X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র রাজনীতি দরকার তবে জোর করে নয়

লীনা পারভীন
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:১১আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:১১

সম্প্রতি ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সেই আলোচনার সূত্রপাত। এবং এর প্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে তার প্রতিটিই ছাত্র রাজনীতিকে তাদের ক্যাম্পাসে স্বীকৃতির বিপক্ষে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমেই সুনাম অর্জন করে। কেবল দেশেই নয়, তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের আধুনিকতা ও ম্যানেজমেন্ট তাদেরকে আন্তর্জাতিক মহলেও এগিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মান যাচাইয়ে সবাই সমান না হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতুলতা দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়।

শুরু থেকেই তারা ফোকাসড ছিল অ্যাকাডেমিক সাইড ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভিত্তিক মানোয়ন্নের দিকে। সেখানে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বাইরেও রয়েছে নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রম। আছে ক্যারিয়ার ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব। অর্থাৎ মেধার চর্চা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য মোটামুটি অনেক ধরনের আয়োজন আছে যেগুলো আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই বললেই চলে। আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজে একজন শিক্ষার্থী কেবল মিছিল মিটিং করলেই সচেতন বা দেশপ্রেমিক হবে এমনটা ভাবার দিন মনে হয় শেষ। তারমানে কি আমাদের সন্তানরা রাজনৈতিক সচেতন হবে না? অবশ্যই হবে এবং এর বিকল্প কিছু নেই। তবে আমাদেরকেও ভাবতে হবে যে রাজনীতি শব্দটার প্রতি এমন বিতৃষ্ণা কেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কেন তাদের মানসপটে ছাত্র রাজনীতি মানেই ভয়ঙ্কর কিছুর চিত্র ফুটে ওঠে?

আমরা দেখলাম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটির কথা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই নানা মহল থেকে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। আমার দুই সন্তানও এবার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মাঝেও দেখলাম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। অভিভাবকরা উদ্বিগ্নতার কথা বলছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন রাজনীতি অবশ্যই দরকার এবং একজন শিক্ষার্থীকে রাজনৈতিক সচেতন হতেই হবে কিন্তু কে কী করবে এটা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বিষয়। মন্ত্রীর জায়গা থেকে এটাই বলবেন তিনি। যদিও আমরা এটাও জানি যে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একটি কমিটি আছে। একটি অনলাইন গণমাধ্যমে দেখলাম, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজ বলছেন– ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে, আমরা তাদের সাথে আলোচনা করবো। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে। নতুবা আমরা আইনি পন্থায় যা যা করা লাগে সবই করব। প্রয়োজনে আন্দোলন করতেও প্রস্তুত আছি আমরা।’

এই যে আইনি লড়াইয়ের কথা যে তিনি বলছেন- এটি অত্যন্ত আপত্তিকর বক্তব্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কোথাও লেখা নেই যে ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারবে না কিন্তু এটিও লিখিত আছে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত এলাকা। এই ঘোষণা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে থাকে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার পক্ষে। তারা অবশ্যই দেশ, সমাজ, বিশ্ব, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে সচেতন থাকবে, আলোচনা করবে, প্রয়োজনে লড়াইও করবে। কিন্তু সেটা কি জোর করে হবে? আপনি কি চাইলেই একটা সংগঠন করার জন্য আইন করতে পারবেন? পারবেন না।

মনে রাখতে হবে যে বেসরকারি বিশবিদ্যালয় চলেই অভিভাবকদের টাকায়। তাই অভিভাবকদের মতামত এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই রাজনীতিকে সামনে আনতে হলে আবারও বলছি– অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে।

এটাও ভাবতে হবে যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কি একেবারেই রাজনৈতিকভাবে অসচেতন? একদমই না। বরং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে আমাদের সন্তানরা আমাদের চাইতেও অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা দেশ, সরকার সবকিছু নিয়েই প্রভাবিত হচ্ছে এবং মতামতও রাখছে। তবে তারা কোনও প্রকার ব্যানারের নিচে থাকতে নারাজ।

হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে মৌলবাদী রাজনীতির চর্চার অভিযোগ আছে। অন্তত হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আমরা তেমনটাই প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু এই জঙ্গিবাদকে ঠেকাতে হলে আমাদেরকে শিক্ষার কারিক্যুলাম ও শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতাকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। জঙ্গিবাদ আজকে কেবল আমাদের সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। একে মোকাবিলা কেবল রাজনৈতিক সংগঠন করেই করা যাবে না।

যদি ছাত্র রাজনীতি থাকলেই মৌলবাদ চর্চা বন্ধ হয়ে যেত তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদী সংগঠনের কার্যক্রম চলে কীভাবে? প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে কেমন করে? এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল না। তারমানে খেলাট চলছে অন্যভাবে।

আমাদের বরং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে সবার আগে। ছাত্রদের অধিকার ভিত্তিক কার্যক্রমের আলোকেই চলতে হবে সংগঠনগুলোকে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সংঘর্ষের জন্য ছাত্র রাজনীতিকে বিদায় জানাতে হবে। সংসদগুলোকে কার্যকর করার চেষ্টা না করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠন চাপিয়ে দিলে সেটা হিতে বিপরীত হবে। ছাত্র রাজনীতির প্রতি যে অনাস্থা তৈরি করা হয়েছে গোটা সমাজে সেটিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই কৌশল নির্ধারণ জরুরি। ছাত্র রাজনীতির প্যাটার্ন পাল্টানোর কথা ভাবতে হবে। গতানুগতিক ধারার রাজনীতি এখন আর শিক্ষার্থীরা চায় না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু করার আগে দরকার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিক্যুলাম আধুনিক কিনা সেদিকে নজর দেওয়া। ভেতরে ভেতরে মৌলবাদের চাষাবাদ হয় কিনা সেদিকে নজরদারি বাড়ানো। আগে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে রাজনীতির প্রতি নেতিবাচক চিন্তাকে দূর করতে হবে তারপর সবাইকে নিয়েই ঠিক করতে হবে দেশের সুনাগরিক গড়ার উপায় কী হতে পারে। 

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ