে হবে না। তাছাড়া সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তাদের জন্য সহায়তাও রয়েছে।

একটি টেলিভিশনের সংবাদে দেখা গেলো, নেদারল্যান্ডসের মতো শক্ত অর্থনীতির দেশেও ফুল ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ফুল ও ফুলের টব ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতির একটি বড় জোগানদাতা এই ফুলের ব্যবসা। কবে পৃথিবীর পরিস্থিতি ভালো হবে, কবে আবার মানুষ ফুল কিনবে, কবে আবার ফুল রফতানি হবে, তা কে জানে? তার ফলে বাংলাদেশেও যারা ফুলের ব্যবসা করেন; রাজধানীর শাহবাগে ফুলের যে বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে, সেখানকার ব্যবসায়ীদের দুর্দিন যে সহজে কাটবে না, তা সহজেই অনুমেয়। সেইসাথে যশোরসহ দেশের যেসব এলাকার কৃষকরা এই ফুল চাষেই নিজেদের সংসার চালান, তাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। তবে কৃষকের একটা বড় সুবিধা হলো, তারা দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেন। যে কৃষকরা এতদিন ফুল চাষ করেছেন, বাজার না ফিরলে তারা সেই জমিতে সবজি আবাদ করবেন। ফলে ফুলচাষিরা হয়তো শেষমেশ টিকে যাবেন।

পাড়া-মহল্লার সব সেলুন এখন বন্ধ। ফলে যে নরসুন্দররা মূলত দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তারা এখন বেকার হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলুনগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভিড় শুরু হবে। আর সেলুন এমন একটি জায়গা, যেখানে রিকশাচালক থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, সবাইকে যেতে হয়। অতএব, করোনার প্রভাব যতই হোক, নরসুন্দরদের জন্য তা খুব একটা অসুবিধা সৃষ্টি করবে না। এই পেশার মানুষেরা এতদিন যেভাবে চলেছেন, করোনা পরবর্তীকালেও আশা করা যায় তারা সে রকমই থাকতে পারবেন।

মুচি অর্থাৎ যারা জুতা পলিশ ও সেলাই করেন, তারাও যেহেতু দৈনিক কাজের ওপরে নির্ভরশীল, তাদের এখন কাজ না থাকলেও করোনার প্রভাব কেটে গেলে লোকজন দলে দলে তাদের কাছে যাবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে এই মানুষগুলোকেও রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এখনই যেসব অপরিচিত লোকজনকে রাস্তায় সহায়তার জন্য দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কোনও নরসুন্দর বা মুচি আছেন কিনা, বলা যায় না।

রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ানরাও এখন বেকার। সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে এই পেশার মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আবার যেহেতু দেশ একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যাবে, ফলে সরকারি বেসরকারি সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের গতিতে ভাটা পড়বে। ব্যক্তি উদ্যোগের অবকাঠামো, যেমন- বাড়িঘর নির্মাণের মতো কাজও অনেক দিন স্থবির হয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে এসব পেশার মানুষের সংকটও দীর্ঘায়িত হবে।

ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের মধ্যে ধোপা বা লন্ড্রির কাজ যারা করেন, তারাও খুব একটা অসুবিধায় পড়বেন না। কারণ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে মানুষ পোশাক ধৌত এবং ইস্ত্রি করার জন্য তাদের কাছে যাবেন। কামার, কুমার, তাঁতি—এরকম পেশার মানুষের জীবনের চাহিদা যেহেতু কম, ফলে তারাও হয়তো কোনও না কোনোভাবে টিকে যাবেন। তবে দর্জির দোকানে কিছুদিন ভিড় কম থাকবে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মনে স্বস্তি আসবে না। আর মনে শান্তি না থাকলে নতুন জামা কাপড় বানানোর আগ্রহও তৈরি হয় না। তাছাড়া একটা বিরাট অংশের মানুষ যদি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েন, তাহলে তার প্রভাব দর্জির দোকানেও পড়ে।

রাস্তাঘাট ও নদীপথে চলাচল স্বাভাবিক হলে পরিবহন শ্রমিকদের নতুন করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা বেঁচে যাবেন। গৃহকর্মীদেরও কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লকডাউনের কারণে ঢাকা শহরের অগণিত গৃহকর্মী গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু তারা যেসব বাসায় কাজ করতেন, সেসব বাসার গৃহকর্ত্রী জানেন গৃহকর্মী ছাড়া দৈনন্দিন কাজ কতটা কঠিন। ফলে যানবাহন চলাচল শুরু হলেই এই গৃহকর্মীরা ঢাকায় ফিরবেন এবং কাজে যোগ দেবেন। তবে করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এই শ্রেণির মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না। তাদের গ্রামে হয়তো নতুন কোনও কাজের সন্ধান করতে হবে আর সরকারি বেসরকারি সহায়তার আশায় বসে থাকতে হবে।  

ক্ষুদ্র দোকানদার—যারা ফুটপাতে, পাড়া মহল্লায় ব্যবসা করতেন, তারাও এখন বেকার। তারাও এক অর্থে দিনমজুর। কারণ, দোকান না খুললে বিক্রি হবে না। বিক্রি না হলে আয় হবে না। তবে করোনার প্রভাব কেটে গেলে এই পেশার মানুষেরাও আবার ঠিকঠাক নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারবেন। কারণ, এসব দোকানের বিনিয়োগ কম। আবার এসব পণ্যের চাহিদাও সারা বছর। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি চা-সিগারেট-পান বিক্রি করেন, তিনি অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীর চেয়েও বেশি আয় করেন। আমাদের বাসার কাছে এক বয়স্ক লোক চটপটি বিক্রি করেন। একটানা অনেক দিন না দেখার ফলে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাকা কই গেছিলেন? বললেন, ‘গ্রামেই বাইত গেছিলাম। ঘরটা নতুন কইরা বানাইলাম।’ এই চটপটি বিক্রেতা জানান, তিনি প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িটা বানিয়েছিলেন। এখন যিনি এই লেখাটি পড়ছেন, তিনি যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী লোক হন, যার মাসে বেতন তিরিশ হাজার টাকা, যদি সৎপথে থাকেন তাহলে তিনি কি বলতে পারবেন কবে নাগাদ আপনি ২২ লাখ টাকা খরচ করে একটা বাড়ি বানাতে পারবেন? তার মানে আপাতত রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে গেলেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা কেউই খারাপ থাকবেন না।

করোনা-উত্তর পৃথিবীতে হয়তো একটা জিনিসে বড় পরিবর্তন আসবে, তা হলো—যেহেতু অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাবে, অনেকের আয় কমে যাবে, ফলে মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনার প্রবণতা কমবে। ফলে বিলাস পণ্যের চাহিদা কমবে। পোশাকের দোকানে ভিড় কমবে। মানুষের ঘোরাফেরা কমবে। এসব কারণে বিদেশ থেকে পোশাক ও বিলাস পণ্য আমদানি করেন যে ব্যবসায়ীরা, তাদের ব্যবসা হয়তো আগের মতো জমজমাট থাকবে না। পর্যটন ব্যবসাও বড় ধরনের মার খাবে। কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেল ব্যবসার দুর্দিন দীর্ঘায়িত হতে পারে। অনেক পর্যটন ব্যবসায়ী হয়তো ব্যবসার ধরন বদলে ফেলবেন। তবে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলেও শহরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বন্ধ হবে না। বরং এগুলো হয়তো আগের মতোই চলবে। তবে একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ সত্যিই বেকার হয়ে গেল রেস্টুরেন্টে মানুষের খাওয়ার প্রবণতা কমবে। ফলে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যবসা হয়তো আগের মতো জমজমাট থাকবে না।

বড় ধরনের সংকটে পড়বেন বইয়ের প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। বিশেষ করে সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা। এমনিতেই তাদের বিক্রি মূলত বইমেলানির্ভর। কিন্তু বছরের অন্য সময়ে টুকটাক যে বিক্রি হয় তাও এই পরিস্থিতিতে মার খাবে। শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান কয়েক দিন আগে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর ১৫ দিন ছুটি থাকলে তার ছাপার মেশিনটা নষ্ট হবে। বইগাড়ির যন্ত্র নষ্ট হবে। এই গাড়িটার ভাড়া ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন ৭০ টাকাও ইনকাম নেই।’ অন্য প্রকাশকদের অবস্থাও যে শ্রাবণের চেয়ে খুব ভালো, তা ভাবার কারণ নেই।

প্রশ্ন আছে, করোনার পরে দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড বাড়বে না কমবে? অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেলে এবং শহর থেকে অনেক লোক গ্রামে চলে গেলে গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ঋণদাতা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড বাড়তে পারে। বিদেশি এনজিওগুলো যেহেতু দাতা সংস্থার অর্থের ওপর নির্ভরশীল, এবং যেসব দেশ এনজিওকে পয়সা দেয়, তারাও সংকটে আছে। অতএব বিদেশি এনজিওর কর্মকাণ্ড হ্রাস পেতে পারে। বিদেশি তহবিলনির্ভর দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড ছোট হয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম বরাবরই একটি সংকটাপন্ন খাত। এখানের মূল সমস্যা পেশাদারিত্ব। করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে অধিকাংশই তাদের কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দেয় না। যারা বেতন ঠিকমতো দেয়, তাদের অনেকেই অন্যান্য আর্থিক সুবিধা দেয় না। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া পড়ে থাকে। ফলে করোনার পরে অন্যান্য বেসরকারি খাতের মতো গণমাধ্যম খাতও আরও বড় সংকটে পড়বে এবং বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী ছাঁটাই হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, এ মুহূর্তে তারাও বেকার। করোনার পরে তাদের কাজের সুযোগ কতটুকু তৈরি হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। বলা হচ্ছে, করোনার কারণে একটি বিরাট মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিম্নবিত্তে পরিণত হবে। তবে উচ্চবিত্ত এবং একেবারে প্রান্তিক মানুষেরা হয়তো আগের মতোই থাকতে পারবেন।

লেখক: সাংবাদিক

 

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ