X
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২

সাকিব বধের রহস্য!

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার
৩০ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪৯আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৪৪

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার বিদেশ ভ্রমণে দেশি খাবার চেখে দেখা আমার অন্যতম শখ। প্রায় অধিকাংশ বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে দেখেছি, ছবির মাধ্যমে দেশের নানা বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের ছবিও সেখানে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের প্রতি প্রবাসী বাঙালি ও বিদেশিদের আগ্রহ এ থেকে বোঝা যায়। বিদেশ ভ্রমণের সময় প্রায়ই বিদেশিদের সঙ্গে আলাপে দেশের অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে ক্রিকেটও স্থান পেয়েছে। আর অবধারিতভাবে ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব, মোস্তাফিজ, মাহমুদউল্লাহর নামই বেশি আলোচিত হয়েছে। যারা বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে কমবেশি খবর রাখেন, তারা প্রায়ই সাকিবের প্রশংশা করেছেন। মনে হয়েছে, ক্রিকেট দলই বাংলাদেশের মূল অহঙ্কার।  যে দলকে অন্যরা বেশ সমীহ করে। আর এই ক্রিকেট দলের মধ্যমণি সাকিব আল হাসান। যিনি মেধা ও যোগ্যতায় বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিদেশ ভ্রমণ অথবা প্রবাস জীবনে নিজেকে অনেকবার রাজা মনে হয়েছে, যখন কোনও ক্রিকেট অনুরাগী কোনও বিদেশি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আনন্দে গর্বে বুক ভরে গেছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তাই যেকোনও ঘটনা কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মতো আমাকেও ছুঁয়ে যায়। ক্রিকেট নিয়ে ভালো খবরে যেমন আনন্দিত হই, তেমনি খারাপ খবরে মন কাঁদে। গতকাল ছিল এমনই একটি দিন। লক্ষ-কোটি ক্রিকেটভক্তের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের সাকিব ঝড়ে আহত হয়েছি। যদিও সাকিবের সততা আমাকে আশাবাদী করেছে। ঘুষ-দুর্নীতিতে ডুবে থাকা একটি জাতির হাজারও  লোকের প্রতীক হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। টাকার কাছে যে তার দেশপ্রেম, সততা, ভালোবাসাকে বিকিয়ে দেয়নি, সেটাই আমাদের আশাবাদী করেছে। তবে আশাহত হয়েছি সাকিবকে নিয়ে অনেক গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশন দেখে। প্রথম যে দৈনিক পত্রিকা এই সংবাদটি পরিবেশন করেছে, তার সংবাদ শিরোনামও ভালো লাগেনি। সংবাদটি পড়ে মনে হচ্ছে, সাকিব বিশাল কোনও অপরাধ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে সাকিব কোনও অপরাধ করেননি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য সংবাদ শিরোনাম পড়ে তা বোঝার কোনও উপায় ছিল না। নেতিবাচক সাংবাদিকতা সংবাদের কাটতি বাড়ায় ঠিকই। কিন্তু ইতিবাচক সংবাদও অনেক সময় নেতিবাচক সংবাদের চেয়ে বেশি পাঠক মনোযোগ পেতে পারে, যদি তা যথাসময়ে যথা শব্দে পরিবেশন করা যায়। সাকিব জুয়াড়িদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন এমন শিরোনামে যদি সংবাদ ছাপা হতো তাহলে গতকালের সংবাদের একটু গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতো বলে মনে হয় না। বরং সেটাই প্রকৃত সংবাদ শিরোনাম হলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাস আরও একধাপ এগিয়ে যেতো।

সাকিব কোনও অন্যায় করেননি। শুধু আইনের একটি ধারা ভুলে যাওয়ার কারণে অথবা অবহেলা করার কারণে আজ সততার পরিচয় দিয়েও তিনি শাস্তি পেয়েছেন। যদিও আমার কাছে গত কয়েকদিনের বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে যে অচলাবস্থা ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয়নি যে, সাকিব ভুল করেছেন। অথবা সে আইন ভুলে গিয়েছিলেন। অথবা জুয়াড়ি আগারওয়ালা তিন বার প্রস্তাব দেওয়ার পরও তার একটি বারের জন্যও আকসু বা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে সেই ঘটনা জানানোর কথা মনে পড়েনি। বরং মনে হয়েছে ২০১৭-১৮ সালের ঘটনা আজকে সামনে নিয়ে আসা এবং সাকিবের শাস্তির পেছনে কোনও রহস্য আছে। ক্রিকেটারদের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিসহ অনেক প্রভাবশালী সাকিবের ওপর ক্ষিপ্ত, তা বলা যায়। ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির প্রকাশ্য গণমাধ্যমে সাকিবকে আর কোনও ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা তার বড় প্রমাণ। এক্ষেত্রে সাকিবের ঘাড় মটকানোর জন্য প্রথমে গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে সাকিবের সদ্য সম্পাদিত চুক্তিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন দেখা গেলো ওই চুক্তি নিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। বড় জোর সাকিবকে একটি শোকজ করা যেতে পারে, তখন জুয়াড়ির সঙ্গে সাকিবের কথোপকথনের ইস্যুটি সামনে আনা হয়েছে বলে মনে হয়।

আইসিসির আইন অনুসারে আকসুকে অথবা নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে জুয়াড়ির প্রস্তাবের বিষয়টি জানালে হবে। যে নিয়ম বলে তামিম পার পেয়ে গেছে। আমার ধারণা তামিমের মতো সাকিবও বোর্ডকে জানিয়েছিলেন মৌখিকভাবে। ফলে এতদিন ওই ঘটনা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি যেহেতু সাকিব নেতৃত্ব দিয়ে ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছে সেহেতু তাকে শায়েস্তা করতে ওই ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। না হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি আইসিসিকে জানাতো যে, তারা তামিমের মতো সাকিবের বিষয়টিও জানে,  তাহলে হয়তো এত বড় সাজার খড়্গ সাকিবের ওপর নেমে আসতো না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা খতিয়ে দেখা উচিত।

বিসিবি সভাপতিসহ অনেকে সাকিবের ওপর সন্তুষ্ট নয়, এটা নতুন কিছু নয়।  ২০১৪ সালের দিকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ চলাকালে সাকিবপত্নীর সাথে দর্শকের গ্যালারিতে অশোভন আচরণকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং স্ত্রীকে রক্ষার ঘটনায় সাধুবাদ না জানিয়ে বিসিবি সাকিবের ওপর আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করেছিল।

ওই বিষয়টি নিয়ে ওই সময়ে একটি জাতীয় দৈনিক লেখা কলামে বিসিবি সভাপতিসহ বিসিবির অন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সাকিবের যে অলিখিত মানসিক দ্বন্দ্ব আছে, তা তুলে ধরেছিলাম। আজ আবারও মনে হচ্ছে, সেই দূরত্ব মোটেও কমেনি। বরং সে দিনের মতো আজও সাকিবের ‘ঘাড় মটকানো’র চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইসিসিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হয়।

সরকারের উচিত হবে, বিসিবির দিকে নজর দেওয়া। জুয়াড়ি লোকমানের বিসিবির পরিচালক হওয়া, সাকিবকে আইসিসির দেওয়া শাস্তির ঘটনা এবং ক্রিকেটারদের সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা। সাকিবসহ ক্রিকেটারদের ফোন নম্বর জুয়াড়ির কাছে সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। বাংলাদেশের চেয়ে এক সময় ভালো ক্রিকেট খেলেও ওই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অব্যবস্থাপনায় কেনিয়া, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট এখন পতনের পথে। বিসিবির ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটও যেন সেই পথে না হাঁটে, সেটি নিশ্চিত করা দরকার।  প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীলরা বিসিবির সভাপতিসহ অন্যদের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করবেন বলে আশা করি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: ৩ আসামি কারাগারে
ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: ৩ আসামি কারাগারে
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
নারায়ণগঞ্জে অটোরিকশাচালককে হাত-পা বেঁধে হত্যা: তিন জনের মৃত্যুদণ্ড
নারায়ণগঞ্জে অটোরিকশাচালককে হাত-পা বেঁধে হত্যা: তিন জনের মৃত্যুদণ্ড
দলের নাম পরিবর্তন করলেন ডেসটিনির রফিকুল আমীন
দলের নাম পরিবর্তন করলেন ডেসটিনির রফিকুল আমীন
সর্বশেষসর্বাধিক