X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাগুনের দ্রোহে জাগুক নব প্রাণ

তুষার আবদুল্লাহ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৩১আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৩৩

Tushar Abdullahদখিনা হাওয়া মনের কূলে, দেহের কূলে এসে আছড়ে পড়তে শুরু করেছিল মধ্য মাঘ থেকেই। হিম চাদরের ফাঁক গলিয়ে দখিনা হাওয়া উষ্ণতা দিয়ে যাচ্ছিল। ফাগুন আসার সাতদিন আগে উত্তরের জনপদে গিয়ে দেখেছি প্রকৃতিতে বসন্ত উপস্থিত। শীতঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। ভোরের আলোর মতোই ফুরফুরে তার মন।
বৃক্ষের দেহসৌষ্ঠবে বাসন্তী আবেদন। ফাগুনে যতো ফুল ফুটবার সবই ফুটে বসে আছে। গ্রামীণ জনপদে ঋতু বরণ এখনও প্রকৃতি নির্ভর। নগরে-শহরে এই সাজ হয়ে গেছে পোশাকি। বাসন্তী রঙের পোশাক দিয়ে বোঝাতে হয়, বুঝি নিতে হয় বসন্ত এসে গেছে। বর্ষবরণের মতোই এখন অন্যান্য ঋতুকে ঘিরে উৎসব উদযাপন জনপ্রিয়তা পেয়েছে নাগরিক জীবনে। এই উদযাপনের পেছনে পুঁজি বা বিপনন বাণিজ্যের উস্কানি রয়েছে বলে গুঞ্জণ রয়েছে। এই গুঞ্জনের পেছনের সত্য-মিথ্যে জানি না। তবে কখনও কখনও গুঞ্জনকে সত্য বলে তখনই মনে হয় যখন দেখি-বাঙালির এই উৎসবে মেতে ওঠা কেবলই আয়োজন সর্বস্ব হয়ে ওঠে। মন ও চিন্তায় প্রাকৃতিক হয়ে না ওঠাই-নাগরিক মানুষদের দীনতা।
আজ বসন্ত দিনে শহর ছেয়ে গেছে বাসন্তী রঙে। নারী–পুরুষ সকলের পরিধানে বাসন্তী রঙের পোশাক। দখিনা হাওয়া, ফাগুনের আগুন রঙ কতটা তাদের মন স্পর্শ করেছে সংশয় সেখানেই। পলাশ ও শিমুল দ্রোহের প্রতীক। ফাগুন রঙ দখিনা হাওয়ায় মন দ্র্রোহের দোলায় দুলে উঠে প্রাকৃতিক ঢঙেই। প্রশ্ন হলো আমরা কি আমাদের যাপিত জীবনের মিথ্যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই? প্রতিবাদী হয়ে ওঠা, সত্যের জন্য লড়াই করতে ময়দানে নামতে ভুলে গেছি না? অথচ এই ফাগুন দিনেই তো আমাদের ইতিহাসের পাতায় একের পর এক দ্রোহের বীরগাঁথা লেখা রয়েছে। শুধু লড়াইর কথাই বলছি কেন। সত্য জানার জন্য যে জ্ঞানের চর্চা, সেখানেও কি আমরা উপস্থিত? এবার ফাগুনের প্রথম দিন এবং সরস্বতী পূজা একইদিনে উদযাপিত হচ্ছে। জ্ঞান সত্যের পক্ষে লড়তে শেখায়। মিথ্যেকে বর্জনের শক্তি জোগায়। এবার ফাগুন আর সরস্বতী বন্দনায় কি সেই সম্মিলনী সুর রচনা করতে পারছি আমরা? বাণিজ্যকতার মদদেই ফাগুনের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের আমদানি। পহেলা ফাগুন, ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলে ভালোবাসার বাণিজ্য। যেখানে প্রচারিত তথ্যের প্রতিপাদ্য- ভালোবাসা মানে নারী-পুরুষের প্রেম। আর সেই প্রেমের কর্মী টিনএজ। ভালোবাসা প্রকাশে চিরকুট, বই আর ফুলই যথেষ্ট নয়, দরকার চকলেট এবং আরও পশ্চিমা অনুসঙ্গ।
ভালোবাসা এখন সেলফির ফ্রেমে বন্দি। সেখানে ‘সকল' নেই, কেবলই একলা। ভালোবাসো নিজেকে, ভালোবাসো নিজের গোষ্ঠীকে। এর বাইরের কেউই আসবে না নিজস্বতার গণ্ডিতে। ভালোবাসা, ভালো-লাগাতো কেবল নর-নারীতে নয়। যে ধরিত্রীর বাসিন্দা আমরা, যে জনপদের ভূমিপুত্র-কন্যা আমরা, ভালোবাসার নৈবদ্য থাকতে হবে তার জন্যও। ধরিত্রী-জনপদকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে, সুন্দরের রক্ষায় দরকার একটি ফাগুন ও দ্রোহের মন। সেই দ্রোহ বাসন্তী রঙ যে কেবল তরুণ দেহ-মনে থাকবে তা নয়। প্রবীন দেহ-মনকেও স্পর্শ করতে হবে দখিনা হাওয়া।

পলাশ-শিমুলের আগুনে দ্রোহের সংগতে জ্বলে উঠেছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন।

স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র ও শিক্ষা রক্ষার আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন রাউফুন বসুনিয়া। এখনকার পুঁজির বাজার সেই ইতিহাসকে ঝাপসা করে দিয়েছে। তারা শিমুল আর পলাশের রঙ পোশাকেই আটকে রাখতে চায়। ফাগুনের আগুন রঙে তাদের ভয়। সেই ভয় থেকে মুক্তিপাক বসন্ত দিন, লগ্ন ভালোবাসার।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ