X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা অভিঘাত সহায়তা: কে পাবে, কীভাবে পাবে?

মামুন রশীদ
২৬ মার্চ ২০২০, ১৬:৩৫আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২০, ১৬:৪৪

মামুন রশীদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে সবাইকে বিশ্বব্যাপী করোনা সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিদেশ  ফেরতদের যত্রতত্র ঘুরে না বেড়িয়ে নিজ গৃহে ১৪ দিনের সংরক্ষিত অবস্থান, ব্যবসায়ীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ানো, ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সাধুবাদ জানানোসহ  অন্যান্য অনেক ব্যাপারে যেমন সাবধান  এবং স্বস্তি প্রদান করেছেন, সেই সঙ্গে করোনার আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত সমাজের গরিব,  অসহায় ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে এবং ব্যবসায়ী- উদ্যোক্তাদের সহায়তায় সরকারের উদ্যোগ নিয়েও বক্তব্য রেখেছেন।
মোটাদাগে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ ফেরতের সময় বাড়িয়ে দেওয়া, ঋণ শ্রেণিভুক্তকরনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া, আমদানি দায় নিষ্পত্তির সময় বাড়িয়ে দেওয়া, রফতানি আয় দেশে আনার সময় বৃদ্ধি,  এনজিওদের কিস্তি পরিশোধের সময় বৃদ্ধি এবং রফতানি খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি ১ লাখ নিম্ন আয়ের লোকদের ভাসানচরে পুনর্বাসন,  গরিবদের জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভরনপোষণ এবং স্বাস্থ্য সেবারও আশ্বাস দিয়েছেন। 

আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনা আঘাতের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এশীয় উন্নয়ন  ব্যাংকের (এডিবি) প্রাথমিক মূল্যায়নে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের মূল্যায়নে শুধু উৎপাদন ও সেবা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার কথা শুনেছিলাম। স্থানীয় কিছু শ্রদ্ধাভাজন অর্থনীতিবিদ  কেউ ২০ হাজার কোটি টাকা আবার কেউবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের ১ বছরের বেতন-ভাতা বিবেচনায় নিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্যাকেজের কথা বলছিলেন। কেউ কেউ আবার বাণিজ্যিক ব্যাংক বা সরকারের  সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সমাজের নিম্ন পর্যায়ের লোকদের ‘ডাইরেক্ট বেনেফিট ট্রান্সফারের’ কথাও বলেছেন।

এডিবি যদিও তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে রফতানি খাতের সম্ভাব্য ক্ষতিকে বড় করে দেখায়নি, ধন্যবাদ বিজিএমইএ নেতৃত্বকে, তারা প্রথম থেকেই নিজ খাতের সম্ভাব্য ক্ষতি এবং তার জন্য আর্থিক প্রণোদনা বা সহায়তার ব্যাপারে সরকার এবং গণমাধ্যমের  ওপর একটি চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।  সাধুবাদ দেই বিজিএমইএ সভাপতিকে, তিনি অনেকটা  জোরের সঙ্গেই তার সহকর্মীদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথাবার্তার সুবাদে সম্ভাব্য সহায়তা নিয়ে আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন। আমরা অবশ্য তার একদিন আগে বিজিএমইএ সভাপতিকে লেখা জার্মান মন্ত্রীর বক্তব্যে জেনেছি, করোনা যেমন আমাদের রফতানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে, তেমনি পিপিইসহ (জরুরি চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম) নতুন নতুন পোশাক তৈরির সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, কারখানাগুলো এখনও যেহেতু চালু আছে, পোশাক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সে ক্ষতি সবশেষে ১৫/২০ শতাংশের বেশি হবে না। তবে এটাও সত্য যে, এ বিষয়ে কেউই কোনও গভীর পর্যালোচনা বা প্রভাব-গবেষণা করেনি।

বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির মাত্র ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত আর বাকি ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।  করোনার অভিঘাত অন্যান্য দেশের মতো তাদের ওপরই বেশি পড়ার কথা। একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম বা চ্যানেল বের করে তাদেরকেই বেশি সহায়তা করার কথা। সেই  মাধ্যম হতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক, কিছু নেতৃস্থানীয় এনজিও কিংবা সরকারের সামাজিক রক্ষাব্যুহ।

করোনা  অভিঘাতের কারণে বাংলাদেশ- ভারতসহ প্রায় প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশ তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যসেবার দৈন্যদশা নিয়ে নতুন করে সজাগ হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো আমরাও আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে একটি ন্যূনতম কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় এবং বরাদ্দ আশা করেছিলাম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যে অত্যাবশকীয় ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাধিকারপ্রাপ্ত পণ্যসামগ্রীর ওপর কর কমিয়েছে বা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। সেক্ষেত্রে আমি সরকারের রাজস্ব আয়ের বিরাট ঘাটতি বিবেচনায় আমদানি কর বা মূসক খাতে আর কোনও ছাড়ের পক্ষপাতি নই।

সরকার সাধারণ গরিব জনগণের। আপৎকালীন সময়ে তাই সরকারকে তাদের দিকেই বেশি তাকাতে হবে। আমরা অবশ্যই অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও রফতানি আয় ধরে রাখা বা বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো, তবে সেটা হবে গরিব মানুষের তিন বেলা আহারের ব্যবস্থা করার পরই। 

আরেকটি ব্যাপার না বললেই নয়।  তা হলো সরকারি ক্রয় ও ত্রাণ বা ভর্তুকি বণ্টনে দুর্নীতি।  যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতদসংক্রান্ত দুর্নীতি বা অপব্যবহারের ব্যাপারে বারবার সাবধান করে দিয়েছেন। তথাপি আমি বলবো, বণ্টন-ন্যায্যতা ও সত্যিকারের ভুক্তভোগীদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া দেখভালের জন্য সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া বিবেচনার জন্য। তার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক খাতওয়ারী সম্ভাব্য প্রভাব-বিশ্লেষণের ব্যাপারটিও চলতে পারে।  অতিরিক্ত তাড়াহুড়া এক্ষেত্রে অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে।           

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ