X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাঞ্চন-জায়েদ: শূন্য থেকেই শুরু হোক পুনর্যাত্রা

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪০আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪৪

তুষার আবদুল্লাহ এমন রাত জেগে শেষ কবে, কোন নির্বাচনের ফলের জন্য অপেক্ষা করেছি, মনে পড়ে না। স্মৃতি হয়তো মাঘের কুয়াশার মতো অস্বচ্ছ। তবে ২৮ জানুয়ারি রাত জেগে ছিলাম মাত্র ৪২৮ জন ভোটারের রায় জানতে। বিকালে শেষ হওয়া ভোটের ফল পাওয়া গেলো যখন ভোর হয়-হয়। অবশ্য শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ফেসবুকে ব্রেকিং নিউজ আসতে থাকে– ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ জয়ী হয়েছেন! অভিনন্দনের বৃষ্টিপাতে সিক্ত হতে থাকে ফেসবুক। হেরে গেছেন আলোচিত জায়েদ খান এবং মিশা সওদাগর। জায়েদ খানকে বিয়ে করার তাগাদা দেওয়া শুরু হয়। অবশ্য ফেসবুকেই কেউ কেউ সতর্ক করে দিয়েছেন– ভোট গণনা শেষ হয়নি, অপেক্ষা করুন।

ভোটগ্রহণ চলাকালীনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনুযোগ-অভিযোগ এসেছে। যেগুলো অনলাইন পত্রিকাতেও দেখেছি। ভোট কেনাবেচা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শোনা গেছে। প্রচারণা শুরুর পর থেকেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ঢাকঢোল বাজতে শুরু করে, যার অনেকটাই ছিল ডিজিটাল মিডিয়া নির্ভর। শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোও শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ১২০০ সাংবাদিক আবেদন করেছিল।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহ তৈরি হওয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখেছেন অনেকে।তবে এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক মনে করি না। কারণ কোনও কিছুকে স্বাভাবিকভাবে না দেখে বাঁকাভাবে দেখলেই নেট ও বাস্তব দুনিয়ায় নিজেকে বোদ্ধা হিসেবে জাহির করা যায়। লোকে আবার ওই ধরনের মানুষদেরই বোদ্ধা হিসেবে দেখে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ঢালিউড নিয়ে সাধারণের আগ্রহ তৈরি হওয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই।

ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই এই ভোট নিয়ে শিল্পীদের আগ্রহ এবং অংশগ্রহণকেও। ছোটখাটো অনুযোগ, ক্ষোভ, গীবত এবং কান্নার অভিনয় হজম করে নিয়েও বলতে পারি– অন্য নির্বাচনের চেয়ে এই ভোটে প্রার্থীরা একে অপরের প্রতি অনেকটাই শ্রদ্ধা রেখে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্য ছিল যেকোনও নির্বাচনের প্রার্থীদের চেয়ে পরিশীলিত। তবে নেতিবাচক আচরণও করেছেন অনেকে। ফেসবুকে ভোটের প্রচারণার পুরোটা সময় জুড়েই সেটা দেখলাম। তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের নিয়ে যেমন অশালীন বক্তব্য রেখেছেন, তেমনি প্রশ্ন তুলেছেন ‘কোমায়’ থাকা এফডিসি নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? আশ্চর্য হয়েছি চলচ্চিত্র, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের নেতিবাচক বক্তব্য শুনেও।

আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্রের মন্দা সময় চলছে দীর্ঘদিন ধরে। একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। কিছু কিছু জেলা সিনেমা হল শূন্য হয়ে পড়েছে। নায়ক-নায়িকা, জুটি শব্দগুলোও প্রায় অব্যবহৃত। সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দর্শকের মনোযোগ নেই সেদিকে। অশ্লীল সিনেমা, নকল ছবি, নায়ক-নায়িকার শূন্যতাসহ বিভিন্ন কারণে আজ বাংলাদেশি ছবি এখানে এসে পৌঁছেছে। এজন্য শুধু ঢালিউডের কলাকুশলীরাই দায়ী নয়। পুরো সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপনাও এজন্য দায়ী। এফডিসি নির্ভর চলচ্চিত্র এবং এর মানুষদের চরিত্র নিয়ে আমরা রসালো কত কথাই বলি, কিন্তু আমরা কি একটি গোষ্ঠী বা পেশা দেখাতে পারবো যারা সতী-সাধবী?

এফডিসি থেকে নির্মিত সিনেমাকে কটাক্ষ করার কিছু নেই। সিনেমা হলে বাংলা ছায়াছবি উপচে পড়ে দেখেছে মানুষ। পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে সমাজের সব তলার মানুষ একসঙ্গে হাততালি বা শিস দিয়ে উঠেছিল, সেসব ছবি কিন্তু জহির রায়হান, এহতেশাম, কাজী জহির, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান, আমজাদ হোসেন, শিবলী সাদিক, দিলীপ বিশ্বাস, ছটকু আহমেদ, হাফিজউদ্দিন, কাজী জহির, শহীদুল ইসলাম খোকন, কাজী হায়াৎ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শাহ আলম কিরণ, তোজাম্মেল হক বকুল, সোহানুর রহমান সোহান, জাকির হোসেন রাজু’রাই বানিয়েছেন। নায়ক-নায়িকা আনোয়ার হোসেন, আনোয়ারা , সুমিতা দেবী, আজিম, সুজাতা, রাজ্জাক, কবরী, শাবানা, ববিতা, জসিম, সুচরিতা, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, বুলবুল আহমেদ, আলমগীর, ফারুক, জাফর ইকবাল, অঞ্জু, ইলিয়াস কাঞ্চন, রোজিনা, চম্পা, নূতন, মান্না, নাঈম, শাবনাজ, সালমান শাহ, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, শাকিব খান, শাকিল খান, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস’রাই।

এফডিসির বাইরে যারা ছবি তৈরি করছেন, সেগুলো মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ‘শ্রেণিরক্ষার প্রতীক’ এবং অল্প জানা বা অজানা পুরস্কারের ধরনা দেওয়ার মধ্যে সীমিত রয়ে গেছে। এছাড়া ছবিগুলো বড় নাটক বা টেলিফিল্মের চৌকাঠ কতটা পেরিয়েছে তা নিয়েও বিতর্ক আছে। দুই-একটি ব্যতিক্রম থাকতে পারে। ব্যতিক্রমকে কখনোই ‘গণ’তে আনা যাবে না।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে ২০২২-২০২৪ মেয়াদে দুই প্যানেল থেকে দু’জন নেতৃত্বে এলেন। জায়েদ খান তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। তাকে নিয়ে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন একরাতে ঢালিউডের দৃশ্যপট পাল্টে দেবেন, এমন প্রত্যাশা আমার নেই। ঢালিউডকে নতুনভাবে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুরু করতে হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন। দর্শকরা যে এখনও ঢাকাইয়া ছবির সঙ্গে আছেন, তা তো এই ভোটে প্রমাণ হয়েই গেলো। কাঞ্চন-জায়েদ নেতৃত্বের না হয় শূন্য থেকেই শুরু হোক পুনর্যাত্রা।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ