X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ গণনিয়োগ: একটি প্রতিক্রিয়া

ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস
১০ মে ২০২১, ১২:২৮আপডেট : ১০ মে ২০২১, ১২:২৮

ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তাঁর শেষ কার্যদিবসের আগের দিন অর্থাৎ ৫ মে বিভিন্ন পদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১২(৫) ধারা উল্লেখ করে ১৪১ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে রেজিস্ট্রার জনাব এম আব্দুস সালাম অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে বরখাস্ত করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দল্লাহ আল মামুনকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দিয়ে উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপাচার্য ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেন। এ নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে চাকরি পাওয়া ও না পাওয়া নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

জনবলের অভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় সেই স্বার্থে বিভাগীয় প্রধানের চাহিদার প্রেক্ষিতে দ্রুত নিয়োগের জন্যে অ্যাডহক নিয়োগের বিধান। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হিসেবে ডিগ্রি অর্জন করেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় উৎসাহিত করাও অ্যাডহক নিয়োগের বিধান রাখার অন্যতম কারণ। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের স্থান। এসব ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকার উল্লেখিত ধারাটি ৭৩-এর অ্যাক্টে সংযোজন করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দুর্নীতিবাজ উপাচার্যগণ স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ করে অযোগ্যদের নিয়োগ দিতেই উল্লেখিত ধারার অপপ্রয়োগ করছেন। নিশ্চয় অনেকের মনে আছে, বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ফাইসুল ইসলাম ফারুকী। তিনি ক্ষমতায় এসেই মাস্টাররোলে নিয়োগ দেন ৫৪৪ জন কর্মচারী। সেটাই হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম গণনিয়োগ। এ নিয়ে অনেক প্রতিবাদ হলেও কারও কোনও কিছুই হয়নি। বরং উপাচার্যের মেয়াদ শেষে পুরস্কৃত হন অধ্যাপক ফারুকী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে। এমন সব হাজারও কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের প্রতি জনরোষ বেড়েছিল। আর এতে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছিল ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানসহ কয়েক জন শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এটাই হয়তো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তাঁর প্রথম মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে। দায়িত্বে আসার পরপরই তাঁর উপর স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে একইভাবে গণনিয়োগের চাপ আসে। তাঁর প্রথম মেয়াদে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এমন গণনিয়োগ দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। পরে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন। তাঁর উপর একই চাপ আসে। এমনকি স্থানীয় নেতারা অফিসে এসে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু তিনি এমন নিয়োগের বিষয়ে কোনও মাথা নত করেননি। তাঁর মেয়াদ শেষে অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান স্থানীয় নেতাদের কাছে গণনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েই উপাচার্য পদে নিয়োগ পান বলেই অনেকের ধারণা। আর সেই প্রতিশ্রতির বাস্তবায়ন হচ্ছে তাঁর মেয়াদের শেষ সময়ে গণনিয়োগ। করোনাকালে যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ আছে সেখানে কী এমন প্রয়োজন পড়ল গণহারে অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়ার?  তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘যারা ডিজার্ভ করে তারাই নিয়োগ পেয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই অনার্স-মাস্টার্স পাস এবং আওয়ামী পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে যাচ্ছিল। তাই আমি মানবিক কারণে ছাত্রলীগকে চাকরি দিয়েছি।’

আমি মনে করি, তাঁর এই বক্তব্যের জেরেই প্রমাণিত হয় যে, এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১২(৫) ধারা অনুসারে কোনও নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর লোক বিবেচনায় অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়া যায় না। এটা ন্যায় বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এছাড়া অ্যাডহকে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞাও ছিল। আবার এ নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি যে অ্যাক্টের দোহাই দিচ্ছেন নিজেও সেই অ্যাক্টের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হননি।

এই অবৈধ নিয়োগ বাতিলসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে করোনা ভাইরাসের মতো এটা ছড়িয়ে পড়বে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ’৭৩-এর অ্যাক্ট সব বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলেও অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে উপাচার্যকে দেওয়া আছে। এক্ষেত্রে সরকার যদি মনে করে সরকার দলীয় লোকজনই তো নিয়োগ পেয়েছে তবে সেটা অত্যন্ত ভুল হবে। খোন্দকার মোশতাকও তো আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তাঁর বিশ্বাসঘাতকতা তো মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতাকেও হার মানিয়েছে। এ অবৈধ নিয়োগকে বাতিল করে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের।
 
লেখক: উপাচার্য, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
উপজেলা নির্বাচনতার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৪)
কালীগঞ্জে জামানত হারিয়েছেন ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী
উপজেলা নির্বাচনকালীগঞ্জে জামানত হারিয়েছেন ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ