X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা: ফিরে না আসুক সেই কলঙ্কিত দিন

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
১৭ আগস্ট ২০২২, ১৫:৩৪আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৬:১৬

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) পরিকল্পিত সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেদিন বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছাড়া ৬৩ জেলার প্রায় ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিদের বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি, আধা-সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে চালানো সেই হামলায় ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণে দুই জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। দেশে জঙ্গি কায়দায় ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা করেছিল জেএমবি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নেওয়ার পর হাওয়া ভবন ও সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় সারা দেশে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সরকারি এমপি-মন্ত্রীদের মদতে সারা দেশে শক্ত নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে জঙ্গিরা এবং বাংলাভাইকে দেখা যায় সরাসরি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসে মিটিং করতে। এই সিরিজ বোমা হামলা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করলেও সেসময় চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েক মন্ত্রী বলেছিলেন, জঙ্গিবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। এসব বলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের মদতে ৫৪টি উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন এবং ইসলামি এনজিওর আড়ালে বিদেশি জঙ্গি-মৌলবাদী সংগঠন দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে করা অন্তত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত এবং ৮০০ জনকে আহত করে। এ সময় হুজিও বেশ কয়েকটি নাশকতামূলক হামলা চালায়। জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবি রাজশাহীর বাঘমারা, নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই এলাকায় নিজেদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আত্রাইয়ে মানুষ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জঙ্গিদের নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে। চারদলীয় জোট আমলে দুর্নীতি ও জঙ্গিদের উত্থানের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশকে অনিরাপদ রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে জোট সরকার কয়েকজন জঙ্গি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করলেও আটক জঙ্গি নেতারা আদালতে সরকারের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় ফাঁস করে দেওয়ায় জঙ্গি গ্রেফতার বন্ধ হয়ে যায়। জোট সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও মদত দেওয়ার প্রমাণ সে সময় মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাতেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছিল। ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে বসেই ২১ আগস্টের হামলার মূল পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেনেড হামলার দুই-তিন দিন আগে তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় পরিকল্পনা-সভা করেছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) নেতারা। হাওয়া ভবনে বসেই তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিস চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু, শাহ কায়কোবাদ, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও জঙ্গি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানরাই শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হামলার পরিকল্পনা করে। এই হামলার গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে।

বিএনপি-জামায়াত চাইলেও জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করতে পারবে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ঘাতক চক্র কর্তৃক জাতির পিতাকে সপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনা শুরু করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

১৯৭৫-এর ৩১ ডিসেম্বর ’৭২-এর দালাল আইন বাতিল ঘোষণা করে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ৫-৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিরাতুন্নবী সম্মেলনের নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতকে মাঠে নামানো হয়। সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি করা হয় বিমান বাহিনী প্রধান পদে নিযুক্ত পাকিস্তানপন্থী এমজি তওয়াবকে। যে সমাবেশে স্লোগান উঠেছিল, ‘তওয়াব ভাই তওয়াব ভাই, চাঁদ-তারা মার্কা পতাকা চাই।’ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান। ফলে পশ্চিম পাকস্তানিদের দোসর রাজাকার, আলবদর আলশামসের খুনিরা এই দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যায়। জিয়ার সহায়তায় জামায়াতের ঘাতক-দালালরা আবার বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে। জিয়া সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসে রাজনীতিতে পুনরায় জামায়াতকে শক্তিশালী করে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতাকারী এবং পাকিস্তান-ফেরত সামরিক অফিসার-সিপাহী ও সিভিল আমলা, ভারত বিদ্বেষী উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি, পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন দলছুট নেতা এবং লুটেরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। অবৈধ সেনাশাসক জিয়াউর রহমান যে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল তা আরেক স্বৈরশাসক এরশাদ ও জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াও লালন-পালন করে। বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের সরাসরি তৎপরতা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে মুসলিম মিল্লাত বাহিনী এবং ‘ফ্রিডম পার্টি’র হাত ধরে। ১৯৮৯ সালে এরশাদ আমলে জন্ম নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) নামের আরেক জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন বিএনপি শাসনামলে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই ‘ফ্রিডম পার্টি’কে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিল। বেগম জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে ‘ফ্রিডম পার্টি’কে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

বিএনপি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গ ছাড়েনি। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকে বিএনপি-জামায়াত দেশে ও বিদেশে নানা অপতৎপরতা শুরু করেছিল। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে এবং খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে প্রকাশ্য জনসভায় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী ও সাকা চৌধুরীদের মুক্তির দাবি তুলেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় আইনজীবীরা সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছে। ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু বিচার স্বচ্ছ ও মানসম্মতই হয়েছে। জামায়াত বিপুল অর্থ ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্দোলনকারীদের খালেদা জিয়া ‘নাস্তিক’ বলেছিলেন। গুলশানে হলি আর্টিজানে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর খালেদা জিয়া প্রথমে বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ বলেছিলেন, যদিও পরে আবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় ঐক্যের হাস্যকর আহ্বান জানান। বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাই এই দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে এবং যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধর ও তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসীরাই এই দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তবে সিরিজ বোমা হামলার এখনও ৫৫টি মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়নি, যেখানে আসামি ৩৮৬ জন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েক জঙ্গির ফাঁসি এখনও কার্যকর হয়নি। সবার প্রত্যাশা এসব মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে কার্যকর করা হবে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নানাবিধ সময়োপযোগী জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে জঙ্গিরা শক্তিহীন হয়ে গেছে এবং তাদের সেই নেটওয়ার্ক বা সক্ষমতা আর নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। এরপর দেশে ব্যাপকভাবে জঙ্গি দমন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের পর থেকে সারা দেশে প্রায় ২৫০০ জঙ্গিকে আটক করা হয় এবং অনেক অস্ত্রসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংশ্লিষ্ট নথি উদ্ধার করা হয়। গত কয়েক বছরে জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ (এবিটি) বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিএমপিতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট নামে নতুন একটি জঙ্গিবিরোধী ইউনিট গঠন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে র‌্যাব ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম শক্তিশালী করায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ধর্মীয় নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, আনসার ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ধর্মকে ব্যবহার করে উগ্রবাদের দিকে যুবকদের উৎসাহী করার প্রবণতা কমাতে সরকার কাজ করছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত হুমকি বিবেচনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ দেশ অবস্থানে রয়েছে। ২০২২ সালে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সে’ সব দেশ মিলে ৪০তম অবস্থানে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের অবস্থান ২১। যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ৩১তম অবস্থানে। ঝুঁকি বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদে রয়েছে ভুটান। ভুটানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় ফলে, অনলাইনে কার্যক্রম চালানো সহজ। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে গুরুত্ব দিয়ে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নজরদারিও বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতভাবেই সাইবার জগৎ মনিটরিং করছে। পাশাপাশি, জঙ্গিদের মদত দেওয়া বা অর্থ জোগানদাতা বা আড়ালের হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এখানে উগ্রবাদকে সামাজিকভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না এবং মানুষও অপছন্দ করে। এখনকার তরুণরা অনেক মেধাবী, সহজেই তাদের ভুল পথে পরিচালনার সুযোগ কম। জঙ্গি ও উগ্রবাদীরা ইয়াং ফোর্সকে টার্গেট করে। তাই যুব সমাজকে যাতে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরও মনোযোগী হতে হবে। জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারাভিযান চলছে এবং আরও চালাতে হবে। সারা দেশে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও প্রসারিত করলে উগ্রবাদের পথে কেউ যাবে না।

জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রয়োজন সামাজিক জনসচেতনতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সকলের সম্মিলিত অবস্থান। প্রয়োজন দেশপ্রেম ও রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের বিভেদ না ঘটানো– এসব বিষয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার থাকার সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদ নির্মূলকে জাতীয় স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় সতর্ক যাতে জঙ্গি বা উগ্রবাদ মাথাচাড়া না দিতে পারে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রতা বাংলাদেশের জন্য নয়-এসব ভ্রান্ত মতবাদ ব্যর্থ হবেই। সিরিজ বোমা হামলার সে ভয়াল দিন আর কোনোদিন আসুক তা কেউ চায় না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে প্রগতির পথে ধাবিত হোক বাংলাদেশ– সে প্রত্যাশা করি।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ