X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

লোক দেখানো একদফা আন্দোলন

প্রভাষ আমিন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৫২আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৫২

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করছে বিএনপি। কোনোভাবেই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় বিএনপি।

বিএনপির একদফার জবাবে আওয়ামী লীগও একদফা ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের একদফা হলো– সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন। দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় আলাপ-আলোচনায় সমস্যা সমাধানের কোনও সম্ভাবনাই তৈরি হচ্ছে না। ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ এক অনিশ্চয়তার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই অনিশ্চয়তার শেষ কোথায় সেটা কেউই জানে না। তবে সময় কিন্তু বেশি নেই। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফশিল হয়ে যাবে। জানুয়ারিতে নির্বাচন।  

গত ১২ জুলাই একদফা ঘোষণার পর বেশ কিছু কর্মসূচিতে দারুণ সাড়া ফেলেছিল বিএনপি। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক লোক সমাগমে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল দারুণ চাঙা হয়েছিল। কিন্তু আগস্টে গিয়ে আন্দোলনে ভাটা পড়ে। সেই ভাটার টান এখনও আছে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে এসে নতুন কর্মসূচি দিয়ে আবারও মাঠে নামার চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচিতে নতুনত্ব নেই বললেই চলে। রোডমার্চ, সমাবেশ, পেশাজীবী কনভেমনশন, নারী ও কৃষক সমাবেশের মতো পুরনো স্টাইলের কর্মসূচিতেই আস্থা বিএনপির। আমি ধরে নিচ্ছি, এইসব কর্মসূচিতেও বিপুল লোক সমাগম হবে। যথারীতি আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিতে বিপুল লোক সমাগম হলেও তাতে সরকার পদত্যাগ করবে এমন পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি।

বিদেশি শক্তিগুলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। দেশের জনগণও এই চাওয়ার সাথে একমত। সরকারি দলও অন্তত মুখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বিদেশিদের চাপে কিছুটা স্বস্তি পেলেও সরকারের অঙ্গীকারে আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি। আস্থা রাখতে না পারলেও বিএনপি কীভাবে তাদের দাবি আদায় করবে, তার কোনও পরিষ্কার দিক নির্দেশনা নেই। তফশিল ঘোষণার আগে বড় জোর দেড় মাস সময় আছে। বিএনপি যে স্টাইলে আন্দোলন করছে, তাতে যে সরকার পদত্যাগ করবে না; এটা বিএনপিও জানে। তাহলে তারা কেন আন্দোলন করছে, আন্দোলনের নামে সময়ক্ষেপণ করছে?

আমার ধারণা আন্দোলন নিয়ে বিএনপি একধরনের দ্বিধায় পড়েছে। আন্দোলনটা মাঠে হলেও আসল খেলা আসলে কৌশলের। আওয়ামী লীগ বারবার বলছে, বিএনপি আবার জ্বালাও-পোড়াও শুরুর পায়তারা করছে। আর বিএনপি জ্বালাও- পোড়াও আন্দোলনে গেলে সরকার সে আন্দোলনে দমনে মাঠে নামবে। তারচেয়ে বড় কথা হলো, বিএনপি জানে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে গেলে বিদেশিদের সমর্থনও হারাবে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রধান শর্ত হলো, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি প্রক্রিয়া বজায় রাখা। বিএনপির কারণে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে ভিসা নীতির খড়গ নেমে আসবে তাদের ওপরও।

তাছাড়া ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা বিএনপিও নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। সে আন্দোলনে কোনও লাভ হয়নি। কিন্তু ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে বিএনপির গায়ে অমোচনীয় কলঙ্কের দাগ লেগে গেছে। সেই দাগ মোচনের চেষ্টায় বিএনপি নিজেদের শান্তিপূর্ণ, অহিংস দল হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হলো, চলমান অহিংস আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। আবার জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করলে দেশি-বিদেশি সমর্থন হারানোর ঝুঁকি থাকছে। আন্দোলন নিয়ে সত্যিই বিএনপি বেকায়দা অবস্থায় আছে।

আমার ধারণা বিএনপি আসলে আন্দোলনটা চালিয়ে যাচ্ছে চক্ষুলজ্জার খাতিরে। সবাইকে দেখাতে যে তারা আন্দোলন করছে। আসলে বিএনপি তাকিয়ে আছে, বিদেশি শক্তির দিকে। তাদের আশা নিজেরা না পারলেও বিদেশি শক্তি চাপ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেবে। তখন তাদের সামনে সুযোগ আসবে ক্ষমতা দখলের। তখন তারা বলতে পারবে, তাদের আন্দোলনের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

তাই মাঠে নামকাওয়াস্তে আন্দোলন হলে আসল খেলা অন্যখানে। বিদেশি শক্তিগুলো তাদের চাপ কতটা বহাল রাখবে, সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেককিছু। এরমধ্যে সরকার বিদেশি শক্তিগুলোকে কতটা ম্যানেজ করতে পারবে, সেটার ওপর নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সরকার বিপাকে পড়লেও চাঙা হয়েছিল বিএনপি। কিন্তু নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার প্রাণবন্ত উপস্থিতি চাঙা করেছে আওয়ামী লীগকেও। শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের তোলা সেলফি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য কম হয়নি। একটা সেলফিতে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। তবে জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য সরকারের ওপর থেকে বিদেশি শক্তিগুলোর চাপ সরাতে কিছুটা হলেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরেষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিউইয়র্ক সফর করছেন। সেখানেও বিশ্বনেতাদের সাথে কথা হচ্ছে, কথা হবে। সব মিলিয়ে কূটনৈতিক মাঠে এখন দারুণ সময় কাটছে সরকারের। আওয়ামী লীগ রাজপথে বিএনপিকে চেক দিতে পারলে তারা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। সরকার এখন এই কৌশল নিয়েই এগুচ্ছে।

তবে আন্দোলন বলেন আর কৌশল বলেন; সবই ক্ষমতায় যাওয়া আর থাকার জন্য। দ্রব্যমূল্য যে আকাশ ছুঁয়েছে তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ডেঙ্গুতে যে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, তা নিয়ে কারো হেলদোল নেই। আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কি জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে? এডিস মশা পালিয়ে যাবে? রাজনৈতিক দলগুলো মুখে বলে তাদের সবকিছু জনগণের জন্য। কিন্তু বাস্তবে জনগণ তাদের প্রায়োরিটিতে নেই।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ