রেটিং: ৬.৫/১০
পরিচালন টিমের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম সাইবার অ্যাকশন থ্রিলার ছবি ‘অন্তর্জাল’। দেশ ও দেশের বাইরে একই সাথে কানাডা ও আমেরিকার ১৮৪ হলে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘অন্তর্জাল’। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের প্রণোদনায় নির্মিত ও দীপংকর দীপন পরিচালিত ছবি ‘অন্তর্জাল’। সাইবার জগতের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রোগ্রামারদের সফলতা নির্ভর গল্প ‘অন্তর্জাল’। প্রচলিত ছবির মতো ‘দেশরক্ষায় শেষমেশ দেশপ্রেমই আসল’-এই মন্ত্রের নতুন এক ছবি ‘অন্তর্জাল’। কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের অনুপ্রাণিত করার এক ছবিও ‘অন্তর্জাল’।
লুমিন, প্রিয়ম আর সাদাফের জীবনের গল্প ‘অন্তর্জাল’। লুমিন প্রোগ্রামার, সাদাফ তার মা ও সাইবার জগত নিয়ে ভাবে আর প্রিয়ম রোবট বানাতে চেয়ে একদিন রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে। হ্যাকাথন কম্পিটিশনে তাদের দেখা হয়েছিল এবং একটা গ্রুপ হয়ে সেখানে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়। এরপর তিনজন তিন জায়গায় নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশের প্রয়োজনে তাদের আবার দেখা হয় যখন হ্যাকাররা গ্রীনবাংলা ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে এবং সারাদেশে এই ব্যাংকের গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারে না। দেশের বাইরে পড়ালেখা করে দেশের জন্য কাজ করতে আসা সাইবার বিশেষজ্ঞ নিশাত হ্যাকারদের হুমকি বিবেচনায় লুমিন, প্রিয়ম এবং সাদাফকে তুলে নিয়ে আসে এবং শুরু হয় সিনেমার গল্প।
মোবাইল নেটওয়ার্কিং, জ্যাম, বিদ্যুৎহীনতা, ব্যাংক-এর সার্ভার হ্যাক এবং সর্বশেষ দেশীয় প্রযুক্তি ‘একুশ’ রক্ষায় দেশের প্রয়োজনে এই তিন বন্ধু যায় থাইল্যান্ড। তাদের জীবন বাঁচাতে তাদের সাথে ছায়া হয়ে থাকে পুলিশের এসি রায়হান। সেখান থেকে ফেরা হলেও শেষমেশ তারা আটকে যায় প্রযুক্তি ২১ বাঁচাতে। শুরু হয় আরেক লড়াই।
এই ছবি নতুন জেনারেশনকে অনুপ্রাণিত করুক এই আশাতে ছবির ভালো দিকগুলো তুলে ধরা যাক। পৃথিবীতে সায়েন্স ফিকশন ও সাইবার থ্রিলার নির্মাণে আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সেই তুলনায় না যেয়েও বলা যায় এই ছবিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। প্রচলিত সিনেমার দর্শকরা ‘সাইবার টার্ম’-এর সাথে পরিচিত না হলেও এটা সব শ্রেণির দর্শকরা যেন বুঝতে পারেন চিত্রনাট্য সেভাবে সাজানো হয়েছে। প্রোগ্রামারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টাও লক্ষণীয়। একই সাথে সুন্দর লোকেশনে নান্দনিক চিত্রধারণ এবং অভিনয়ের পারঙ্গমতা এই সিনেমার ভালো দিক।
‘অন্তর্জাল’ দেখে কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে সাইবার বিশেষজ্ঞরা কেন প্রথম থেকে কিছুই বুঝতে পারেননি এবং কেন তিনজনকে মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেয়া হয়েছিল। হ্যাকার কিংবা ভিলেন যা যা করতে চেয়েছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্প সেইদিকে এগিয়েছে! ভিলেন যখন তার আস্তানায় নিজেকে এক্সপোজ করে সেই আস্তানার দরজা একটা মাত্র গুলিতে খুলে যায়। তবুও সবকিছু ছাপিয়ে এই ছবির টিমকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে।
এই ছবিতে লুমিন ও প্রিয়ম চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ ও সুনেরাহ বিনতে কামাল। ছবিতে তাদের প্রেম রসায়ন ভালো লেগেছে। বাবা-মা হারা একা একজন লুমিন হিসেবে সিয়াম ছিলেন সপ্রতিভ। তিনজনের আরেকজন সাদাফ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাশরুর ইনান ওরফে কিটো ভাই। নিশাত চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মীম এবং পুলিশের এসি রায়হান চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবিএম সুমন। সুমনকেও ভালো লেগেছে এই ছবিতে। এছাড়াও অভিনয় করেছেন অমিত সিনহা, মোহাম্মাদ আলী হায়দার, শফিউল বাবু ও মোহাম্মাদ বারী। আইসিটি মন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রওনক হাসান। মন্ত্রীসুলভ গাম্ভীর্য কিংবা টেনশনের জায়গায় ভালো লেগেছে তার অভিনয়। এ ছবিতে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোসেফ কিম। সম্ভবত কোরিয়ান নাগরিক, যিনি বাংলাও বলতে পারেন। ছবির মূল চরিত্রগুলোর মধ্যে তিনি একমাত্র বিদেশি (থাইল্যান্ড অংশে আরও কয়েকজন আছেন)। মন্দ চরিত্রে কোরিয়ান নাগরিকের অংশগ্রহণ এই প্রথম।
ছবিটি প্রযোজনা করেছেন মোশন পিপল স্টুডিওস লিমিটেড এবং স্পেলবাউন্ড লিও বার্নেট। প্রযোজক মোহাম্মাদ আলী হায়দার এবং মোহাম্মাদ সাদেকুল আরেফীন। দীপংকর দীপন পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্যও লিখেছেন। গল্প লিখেছেন সাইফুল্লাহ রিয়াদ ও আশা জাহিদ। ছবির সংলাপ লিখেছেন সাইফুল্লাহ রিয়াদ এবং চিত্রগ্রাহক মনিরুল ইসলাম মামুন। ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন ও অভিনয় শিল্পীদের সাথে মামুনকে আলাদা ভাবে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে।
জয় হোক বাংলা ছবির।
সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।
আরও সমালোচনা:
এমআর-৯: ‘মাসুদ রানা’ আছে ‘মাসুদ রানা’ নেই!
১৯৭১ সেই সব দিন: ৫৩ বছর আগের বাস্তবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
আম কাঁঠালের ছুটি: দুরন্ত শৈশব মনে করিয়ে দেয়া এক ছবি
প্রিয়তমা: পরিচিত গল্প আর ‘তাড়াহুড়ো’য় নির্মিত ছবি!
প্রহেলিকা: ছবিটি দেখলে কিছু প্রশ্ন উঠবেই
‘পরাণ’-এর আরেক ভার্সন ‘সুড়ঙ্গ’!
সুলতানপুর: ফর্মুলায় আক্রান্ত ধারাবাহিকতাহীন ছবি
আদিম: ‘বস্তি ঘনিষ্ঠ’ এক অপরূপ ছবি!
পাপ: শেষ না হওয়া এক থ্রিলার গল্পের ছবি
কিল হিম: বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন অনন্ত, কিন্তু সেটা নড়ে না!
লিডার: স্বস্তি আর অস্বস্তির পাঁচ-ছয়