X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেগম পাড়ার সাহেবরা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৩আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আবার আলোচনায় বেগম পাড়া। বহুদিন ধরে কানাডার বেগম পাড়ায় টাকা পাচারের গল্প অনেকটা আরব্য রজনীর গল্পের মতো শোনা গেলেও এই পাড়ার সাহেবদের কথাটা অজানাই আছে। তবে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেগমপাড়ার সাহেবদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন দুদককে এ ব্যাপারে সার্বিক তদন্ত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথাটি জানা গেলো যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বেশ পরিষ্কার করেই বলেছেন, কানাডার বেগমপাড়ায় যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের মধ্যে সরকারি আমলার সংখ্যা বেশি।
কানাডা থেকে বন্ধু বান্ধব মারফত যে খবর পাই তাতে দেখা যায়, বেগমপাড়াও এখন অতীত কাল। এর চেয়েও নতুন কিছু নাম সেখানকার বাংলাদেশিদের আড্ডায় ইদানিং উচ্চারিত হচ্ছে। বিশেষ কয়েকটি পেশা বা বিভাগের নামে পল্লি বা পাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নতুন মাত্রা পেয়েছে আলোচনা। এতদিন ধারণা ছিল ব্যবসায়ী এবং একশ্রেণির রাজনীতিবিদ অর্থ পাচার করেন। এখন সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদেরই এগিয়ে রাখছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সমীক্ষা। অর্থ নির্গমনের পথটা চওড়া করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা যারা নানা নীতির বাস্তবায়ন করে থাকেন। ঢাকা বা বড় শহরগুলোর দিকে তাকালেও এর নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম হবে না। জমি, প্লট, ফ্ল্যাটের বেশিরভাগ মালিক সরকারি কর্মীরা। বড় কর্তারাতো আছেনই, এমনকি ড্রাইভার, কেরানী, পিওন, দারোয়ান যে পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক, তা কল্পনাও করা সহজ হয় না।  

সরকারি কর্মীদের ঘুষ আর দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতই না উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তাদের বেতন, ভাতা ও সুবিধাদিকে আকাশ ছোঁয়া করা। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। আসলে পুরো সিস্টেমটাই কব্জা করে নিয়েছে সরকারি আমলাতন্ত্র। অর্থস্রাবী আগ্নেয়গিরির লাভা যেন উপচে পড়ছে সরকারি চাকরিতে। জবাবদিহিতা নেই। উল্টো আছে সুরক্ষা। মামলা করতেও অনুমতি লাগবে। যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমলাদের সুরক্ষা দিতে এমন আইন পাস করেন তারা নিজেরা কিন্তু আটক হয়ে যেতে পারেন যেকোনও সময়।

নিজেদের ঐশ্বর্য বৃদ্ধির জন্য যারা দেশের অর্থনীতির ভিত ভেঙে চুরমার করে, দায়িত্বে বসে যারা চুরি করে, ঘুষ খায় এবং টাকা বাইরে পাচার করে, তাদের জাতীয় শত্রু বলেছে দুদক। কিন্তু এই শত্রুদের প্রতিহত করার উপায় কী? দুদক বলছে, তথ্য পেলে তারা অনুসন্ধান করবে। প্রশ্ন হলো তথ্য দেবে কে?

একটা বিশাল চক্র সৃষ্টি হয়েছে যারা রাজনীতি করে, বাণিজ্য করে বা সরকারি চাকরি করে অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হচ্ছে। তারা এই দেশটাকে আসলে নিজের দেশই মনে করে না, তাদের কাছে প্রিয় তাদের বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম বা এ জাতীয় কিছু। বাংলাদেশ তাদের কাছে টাকা বানানোর মেশিন মাত্র।

একথা সহজেই অনুমেয় যে, টাকা পাচারের র‍্যাকেটটা বেশ বড়। এবং এত বড় একটা গোষ্ঠী এক দিনে গজায়নি। ধীরে ধীরে ডানা ছড়িয়েছে। দুদক বলছে, ব্যবস্থা নেবে। দুদক কোন ব্যবস্থা কতদিন নেবে সেটা দেখার বিষয়। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু নিজে উদ্যোমী হয়েছেন, তার কাছে কিছু প্রত্যাশা আছে। তার মন্ত্রণালয় একটা প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। কানাডা, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে অর্থ যায় তাদের সাবধান করতে পারে। বলতে পারে বাংলাদেশ থেকে এসব টাকা চুরির টাকা, ঘুষের টাকা। আমরা বলতে পারি, আমাদের মানুষের কষ্টের করের টাকা, বিদেশ থেকে পাওয়া প্রকল্প সাহায্যের টাকা পাচার হচ্ছে এভাবে তোমাদের দেশে, তোমরা এসব গ্রহণ করো না।

আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা আমাদেরই বইতে হচ্ছে, দুনীতিবাজদের নয়, তেমনি এই দুর্নীতিবাজদের টাকা যেসব দেশে যাচ্ছে তাদেরও নয়। রফতানির টাকা যদি কারসাজি করে পাচার হয়, যদি কম দামে মাল কিনে বেশি দাম দেখানো হয়, যদি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হয়, যদি আইনের ফাঁক গলে টাকা চলে যায় বিদেশে, সেই টাকায় গন্তব্য স্থানের অধিকার কতটুকু সেটাও তুলতে পারে বাংলাদেশ।

বছর বছর বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার। যে পরিমাণের কথা শোনা যায় সেটা ভয়ঙ্কর। টাকাটা কে নিল, কে কোথায় কীভাবে খরচ হলো সেটা দেখার দায়িত্ব দুদকের। ঢালাওভাবে বলার সুযোগ নেই। সব রফতানিকারক যে এ কাজ করছে এমন তো নয়, তেমনি সব সরকারি কর্মকর্তাও এমনটা করছে না। যাদের কথা শোনা যাচ্ছে তাদের ছিটেফোটাও যদি দেশে থাকে তাদের জেরা করা দরকার।

বাংলাদেশ উন্নতি করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে হাঁটছে। এই উন্নয়নকে টান মেরে নিচে নামানোর জন্যই এই টাকা পাচার। যারা টাকা পাচার করে তারা প্রতারক। তাদের প্রতারণায় যোগ্য সঙ্গত দেওয়ার লোক থাকে। তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু সবার আগে দরকার অর্থ পাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দূর করা। তথ্য না থাকলে ব্যবস্থা কি নেবে দুদক বা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান?

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা। প্রধানমন্ত্রী সচেষ্ট, কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থাকে সজাগ থাকতে হবে। বাকি মন্ত্রীদের সচেতনতা প্রয়োজন। দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের সারণিতে বাংলাদেশ ক্রমেই কেন নিচে নামছে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এই যাত্রার গতি ফেরাতেই হবে। সমাজ এবং রাজনীতির চালকদের একই সঙ্গে তৎপর হতেই হবে।

লেখক: সাংবাদিক 

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ