X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল প্রযুক্তি যখন ‘পকেটমার’দের হাতিয়ার

লীনা পারভীন
০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩২আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩২

দুনিয়া এগিয়ে চলছে, বাংলাদেশও এগুচ্ছে। স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশও অনেক এগিয়ে। ই-কমার্স বা এফ-কমার্স এখন আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় এক পরিচিত নাম। আমি চাকরি করতে চাই না, চাকরি দিতে চাই– এমন সুন্দর সুন্দর ট্যাগলাইনে গড়ে উঠছে হাজার হাজার উদ্যোক্তা। এসব অত্যন্ত আশার কথা বটেই। কারণ আমরা যারা সাধারণ চাকরি করেই জীবন পার করে দিলাম, তাদের জন্য চাইলেও আর উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব না। কারণ আমাদের মগজে ও মননে সেই সাহসটি জন্মাবে না আর। আর তাইতো আমরা নির্ভর করি তারুণ্যের উদ্ভাবনী চিন্তার ওপর।

ইন্টারনেটের যুগে ইন্টারনেট নির্ভর বাজার গড়ে উঠবে এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এই ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এ কথাও অনস্বীকার্য। আগে প্রয়োজনের সময়ে কোনও পণ্যের কেনাকাটা করতে হলেও পারা যেত না, কারণ এর জন্য যেতে হতো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু এখন? মন চাইলেই ইচ্ছামত যেকোনও পণ্য এমনকি খাবারও পাওয়া যাচ্ছে একটা ক্লিকেই। দারুণ এক আবিষ্কার।

আমরা সাধারণ মানুষ। কেবল চটকদার বিজ্ঞাপন দেখেই মজে যাই। কিন্তু এর আড়ালে কে বা কারা আমাদের পকেট কেটে নিচ্ছে সে খেয়াল রাখার মতো সময় বা যোগ্যতা কোথায়? এই কাজটি করার কথা ছিল আমাদের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা অনুমতি প্রদানের জন্য যারা নিয়োজিত সেইসব সংস্থার।

কিন্তু হায়! কোথায় গলদ সেটাই বুঝতে পারছি না আমরা এখনও। অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কয়দিন পরপরই বিভিন্ন রিপোর্ট আসছে সংবাদ মাধ্যমে। এইতো কয়মাস আগেই ই-কমার্স সেক্টরের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিটা করে দেখালো ইভ্যালি নামক একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ফলাফল কী দাঁড়ালো? ফলাফল হলো ইভ্যালির মালিকের কয়মাস জেল খাটা পর্যন্তই। সাধারণ মানুষের হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো সে আলাপ এখন মৃত।

ইভ্যালি আবারও নতুন করে শুরু করছে তাদের ব্যবসা। এই যে নতুন করে শুরু করছে, তারমানে কি এই যে তাদের পুরনো হিসাবের খাতাটা বন্ধ হয়ে গেলো? মানুষ যে নিঃস্ব হলো এর দায় কি কারও ঘাড়েই বর্তাবে না? মানুষ কি আর ফিরে পাবে তাদের পকেটের টাকা? জানি এর উত্তর কেউ দেবে না। চারদিকে নিশ্চুপ পরিবেশে কাঁদবে কেবল বোকা ক্রেতারা।

আবারও ই-কমার্স আলোচনায়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তাদের ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে গত এক বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ ১২ টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। হ্যাঁ, আমি ‘হাতিয়ে নেওয়া’ই বলবো কারণ তারা এর ৩৪ শতাংশ টাকা খরচ করেছে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসিতার কাজে। মার্কেটের উন্নয়নের কাজে কত ব্যয় হয়েছে তার কোনও হিসাব নেই। সংস্থাটি জানিয়েছে এই নিরীক্ষা করতে গিয়ে তারা এমন প্রতিষ্ঠানও পেয়েছে যাদের কোনও করপোরেট কাঠামোই নেই। অর্থাৎ, সেগুলোকে আমরা ভুঁইফোড় সংগঠন হিসাবে বলতেই পারি। নাম পরিচয়হীন সেসব প্রতিষ্ঠান কিন্তু কেবল একটি সাইট ডিজাইন করেই আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। এসব পকেটমারদের বিরুদ্ধে কি কখনও কোনও ব্যব্স্থা নেবে কেউ? অনেক প্রতিষ্ঠান আবার টাকা পয়সা নিয়ে কেটেও পড়েছে কারণ তাদের কার্যক্রম বন্ধ পাওয়া গেছে।

দেশে এইমুহূর্তে কত হাজার ই-কমার্স সাইট খোলা আছে তার কোনও পরিসংখ্যান নথিবদ্ধ আছে বলে মনে হয় না। এই যে ফাইন্যানসিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাদের প্রেরিত তথ্যের সোর্স কেবলমাত্র যেসব স্বীকৃত চ্যানেলে আর্থিক লেনদেন হয়েছে সেটি। অনেক লেনদেন অজানা পথেও হয়েছে। সেগুলোর হিসাব হয়তো আর কোনোদিন আমাদের সামনে আসবে না। সংস্থাটি আরও বলেছে দেশে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে প্রচুর। অর্থাৎ একদিকে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটছে আবার আরেকদিকে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী নিজেদেরকে প্রস্তুত করে ফেলেছে সেই উন্নয়নের সিংহভাগ অবৈধ রাস্তায় হাতিয়ে নিতে।

এইতো কিছুদিন আগেই সংবাদে দেখলাম অনলাইন গেমিং এর নামেও একটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। যে অনলাইন গেমটির নাম সামনে এসেছে সেটি কিন্তু অনেক বছর ধরেই অনলাইনে জনপ্রিয়। তাহলে আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চোখে কেন এতদিন পরে আসলো? এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর পাওয়া যাবে না জানি।

তারমানে বুঝাই যাচ্ছে যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভাগ কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের পকেটে যেতে দেবে না এসব পকেটমারের চক্র। কোনও না কোনোভাবে আমার আপনার পকেটের টাকা তারা ঠিক কায়দা করে বের করে নিয়েই যাবে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল কি? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ বেড়ে যাবে এটাতো জানা বিষয়। তাহলে সেইসব দুর্বলতাকে কেন এত বছরেও আমরা সারাতে পারলাম না? জীবন সহজ করার জন্য যে প্রযুক্তি আমরা গ্রহণ করলাম এখন সেই প্রযুক্তিই যদি হয়ে যায় আমার ঘরের সিঁদ কাটার রাস্তা তাহলে এমন ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আমরা কোথায় যাবো?

গর্ব করবো না হুতাশ করবো? পকেটমারদের বিরুদ্ধে কেউ কি দাঁড়াবে? দেশে যে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে এর জন্য কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? যা গেছে তা চলেই গেছে কিন্তু সামনের দিনের যাওয়াটাকে কি আপনারা আটকাবেন, প্লিজ? দোহাই আপনাদের। আমাদের জন্য অন্তত স্বাভাবিক মৃত্যুর রাস্তাটা বাঁচিয়ে দিন।

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ