X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

গয়নার বাক্স ফেরত চাই!

রোকেয়া লিটা
০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:১৫আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:২১

রোকেয়া লিটা আমার গয়নার বাক্সটি রেখেছিলাম আলমারিতে। সেখান থেকে বাক্সটি বের হয়ে পাশের বাড়িতে গেছে। কিভাবে গেলো? গয়নার বাক্সের তো আর হাত-পা নেই যে একা একাই চলে যাবে! নিশ্চয়ই কেউ পাশের বাড়িতে গয়নার বাক্সটি দিয়ে এসেছে। তখনই মনে করার চেষ্টা করলাম, কার কার কাছে আমার আলমারির চাবি আছে। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, এরাই আমার গয়নার বাক্সটি পাশের বাড়িতে দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন তো আর গয়নার বাক্স পাওয়া যাবে না, কারণ এতদিনে গয়নার বাক্স পাশের বাড়ি থেকে পাশের মহল্লায় চলে গেছে। এখন করণীয় কী? সবচেয়ে বেশি অপরাধ আমার বাড়ির দারোয়ানের। কারণ গয়নার বাক্স সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো, সে আমাকে কিছুই জানালো না কেন? দারোয়ানের চাকরিটা আগে খেতে হবে। সঙ্গে দুই একজন মালি আর কাজের বুয়ার চাকরি খেলেও মন্দ নয়।
গল্পটি শুনে আপনাদের কী মনে হচ্ছে? আমার কি আদৌ গয়নার বাক্স উদ্ধার করার কোনও ইচ্ছে আছে? যদি সেরকম কোনও ইচ্ছে থাকতো, তাহলে তো সবার আগে যার যার কাছে আমার আলমারির চাবি আছে তাদেরকে জব্দ করতাম। তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, তারা গয়নার বাক্সটি কার কাছে পাঠিয়েছে। তাদেরকে বাধ্য করতাম, গয়নার বাক্স যাদের কাছে আছে, তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি তেমন কিছু করছি কী না সেটা আপনাদের না জানলেও চলবে। আপনারা শুধু জেনে রাখুন, গয়নার বাক্স উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত নয়।  

আমার গয়নার বাক্সটি আসলে অলীক একটি বস্তু। তবে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি হওয়ার ঘটনাটি আপাত দৃষ্টিতে আমার গয়নার বাক্সের মতই একটি ঘটনা। সে সময় দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, এই চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা শতভাগ জড়িত। অর্থমন্ত্রী তার এই অভিযোগের একটি জোরালো ভিত্তিও উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছয়জন লোকের হাতের ছাপ ও বায়োমেট্রিকস ফেডারেল রিজার্ভে আছে। নিয়ম হলো, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্লেটে হাত রাখার পর লেনদেনের আদেশ কার্যকর হবে’। তাহলে তো আর চোর ধরতে কোনও সমস্যাই থাকে না। কে এই ছয়জন ব্যক্তি, তাদেরকে জব্দ করলেই তো বোঝা যায় চুরি হওয়া অর্থ তারা কার কাছে পাঠিয়েছিল।

খুব সম্প্রতি সিআইডি পুলিশও নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের একটি চক্র রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা যদি সত্যিই দেশের অর্থ বিদেশিদের হাতে তুলে দেন, সেটার কি কোনও বিনিময় মূল্য ছিল না? অবশ্যই ছিল। লাভ ছাড়া বা কোনও বিনিময় মূল্য ছাড়া কেনই বা তারা দেশের টাকা বিদেশিদের হাতে তুলে দেবেন? নিশ্চয়ই এতে তাদের স্বার্থ জড়িত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের এতটা উদার ভাবার তো কোনও কারণ নেই। সেই লভ্যাংশও নিশ্চয়ই বিদেশি চোরেরা এতদিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, চুরি হওয়া অর্থ তো দেশেই আছে। প্রয়োজন শুধু যথাযথ চাপ প্রয়োগ করে তা বের করে আনা। চুরি হওয়া অর্থ কোন দেশের কোন ব্যাংকে গেছে, তারপর কোন মানিচেঞ্জার হয়ে কোন ক্যাসিনোতে গেছে, আমরা কেন এসবের পেছনে সময় নষ্ট করছি। চোর কে তা আপনি ভালো করেই সনাক্ত করতে পারছেন। দেশি চোরদের তো আপনি হাতে-নাতেই ধরে ফেলেছেন। বিদেশি চোরদের ধরার জন্য তো ইন্টারপোলসহ বিদেশি অনেক গোয়েন্দা সংস্থা আছে। অর্থমন্ত্রী যদি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন, এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত, তাহলে আশা করি আমার সঙ্গে আপনারাও শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলবেন চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব। দেশি চোরেরা যেহেতু কোনও বিনিময়মূল্য ছাড়াই এই অর্থ বিদেশি চোরের হাতে তুলে দেয় নাই, সেক্ষেত্রে দেশি চোরদের কাছ থেকে সেই বিনিময় মূল্যটা উঠিয়ে আনতে পারলেই তো চুরি হওয়া পুরো অর্থ ফিরে পাওয়া যায়।

আবার সেই গয়নার বাক্সতেই ফিরে যেতে হয়। আমার কি আদৌ গয়নার বাক্স উদ্ধার করার ইচ্ছে ছিল? আমি তো কেবল আমার বাড়ির দারোয়ান, মালি আর কাজের বুয়াকে চাকরি থেকে বিদায় করে দিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম, গয়নার বাক্স উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। নিশ্চিত হবো কিভাবে বলেন তো? এর আগেও তো আলমারি থেকে আমার কয়েকটি গয়নার বাক্স চুরি হয়েছে। সেই চোরেরা তো পাশের বাড়িতে নয়, আমার নিজের বাড়িতেই থাকে। তাদেরকে আমি ধরতে পারি নাই! ধরতে পারলেও গয়নার বাক্স উদ্ধার করতে পারি নাই। তাহলে কিভাবে এবারের চুরি হওয়া গয়নার বাক্সটি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নিশ্চিত হই বলুন!

পুনশ্চ, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, শেয়ারবাজার কেলেংকারির মতই একাধিক গয়নার বাক্স খোয়া গেছে। এসবের দায় মাথায় নিয়ে যদি অর্থমন্ত্রী তার অবস্থান ধরে রাখতে পারেন, তাহলে আতিউর রহমানকে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়তে হলো? আতিউর রহমানের পদত্যাগ কি পেরেছে রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে দিতে? ভাবলাম, নতুন গভর্নর এসে বোধহয় রাতারাতি সবকিছুর সমাধান করে ফেলবেন? কিন্তু কই, খুব বেশি কি অগ্রগতি হয়েছে? আতিউর রহমান তো নিশ্চয়ই অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে এখন নির্ভার হয়ে আছেন। নতুন গভর্নর কেন আতিউর রহমানের ব্যর্থতার দায় বয়ে বেড়াবেন? আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে দিয়ে তো তাকে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি সেই রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অন্য কোথাও কাজে যোগ দিতে না দেওয়াই হত বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক: সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
ভারত ও যুক্তরাজ্যের ‘ঐতিহাসিক’ বাণিজ্য চুক্তি, কমবে শুল্ক
ভারত ও যুক্তরাজ্যের ‘ঐতিহাসিক’ বাণিজ্য চুক্তি, কমবে শুল্ক
শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বিগত সরকার: হাবিবুর রহমান
শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বিগত সরকার: হাবিবুর রহমান
আকু পরিশোধের পরও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে
আকু পরিশোধের পরও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে
সর্বশেষসর্বাধিক