X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অতি রাজনীতি

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:১৩আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:১৮

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতির ভেতরে একটা জনপ্রিয়তাবাদ আছে। এই জনপ্রিয়তাবাদের রাজনীতিতে কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত বলে আপনি মনে করছেন সেটি বড় কথা নয়। কোনটা সাধারণ মানুষ ঠিক ভাবছে তাও নয়। রাজনৈতিক দলের একটি মালিকানা চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশে এবং দলের মালিক যা ভাবেন, তার বা তার সভাসদের জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে যা উচিত বলে মনে হবে, সেটাই আসল রাজনীতি।
সমর্থক, কর্মীদের শুধু হ্যাঁ বলার অভ্যাস করতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে আমরা যা-ই ভাবি না কেন বাস্তব সম্পূর্ণ ভিন্ন। নেতানেত্রীরা বাস্তব থেকে সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, দিনশেষে ভোটের ফলাফলই সব। আদর্শ কেবল কথার কথা।
তাহলে প্রশ্ন জাগে রাজনীতিতে আদর্শের কোনও ভূমিকাই নেই? আছে অবশ্যই। এবং তা শুধুমাত্র আলোচনায়। আদর্শ এখন এজেন্ডা স্থির করে না। সে এখন দুর্বল, তার কোনও প্রত্যয় নেই। রাজনীতির ময়দানে কিংবা রাজনৈতিক আলোচনার জমিনে একশ্রেণির প্রতিক্রিয়াজীবী আছে, যারা সদা প্রস্তুত মালিকের ধারণাকে, মালিকের সিদ্ধান্তকে সবার ওপর চাপিয়ে দিতে।

রাজনীতিতে আধিপত্যবাদের বিপদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা অতীতেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। দেশে উদারনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে গেলে রাজনৈতিক দলের ভেতর তার অনুশীলন প্রয়োজন। সেই অনুশীলন আবার সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় গিয়ে একটি নতুন দিশা পায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ভাবনার সঙ্গে এটি খুব জরুরি। এক সময় এমনটা ভাবা হলেও এখন আর তার প্রয়োজন আছে বলে জনপ্রিয়তাবাদের রাজনীতি বা দল মালিকানার রাজনীতি তা ভাবে না। আসলে ভাবনার প্রয়োজন নেই, কারণ আদর্শের রাজনীতি এখন চরম মূল্যহীন।

এই তো নব্বইয়ের দশকেও, স্বৈরাচার হটানোর সময় আমাদের বোধ ছিল যে, আমরা রাজনীতি সচেতন। আমরা উদার, সাম্প্রদায়িক নই। গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য যা যা করা দরকার, এদেশের মানুষ তা করবে। কিন্তু এখন, বিশেষ করে, স্বৈরাচার বিদায়ের পর থেকে যে রাজনীতি দেখছে মানুষ, তাতে মনে হতে পারে রাজনীতি মানে সব বোধের জলাঞ্জলি দেওয়া। কারণ খুঁজলে ১৯৭৫-এর বিয়োগান্ত ঘটনার পরবর্তী সময়টিকেও বিশ্লেষণ করা যায়, কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের রাজনীতি আর গর্ব করার কোনও বিষয় নয়।

তবে রাজনীতিই আবার সব আলোচনায়। কিন্তু সাবলীল নয়। সাবধানী হতে হয় বলায়, লেখায়। লিখে, মনের মত প্রকাশ করতে গিয়ে জীবন গেছে, জবাই হতে হয়েছে, এই কয়দিন আগেও। কিন্তু যাদের আমরা মনে করতাম যে এরা আর যাই হোক মত প্রকাশের জায়গাটি অন্তত রক্ষা করবে, এখন তাদের সামনে কথা বলতে গিয়েও ঢোঁক গিলতে হয়। নানা কিছু ভেবে বলতে হয়।

আসলে সারাক্ষণই রাজনীতি করি আমরা, কিন্তু সেটা রাজনীতি নয়। সর্বত্র সুযোগসন্ধানীদের আধিপত্য। বিভাজিত রাজনৈতিক পরিবেশে অন্যপক্ষের দোষ খোঁজা তো আছেই, এখন বেশি দোষ অনুসন্ধান হয় নিজেদের ভেতরে। ফলে ন্যায্যতার সংকট কেবলই প্রকট হচ্ছে।

বিশ্বাসযোগ্যতা যদি পুঁজি হয়, তবে রাজনীতি তা অনেক আগেই হারিয়েছে। নীতি বস্তুটি প্রাগৈতিহাসিক বিষয়, আর আদর্শ সবার বোঝার বাইরে। রাজনৈতিক দল আর নেতারা নিজেদের মতো করে এসবের ব্যাখ্যা দিয়ে যায়। আর এই রাজনীতি থেকে পয়দা হওয়া একটা গোষ্ঠী অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করে সবকিছুকে জায়েজ করার লড়াইয়ে অবতীর্ণ। তারা শুধু পছন্দের মিথ্যাকে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। প্রশ্ন হলো, ভালো যদি সমর্থিত না হয়, খারাপ যদি ধিকৃত না হয়, তাহলে সেই রাজনীতি দেশের কি ভালো করতে পারে?

রাজনীতি মিথ্যা বলে–এমনটা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু রাজনৈতিক কথা সত্য থেকে অনেক সময় অনেক দূরে। তবে এই রাজনীতিতে সত্য-মিথ্যা খোঁজারইবা কি প্রয়োজন? সেই সুবিধাবাদীরাই ভালো করছে। সত্য, মিথ্যা, আদর্শবাদিতার ধারে কাছে না গিয়ে স্বার্থ গুছিয়ে নেওয়ার বুদ্ধি আছে তাদের। নিজেদের অর্জনকে রক্ষা করতে গিয়ে, এরা দল মালিকানার রাজনীতি করছে ও মালিকদের সিদ্ধান্তের পক্ষে নিরন্তর লড়াই করছে। মিথ্যা, ভুল আর আদর্শহীন রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা সেখানেই।   

রাজনীতি প্রেক্ষিতনির্ভর। এখনকার প্রেক্ষিতই এমন। যার জীবনবোধ বেশি, তার হয়তো এখনকার জন্য যা প্রয়োজন সেই রাজনৈতিক জীবনবোধ নেই। শাসনের প্রতি স্তরে এমন এক রাজনীতি চালু হয়েছে, সমাজের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এখন কাজের লোকের বড় অভাব। অভাব নেই কেবল রাজনীতি করার লোকের। এইভাবে সাধারণ মানুষই যদি অতি রাজনীতিতে বুদ হয়ে থাকে, তবে রাজনীতির মতো শিক্ষা, সাংবাদিকতা, বিচারাঙ্গনসহ সব জায়গা কেবল ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর লোকদের হাতে বন্দি হয়ে চলেছে।

ভোটের রাজনীতিতে কত কী করতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত আপস উপযুক্ত লোকেদের সবকিছু থেকে সরিয়ে দিচ্ছে বা তারা নিজেরাই নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা জানি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য দরকার। মাত্রাতিরিক্ত আদর্শহীনতার প্রদর্শনীতে সৎ কর্মী বা সমর্থকের মনে হিমালয় সমান অভিমান জমা হলে, সেই রাজনীতি একদিন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে একাই সাঁতার কাটবে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা  

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ