X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কিছু মৌলিক তথ্য

মোহাম্মদ এ. আরাফাত
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:১৪আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৪৫

বর্তমান (আন্তর্জাতিক) বাজারমূল্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জ্বালানি ভেদে উৎপাদন খরচ–

(১) ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা;

(২) ফার্নেস অয়েল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ১৮ থেকে ২০ টাকা;

(৩) আমদানিকৃত গ্যাস (Imported LNG) দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ২০ টাকা; 

এবং

(৪) আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ১২ থেকে ১৪ টাকা (পায়রা, রামপাল ইত্যাদি)।

অন্যদিকে,

(৫) ভারতীয় আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ পাবো প্রতি ইউনিট ১৫/১৬ টাকায়।

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আর তা হলো– প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই একটি বয়স থাকে, একটি সময় পর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়। আদানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বয়স ধরা হয়েছে ২৫ বছর। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই পুরো ২৫ বছর, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানা মূলত বাংলাদেশ সরকারের। বাংলাদেশের সরকার, এ দেশের মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী আদানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে অথবা বসিয়ে রাখবে। কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্রই সারা বছর, সবসময় চলে না। কখনও কখনও বসিয়ে রাখা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন চলে তখন ‘ফিক্সড কস্ট’ এবং জ্বালানির পেছনে খরচ হয়, যখন চালানো হয় না তখন জ্বালানির পেছনে খরচ হয় না, কিন্তু ফিক্সড কস্টের খরচ তখনও হয়। এই ফিক্সড কস্টের খরচটিই হলো ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’। বাংলাদেশে বা বিশ্বের যত দেশে যত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেই, কেন্দ্রগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ফিক্সড কস্টের খরচ তথা ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বহন করতে হয় নিজ নিজ দেশের সরকারকেই। এটাই স্বাভাবিক অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো, ফিক্সড কস্টের খরচ তথা ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ নিয়ে অদ্ভুত ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ ছাপায়।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎও বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও দেওয়া যাবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্যই ডেডিকেটেড থাকবে পুরো ২৫ বছর। ভারতে অবস্থিত হলেও, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই এটিও বাংলাদেশেরই আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে, অন্তত আগামী ২৫ বছরের জন্য।

আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের থেকে আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের খরচ ২ টাকা (প্রতি ইউনিট) বেশি, এর কারণ সেখানে একটি ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন এবং কয়লা আনা-নেওয়ার জন্য একটি dedicated rail track বানাতে হয়েছে। এছাড়াও আদানি পাওয়ারপ্লান্ট কয়লা আমদানি করবে অস্ট্রেলিয়ার নিউ-ক্যাসেল-এ তাদের একটি নিজস্ব কয়লা খনি থেকে। অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানির খরচ ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির খরচের তুলনায় একটু বেশি। বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাধারণত ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে।

এখানে যে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে, তা হলো, আমরা ইতোমধ্যে ৪৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (নিজস্ব এবং আমদানিকৃত) কয়লা থেকে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ক্যাপাসিটি তৈরি করেছি। আরও ৩৫০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রক্রিয়াধীন। এর চেয়ে বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করা বিভিন্ন কারণে আপাতত সম্ভব নয়।

অর্থাৎ যেহেতু ভারতে আদানির যে ১৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে করা সম্ভব ছিল না, কাজেই, বাংলাদেশের ভেতরে এই ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লার পরিবর্তে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল বা আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে উৎপাদন করতে হতো। সেক্ষেত্রে, এই ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়তো।

আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদিত হবে। এই বিদ্যুৎ আমাদেরই প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের মানুষই কয়লা থেকে উৎপাদিত এই ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার ও ভোগ করবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় যেহেতু ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং আমদানিকৃত গ্যাস (Imported LNG)-এর দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, কাজেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোই এখন আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাহিদা মিটাবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভেতরে যদি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো হতো তাহলে এই ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে–

(১) বিশাল আকারের জমির ব্যবস্থা করতে হতো,

(২) কয়লা পুড়ে বাংলাদেশের আকাশে ছড়িয়ে পড়তো,

এছাড়াও,

(৩) সরকারকে পুরো টাকা এককালীন বিনিয়োগ করতে হতো।

অথচ, আমরা

(১) ভারতের মাটি ব্যবহার করে,

(২) ভারতে কয়লা পুড়িয়ে,

(৩) ভারতীয় কোম্পানিকে দিয়ে এককালীন পুরো টাকা বিনিয়োগ করিয়ে,

এবং,

৪) বাংলাদেশের ভেতরে এই ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ডিজেল, ফার্নেস অয়েল বা আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে উৎপাদন করতে যে খরচ হতো, তার থেকে অনেক কম মূল্যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিয়ে আসবো এবং এ দেশের মানুষ সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে।

কিন্তু এরপরও কিছু মানুষের গাত্রদাহ থেমে নেই।

লেখক: চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কায়রো সফরে যাচ্ছে হামাসের প্রতিনিধিদল
কায়রো সফরে যাচ্ছে হামাসের প্রতিনিধিদল
ইংল্যান্ডের হাতে ইউরো ট্রফি দেখার অপেক্ষায় গার্দিওলা
ইংল্যান্ডের হাতে ইউরো ট্রফি দেখার অপেক্ষায় গার্দিওলা
নোয়াখালীতে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
নোয়াখালীতে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
একই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মা-ছেলে ও নাতি
একই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মা-ছেলে ও নাতি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ