X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:০৬আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:০৬

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। ২০১৯ সালের পর এই সেপ্টেম্বরে ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা কর্মসূচি ও আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ডিসেম্বরে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভারত-বাংলাদশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। উভয় প্রধামন্ত্রী সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া ও পারষ্পরিক বৃহত্তর সহযোগিতার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয় এবং দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতি’র রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

সমঝোতা স্মারকগুলো হলো– অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্যান্য আইটি অ্যাপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানিচুক্তিতে কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি পাওয়ার ফলে অন্য সুবিধার পাশাপাশি ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা যাবে। বাংলাদেশ সিলেটে কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর খাল পয়েন্টে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে। কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় শুকনো মৌসুমে চাষাবাদে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। একইসঙ্গে উপকৃত হবেন কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার কিছু অংশের কৃষক। পাশাপাশি খুলনার রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মৈত্রী পাওয়ার প্লান্টের ইউনিট-১ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। এই পাওয়ার প্ল্যান্ট খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বেশি সুবিধা দেবে। কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে ভারতীয় উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে।  বিএনপি এমন কোনও কাজ ক্ষমতায় থাকতে করতে পারেনি। ৫ বছরে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।

৩৩ দফার যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার বিস্তারিত বিষয়াবলী উল্লেখ করা হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), মহাকাশ প্রযুক্তি, শক্তি এবং সমুদ্র অর্থনীতির মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্বার্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কথা মাথায় রেখে শীর্ষ নেতারা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারির চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এটি অবশ্যই ইতিবাচক বিষয়।

পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিত্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধিতে অনেকটাই সম্মত হয়েছে ভারত; এতে আমাদের দেশের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে কারণ ভারত থেকে পণ্য আনা যত সহজ অন্য দেশ থেকে পণ্য আনা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হয়ে যায় মাঝে মাঝে।

তৃতীয় কোনও দেশে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের বন্দর বা স্থাপনা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে অর্থাৎ বিনা মাশুলে এই ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাংলাদেশের জন্য প্রাপ্তি। এজন্য নির্দিষ্ট বন্দর বা স্থল কাস্টমস ব্যবহার করতে হবে। নেপাল, ভুটান বা অন্য দেশে পণ্য ট্রানজিটে ভারত সম্মতি দিয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষের কাজ করার অঙ্গীকার রয়েছে। আগের সময়ের তুলনায় বর্তমান আওয়ামী লীগ আমলে সীমান্তে হত্যা কমে এসেছে। এটা নিয়ে বিএনপি সরকার তেমন কোনও কাজ করেনি। কারণ ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত সীমান্তে হত্যা হয়েছে ৭৫০ জন। এর মাঝে ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের ২ বছর আমলে মোট ১৮২ জন হত্যা হয়। ২০০৯ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত হত্যা ৪৫৫ জন। উল্লেখ্য, ২০০০-২০১৪ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ৬ হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। (তথ্যসূত্র: এফপি ও আইওএম) আবার পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ২০১৪-১৯ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় ও ড্রোন হামলায় ৪ হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। (তথ্যসূত্র: নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশন)

তবে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে আরও জোরদার কার্যক্রম প্রয়োজন যেখানে ভারতকে আরও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ দ্রুত তিস্তা সই করতে ভারতকে তাগিদ দিয়েছে। ভারত তাগিদ দিয়েছে ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের জন্য। তিস্তা চুক্তি হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তা চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টনের মতো সব সমস্যার শিগগিরই সমাধান হবে।

বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ‘কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়েও আশাবাদী। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক থেকে সেপা সই করার জন্য আলোচনা শুরু করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেপা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

অশোক লেল্যান্ডের মতো বড় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রিক গাড়ি বা হাইব্রিড অটোমোবাইলে বিনিয়োগ করতে চায়। যা বাংলাদেশের জন্য সুখবর।

উভয়পক্ষ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে। জ্বালানি তেল সরবরাহকারী হিসেবে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। আগামীতে ভারত থেকে সরাসরি বাংলাদেশে উচ্চগতির ডিজেল পরিবহণ হবে–এটা ইতিবাচক।

এদিকে ভারত বাংলাদেশকে ট্রেনের ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। বাংলাদেশ একে স্বাগত জানিয়েছে। দুই দেশ মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, সবুজ শক্তি, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং প্রযুক্তি সক্ষম করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বিষয় কার্যকর হলে উভয় দেশই লাভবান হবে।

ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ভারত এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। যা আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

বিএনপি নেতৃবৃন্দ হয়তো এবারের সফরে বাংলাদেশ ভারত যৌথ বিবৃতি ঠিকমত পর্যালোচনা করেনি। তাই হয়ত বলছে এই সফর তেমন ফলপ্রসূ নয়। কোনও রাষ্ট্রীয় সফরের বিভিন্ন বিবৃতি, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের ফল সেদিনই পাওয়া যায় না। বরং ফল বা প্রাপ্তি পাওয়া যায় নিকট ও দূরবর্তী ভবিষ্যতে। ভবিষ্যতে যৌথ বিবৃতির বিষয়গুলো কার্যকর হলে দৃশ্যমান হবে সুফলগুলো।

যেমন, বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত হাটগুলো আবার চালু হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার হবে তেমনি আন্তঃসীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত সমাপ্ত হলে এর উপকারিতাও দৃশ্যমান হবে সবার সামনে।

যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিস্তার রুখতে জোরালো অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে দু’দেশ। এটা উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক। কারণ বিএনপি আমলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (যেমন উলফা বা পরেশ বড়ুয়া) আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার মতো নেতিবাচক উদাহরণ বাংলাদেশকে বিব্রত করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনও জঙ্গিবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি বরং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা এবং মীরেরসরাইয়ে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ১২টি নতুন পণ্য ভারতের বাজারে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের পাট, সিরামিকসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখান ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এটি ফলপ্রসূ হলে বাংলাদেশ সুফল পাবেই।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০১১ সাল থেকে ভারত শুল্ক সুবিধা দিয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি প্রথম বারের মতো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্য বাণিজ্য বেড়েছে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে ভারতে। ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্য কার্যক্রম বাড়াতেও এই সফরে আলোচনা হয়।

কোনও অর্থনৈতিক অঞ্চল বা আইটি পার্ক বিএনপি করেনি।

এ সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সৈন্যদের সন্তানদের শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদানকৃত বৃত্তি ভারতে খুবই প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ফলাফল ইতিবাচক। দুই দেশের শীর্ষ নেতার ঘন ঘন সফর বিনিময়ের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে। তারা সম্পর্কের সব বিষয় পর্যালোচনা করেছেন। এখন নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন। মোদি ও শেখ হাসিনা সম্পর্কের একটা ভিশন তৈরি করেছেন। এটা তারা করেছেন পরস্পরের স্বার্থে। (দৈনিক যুগান্তর ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২)

আমরা সবাই জানি, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। পরে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই গঙ্গা পানিচুক্তি সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমুদ্রসীমার সমাধান করেছেন। এমনকি স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়ে দুই দেশের ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। তারা নাগরিকত্ব ও পরিচয় পেয়েছে।

ছিটমহল বিষয়ে বিএনপির কোনও সরকার কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এটা বিএনপির বড় ধরনের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।

বিএনপির বিগত সরকারগুলোর অনেক কূটনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে। সেই তালিকা দীর্ঘ।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে গঙ্গা পানিচুক্তি করতে পারেনি। খালেদা জিয়া নবম সংসদে বিরোধী দলে থাকতে ভারত যান বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে, দেশ নিয়ে তাদের কোনও ভাবনা ছিল না, ক্ষমতার জন্য গিয়েছিলেন।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বাংলাদেশে আসলে বেগম জিয়া মোদিকে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি শোনাতে চাইলে খালেদা জিয়াকে ১০ ট্রাক অস্ত্র, প্রণব মুখার্জীকে সাক্ষাৎ না দেওয়া ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিএনপির সহযোগিতার বিষয়ে প্রশ্ল করলে কোনও জবাব মোদিকে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিএনপি নেত্রী।

বিএনপি ভারত সফর নিয়ে সবসময় মনগড়া কথা বলে কিন্তু এসব মানুষ এখন আর গুরুত্ব দেয় না। নিজেদের ব্যর্থতার পাল্লা ভারি তাই হয়তো সেসব ঢাকতেই নানান বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে। রাষ্ট্রীয় সফরের নানাদিক থাকে-এসব জেনেও বিএনপির বক্তব্য সত্যিই হতাশাজনক। সার্বিক বিবেচনায় বিএনপির একতরফা নেতিবাচক সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ ভারত, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে এ সফর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে উভয় নেতাই একমত ছিলেন এবং ইতিবাচক সুরেই কথা বলেছেন। পারস্পরিক সম্পর্ক, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বিষয়ে দুই দেশ খুবই সচেতন যা প্রণিধানযোগ্য।  

 

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী।

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ