X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

চিন্তা যেমনই হোক, স্বপ্নটা হোক বড়

সাইফুল হোসেন
০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:২০আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:২০

আমরা সব সময় একটা কথা শুনি, বড় স্বপ্ন দেখো, বড় চিন্তা করো, মানুষ তার চিন্তার সমান বড়। কথাগুলো অমূলক নয়, খুব সুন্দর সুন্দর কথা। এই কথাগুলো শুনতে খুব মধুর লাগে। মোটিভেশনাল স্পিকাররা, লেখকরা সুন্দর করে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এই স্বপ্নের বীজ বুনে দেন। এমনভাবে বুনে দেন যে সে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় চিন্তা করে, ছোট ছোট চিন্তা করতে ভুলে যায়।

এই আলোচনার সঙ্গে আমার বিশেষ বিরোধিতা নেই, তবে কিছু কথা যোগ করার আছে। আমার বক্তব্য অনেকের পছন্দ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এখানে যে কথাগুলো আমি বলতে চাই তা আমার একান্ত নিজস্ব ভাবনা।

দুই ধরনের মানুষ আছে। অনেক মানুষ প্রচুর পড়ছেন। আবার কিছু মানুষ আছে যারা মোটেও পড়ছেন না। যারা প্রচুর পড়ছেন তারা প্রচুর চিন্তা করছেন। যারা পড়ছেন না তারা তাদের মতো যা পারছেন তাই করছেন। কিন্তু যারা পড়ছেন তাদের একটা বড় অংশ শুধু পড়ছেন আর ভাবছেন কিন্তু কাজ করছেন না। বিপত্তিটা হচ্ছে সেখানে। প্রচুর পড়া দরকার কিন্তু তার চাইতে বেশি দরকার প্রচুর কাজ করা।

‘জ্ঞানই শক্তি নয়’– জ্ঞানকে যখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজে লাগানো হয় তখনই জ্ঞান শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

যখন শুনছি– আমি চিন্তার সমান বড় তখন পাশাপাশি আমার আরেকটা জিনিস ভেতরে চলে আসা দরকার যে চিন্তা করে নতুন নতুন প্ল্যান করতে পারবো। চিন্তার ডানায় ভর করে আমি মঙ্গল গ্রহ থেকে ঘুরে আসতে পারবো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেটা করা দরকার সেটা হচ্ছে প্রচুর কাজ করা, চিন্তাকে কাজে রূপান্তর করা।

যখনই আপনি চিন্তাকে অ্যাকশনে রূপান্তরিত করছেন সেখানে তার প্রতিফলন আপনার কর্মজীবনে পড়ছে, আপনার জীবনের ওপরে পড়ছে। আর শুধু যখন চিন্তা করে আপনি আপনার চিন্তাগুলোকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিচ্ছেন তখন সেই চিন্তার প্রতিফলন হয়তো আপনার ব্যক্তিজীবনে পড়ছে, কিন্তু আপনার কর্মজীবনে পড়ছে না। ফলে আপনি চিন্তায় বড় হচ্ছেন কিন্তু কর্মে বড় হচ্ছেন না। তাই শুধু চিন্তায় বড় হয়ে আদতে কোনও লাভ হচ্ছে না।

জীবনে চিন্তা যেমন দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার সেই চিন্তাকে কর্মে রূপান্তর করা। যেমন আমরা আমাদের চিন্তাটা আপনাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আপনাদের মধ্যে যারা পছন্দ করবেন তারা চিন্তাগুলো নিয়ে কাজ করবেন, আর যারা পছন্দ করবেন না, তারা নেবেন না। শুধু চিন্তা করে যদি আমি বসে থাকি তাহলে সেই চিন্তা না আমার কোনও কাজে লাগে, না সমাজের কোনও কাজে লাগে। ফলে শুধু চিন্তার ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। চিন্তা করে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে, বাস্তবে রূপদান করতে হবে। তাহলেই আপনার চিন্তা ফলপ্রসূতার দিকে যাবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে চিন্তা কি খুব বড় বড় করবেন নাকি ছোট?

ব্যাপার হচ্ছে– স্বপ্ন এবং চিন্তা দুটো কিন্তু দুই ধরনের। অনেক মানুষ দেখবেন যে বড় বড় স্বপ্ন দেখেন। চিন্তার মাধ্যমে স্বপ্নের উৎপত্তি হয় (আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলছি না)। অনেকে বড় বড় স্বপ্ন দেখেন কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন না। তারা তাদের স্বপ্ন অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন, স্বপ্ন বিক্রি করে নিজে পয়সা আয় করতে পারেন, কিন্তু নিজের স্বপ্ন নিজে বাস্তবায়নের কাজ করেন না। তাই যখন চিন্তার বুনন দিয়ে আপনি স্বপ্ন তৈরি করবেন সেই স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপদান করা যায় তার জন্য প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কাজ করা প্রয়োজন।

আমার কথা হচ্ছে, আপনার খুব বড় চিন্তা করার দরকার নেই, বরং চিন্তা ছোট করুন। কারণ, চিন্তা বড় করলেই আপনি উচ্চশিক্ষিত মানুষ হয়ে চায়ের দোকান দিতে পারবেন না, আপনি মুদির দোকান দিতে পারবেন না, রাস্তার পাশে জিনিস বিক্রি করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যদি এরকম ছোট কাজ দিয়ে আপনার নিজের জীবন শুরু করেন, যখন আপনার বড় কাজ করার সুযোগ একেবারে তৈরি হচ্ছে না, তখন দেখবেন এই ছোট কাজগুলোই একসময় বড় কাজে রূপান্তরিত হয়েছে।

ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই হচ্ছে বড় কাজ। আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করবেন, নিজেকে ভাঙবেন, গড়বেন, ভাঙবেন আবার গড়বেন। এভাবে করতে করতে সামনে যাবেন, বড় হবেন। তখন একসময় দেখবেন যে বড় চিন্তা করেছিলেন, বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বড় স্বপ্নের দিকে আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে চিন্তাকে ছোট ছোট করে, ছোট ছোট কাজে ভাগ করে, ছোট কাজ দিয়ে।

মনে রাখতে হবে আপনি তখনই অনেক বড় কর্মী যখন ছোট কাজকে আপনি ঘৃণা না করেন, ছোট কর্মকে অবহেলা, অবজ্ঞা না করেন।

দেখবেন যারা শুধু জ্ঞান অর্জন করেন কিন্তু জ্ঞানকে কাজে লাগান না, তারা একসময় নিজেকে খুব শূন্য মনে করেন। তাদের জীবন যেহেতু কর্মময় হয় না তাই তারা কর্মহীন থাকেন এবং একসময় খুব হীনম্মন্যতায় ভোগেন।

কথা হচ্ছে, ছোট ছোট চিন্তা করুন, অবিরামভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করুন এবং বড় সফলতার দিকে এগিয়ে যান। যখন আপনি ছোট চিন্তা করে ছোট ছোট কাজ করে সামনে এগিয়ে যান, তখন একসময় আপনি বড় স্বপ্নের দিকে পৌঁছে যান, যে স্বপ্ন আপনি একসময় দেখেছিলেন। কিন্তু এখনই যদি আমি নিজেকে আইনস্টাইন ভাবতে শুরু করি, আমি এখনই যদি জুকারবার্গের জায়গায় নিজেকে বসাই, আমি যদি এখনই নিজেকে স্টিভ জবস ভাবতে থাকি তাহলেই বিপত্তি। যেভাবে স্টিভ জবস শুরু করেছিলেন গ্যারেজের মধ্য থেকে, আমাদেরও সেভাবে, বড় হতে হলে ছোট ছোট চিন্তা করে সেই চিন্তার পেছনে ছুটতে হবে এবং প্রচুর কাজ করতে হবে, প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না।

কিন্তু শুধু চিন্তা করে বসে থাকলে, স্বপ্ন দেখে বসে থাকলে আপনার স্বপ্ন পূরণে কেউ সাহায্য করবে না। আপনার স্বপ্ন আপনাকেই পূরণ করতে হবে। আপনার চিন্তার বাস্তবায়ন আপনাকে করতে হবে। এজন্য নিজেকে প্রতিদিন আপডেট করতে হবে এবং প্রতিদিন কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা একটা বড় স্বপ্নের দিকে পৌঁছাতে পারবো। বড় চিন্তা আপনাকে অনেক ছোট ছোট কাজ থেকে দূরে রাখবে।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট; সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ