X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্যের অভিযান থেকে কী অর্জিত হলো?

স ম মাহবুবুল আলম
২৬ জুলাই ২০২২, ১৮:০১আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ১৮:০১
গত ২৬ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনিবন্ধিত-অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল। নির্দেশনা জারির পর পরবর্তী তিন দিনব্যাপী অভিযানে আট বিভাগে মোট ১ হাজার ১৪৯টি বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতেই অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এই অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

 দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৯৩। অনিবন্ধিত  কতো আছে তার হিসাব স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই। ধারণা করা হয়, অনুমোদনহীন-অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিবন্ধিত সংখ্যার চেয়েও অধিক। এবার শুধু নিবন্ধন না থাকার সুনির্দিষ্ট শর্তকে ধরে অভিযানে নামা হয়েছে।

এসব নিবন্ধনহীন এবং অনেক নিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বাসাবাড়ির কোনও ফ্ল্যাট, এমনকি দোকানে, এক রুমের ঘর ভাড়া নিয়ে অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে হাসপাতাল, অপারেশন থিয়েটার, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। অবৈধ ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স, অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ ছাড়া, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে রোগ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ভুল রিপোর্টের কারণে রোগীর ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠছে। চিকিৎসা হোক বা না হোক, এসব হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা ও অপারেশনের নামে রোগীদের পকেট থেকে হাজার হাজার টাকা খসানো হয়। মানহীন এসব ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীরা অনিরাপদ ও সাধারণ মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছে।

এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন ও কীভাবে গজিয়ে উঠছে এসব বেসরকারি ক্লিনিক? এই অভিযান চলাকালে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ঘটা লোমহর্ষক ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে এক নারী সদ্যই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। অভিযান হতে পারে এই খবরে সদ্যজাত সন্তানসহ ওই নারীকে ভেতরে রেখে বাইরের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে ডাক্তার-নার্সসহ ক্লিনিকের সবাই পালিয়ে গেছেন। লোমহর্ষক ঘটনাটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানি না।  রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনেরা নিরুপায় হতে পারে, আর্থিক সাশ্রয়ের বিষয় তাদের বিবেচনায় ছিল। তবে তাদের এই অবিশ্বাস্য ঝুঁকি নেওয়াটা উভয় পক্ষের সম্মতিতেই ঘটেছে, অনিবন্ধিত ক্লিনিকটির প্রতি কিঞ্চিৎ হলেও তাদের লুকায়িত আস্থার প্রকাশ ঘটেছে। দালাল, লোভী, প্রতারক, অমানুষ ইত্যাদি নানা বিশেষণে গালাগালি করছে সবাই। কঠিন সত্য হলো তারাও দেশের হতভাগ্য জনগোষ্ঠীর কোটি কোটি মানুষের কয়জন যারা নিজের রুজি-রোজগারের জন্য লড়াই করছেন। মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে এসব ক্লিনিক। এখানে প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটছে, রোগীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে।  তারপরেও স্বাস্থ্য সমস্যায় মানুষ সেগুলোতে ছুটে যাচ্ছে।

 কীভাবে গড়ে উঠলো বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত

আমরা ১৯৭১ সালে সরকারি প্রাধান্য নির্ভর যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পেয়েছিলাম তা ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ প্রবর্তিত ব্যবস্থারই ধারাবাহিকতা ছিল। ১৯৪৬ সালের ভোর (Bhore) কমিটি প্রদত্ত মডেল অনুযায়ী সরকারি অর্থায়নে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হলেও স্বাস্থ্যসেবার মূল কাঠামোতে সরকারি প্রাধান্য বজায় থেকেছে। গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য সেবায় বাণিজ্যকরণের সূচনা হয়। বহুজাতিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি ও তাদের পক্ষের গবেষকরা নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব বিস্তার শুরু করে। আইএমএফ ঋণ প্রাপ্তির শর্ততে বেসরকারিকরণকে জুড়ে দেয়। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বাজেট বরাদ্দ কমে যায়। একটা দেশের বেসরকারি খাত কেমন হবে তা সরকারি খাতের আকার আকৃতির সঙ্গে নির্ভরশীল। এখন বাংলাদেশের একটি সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানাবিধ ফি বিপুল পরিমাণে আরোপ করা হয়েছে। নানা অব্যবস্থা ঠেলে, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে হয়। প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালের বাইরে গিয়ে বেসরকারি থেকে করে আনতে হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ব্যক্তির নিজের পকেট থেকেই দুই-তৃতীয়াংশ খরচ করতে হয়। এর সাথে আছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা-যাওয়া থাকা-খাওয়ার খরচ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটেছে। তাদের হাতে অর্থ এসেছে। তাদের চাহিদা তৈরি হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণে, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

এখন দেশে সরকারি ৬০৭টি হাসপাতালে বিছানা ৪৯ হাজার ৪১৪টি, নিবন্ধিত বেসরকারি ৫ হাজার ২৩টি হাসপাতালে ৮৭ হাজার ৬১০টি। অনেকটাই আমাদের সকলের অগোচরে, কোনও দূরদৃষ্টি পরিকল্পনার বাইরে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ও সুবিধাবাদী অবস্থান থেকে বেসরকারি ব্যবস্থা নিজস্ব গতিপথ ধরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। কার্ডিয়াক প্রসিডিয়রসহ অনেক চিকিৎসাতেই বেসরকারি হাসপাতাল সরকারি হাসপাতালকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিচিত্র, নানাধর্মী ও অত্যন্ত খণ্ডিত এবং সেবা মানের উচ্চ তারতম্য রয়েছে।

এই বেসরকারি ব্যবস্থা কি আমাদের জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য- সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারবে? বেসরকারি খাতের বিকাশ কি গরিব জনগণের স্বাস্থ্যসেবার অধিকারকে নিশ্চিত করতে পারবে? যেখানে কোনও আর্থিক সংকট ছাড়া প্রত্যেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাবে।

সরকারি না বেসরকারি

অনেকেই মনে করেন বেসরকারি খাত মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ব্যাপক মুনাফা করছে। বেসরকারি খাতের ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। মুনাফার আকাঙ্ক্ষা বেসরকারি খাতে চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি করছে। বেসরকারি খাতের চিকিৎসকদের মধ্যে অতিরিক্ত ওষুধ, ইনজেকশন, অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপ্রয়োজনীয় অপারেশন করানোর প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। তাই রোগীরা বেসরকারি খাতের যেকোনও চিকিৎসা উপদেশকেই সন্দেহের চোখে দেখে। মনে করে কমিশন বাণিজ্য চলছে। অতিরিক্ত বিল, মিথ্যা বিলের অভিযোগ হতে দেখা যায়। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা লাভভিত্তিক বেসরকারি বিমা ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। বেসরকারি খাতে জনগণ চিকিৎসা খরচ মিটাতে গিয়ে দরিদ্র, সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যসেবা পেতে অসমতা বৃদ্ধি করছে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।  বেসরকারি খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব। মানুষ অর্থ খরচ করেও মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাচ্ছে না। মানুষের বাঁচা-মরা, রোগ নিয়ে মুনাফার ধারণা অনেকেই অনৈতিক মনে করে, চিকিৎসা সেবার বাণিজ্যকরণ তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

এ অঞ্চলের মানুষ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সরকারি বিনামূল্যের চিকিৎসা সেবা দেখে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। তাদের ছোটবেলায় দেখেছে অনেক অলাভজনক দাতব্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। তারা মনে করে চিকিৎসক-নার্সরা মানুষের ভেতরে ভিন্ন কেউ যারা সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে মানুষের রোগ-শোক, দুঃখ দূর করার জন্য সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকবে।  তাই এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ, চৌকস আমলা, বিদগ্ধ কলামিস্ট, বাঘা সাংবাদিক স্বাস্থ্যসেবার সামাজিক, মানবিক দিক নিয়ে উচ্চকিত। কিন্তু তারা বিন্দুমাত্র সচেতন নন স্বাস্থ্যসেবার অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে।

কোনও সেবা প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ঝুঁকিমুক্ত ও সচল না হলে টেকসই হবে না। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর মূল্য, অবকাঠামোর খরচ, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর বেতন ও প্রবৃদ্ধির ন্যূনতম জোগান আসতে হবে। দেশের তৈরি সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোয় বাংলাদেশের জনগণ প্রতি বছরের বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। সেই অর্থ দিয়ে যদি তারা বেসরকারি খাত থেকে স্বাস্থ্যসেবা ক্রয় করতো, তাহলে বর্তমান বেহাল স্বাস্থ্যসেবার চেয়ে উন্নত সেবা কি পেতে পারতো? সেই উত্তর আমাদের তো জানা নেই।

সরকারি বা বেসরকারি কোনও বিবেচ্য বিষয় না। এমন একটা পদ্ধতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যেখানে সর্বনিম্ন খরচে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়া যাবে। অনেকেই মনে করে লাভজনক বেসরকারি খাত সর্বনিম্ন খরচে সেরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এনে দেবে। মুনাফার তাগিদ পদ্ধতিকে দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও উৎপাদনশীল করে তোলে। অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির তত্ত্ব থেকে জানি, সেবার উচ্চতর মান তৈরি করে রোগীকে আকৃষ্ট করতে হবে এবং মূল্য প্রতিযোগিতামূলক হলেই রোগীকে আকৃষ্ট করা সম্ভব। বেসরকারি সেবা ব্যবস্থায় একজন স্বাধীনভাবে সেবা প্রদানের স্থান, সেবা প্রদানকারীকে নির্বাচন করতে পারে। সেবার ধারাবাহিকতা ও একান্ত ব্যক্তিগত মনোযোগ পাওয়ার সুযোগ থাকে, দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়। বেসরকারিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সেবার মান ও রোগীর সন্তুষ্টি বেশি পরিলক্ষিত হয়। তুলনামূলকভাবে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সুযোগ পাওয়া যায়। বেসরকারি খাতে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসার মান যেমন অত্যন্ত খারাপ, তেমনি মিলছে সেরা চিকিৎসাও। বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালের আন্তর্জাতিক চিকিৎসার মান ইতোমধ্যে অনেক রোগীর বিদেশ গমন রোধ করতে পেরেছে।

অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অদক্ষতা, অপচয় ও দুর্নীতিতে জর্জরিত। সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘসূত্রতা, উপেক্ষাকে সেবার অনুষঙ্গ বলে মেনে নিতে হয়। বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য খাত তো ফুটো কলসির মতো। স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী সরকারি হাসপাতাল থেকে মূল বেতন নিলেও তার মনোযোগের বড় জায়গা প্রাইভেট প্র্যাকটিস। সরকারি হাসপাতালে ওষুধের অপর্যাপ্ত সরবরাহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুরুতর ঘাটতি প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে গুণিতক হারে বিকশিত করছে এবং এর বিপরীতে স্বাস্থ্যসেবার বহুমাত্রিক জটিল কর্মপরিধির সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিকরণ এক মারাত্মক সংমিশ্রণ তৈরি করেছে। বেসরকারি খাতের মতো সরকারি খাতের চিকিৎসার মানও গুরুতরভাবে অধপতিত।

আমরা শুনেছি নগরের ধনীরা শহরের ফিটফাট বেসরকারি হাসপাতালে যায়। কারণ, বেসরকারি হাসপাতাল ধনীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দেশের গরিব ও প্রান্তিক জনগণেরও চিকিৎসার প্রধান উপায় বেসরকারি খাত। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশে স্বাস্থ্য সমীক্ষায় শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ অনেক রোগে গরিব মানুষদের বেসরকারি খাতে ব্যাপকভাবে যেতে দেখা যায়। আমাদের নজরের বাইরে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক অনিবন্ধিত ব্যক্তি পর্যায়ের, ফার্মেসি নির্ভর অনিয়ন্ত্রিত বিশাল বেসরকারি খাত। রোগী নিজের পকেটের সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে এখানে। তাই যে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর আমাদের এতখানি নির্ভরশীলতা তাকে ঘৃণা, উপেক্ষা বা মুনাফালোভী বলে আখ্যায়িত করে আমাদের কি পরিত্রাণ আছে?

পৃথিবীর অনেক উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলেছে। পৃথিবীর দেশ ভেদে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে অথবা সমান গুরুত্ব দিয়ে বা সরকারি ব্যবস্থার প্রাধান্য বজায় রেখে জাতীয় জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বেসরকারি খাত বাধা অথবা উন্নত তা প্রমাণিত হয়নি। তবে এখন পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই রয়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অস্তিত্ব। বেসরকারি খাতের ভালো করার সম্ভাবনার কথা বলার অর্থ সরকারি স্বাস্থ্য খাতের বিরোধিতা করা নয়। মহামারির মতো দুর্যোগে বেসরকারি খাতকে তেমন কার্যকর ভূমিকায় পাওয়া যায়নি। বেসরকারি খাত জনস্বাস্থ্যের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ। প্রয়োজনীয় কিন্তু অলাভজনক সেবা, চিকিৎসা শিক্ষা বা গবেষণায় বেসরকারি খাতের আগ্রহ থাকে না।

সরকারি বা বেসরকারি উভয় খাতেই  স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো নির্মাণ সামগ্রী, ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণ, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের ভারী যন্ত্রপাতি  ইত্যাদির মতো স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়বহুল প্রধান উপাদানগুলোর জোগান দেয় বেসরকারি খাত। উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, বাণিজ্য, গবেষণা বেসরকারি খাতের হাতে। তাহলে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর হাতে বাণিজ্যের এলাকা কতটুকু থাকে? শুধু স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পারিশ্রমিকে!

উদাহরণ হিসেবে চালের সরবরাহকে বিবেচনায় আনি। চাল সরবরাহের বাজারে লাখ লাখ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত। নিয়ন্ত্রক বা চালক সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হয়– উৎপাদন, সরবরাহ ও চাহিদা, কোথায় কত মজুত, মজুতদারি চলছে কিনা, বাজারে চালের দামের ওঠানামা, দাম ওঠানামার কারণ, আমদানির প্রয়োজন কখন ইত্যাদি।  তারপরেও সরকারকে লাখ লাখ টন চাল মজুত রেখে, চালের আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ বাজারে নজরদারি বজায় রেখে শতবর্ষের অভিজ্ঞতার শিক্ষায় মুনশিয়ানা দেখাতে হয় সারা বছর। সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধানের জমি ও উৎপাদন তথ্যের প্রাপ্তি, খাদ্য মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধি, পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতাসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের আরও দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ আছে। এই প্রয়োজনীয় সেবার পুরোটাই বেসরকারি লাভজনক বাণিজ্যের শর্ত মেনে চলছে।

অভিযান নিয়ে কথা

অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের লোক দেখানো অভিযান কোনও কাজে আসবে না। অবৈধ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধে অভিযান নিষ্ফল হবে। ক'দিন বন্ধ থাকলেও প্রভাবশালী মালিকেরা অবৈধ ক্লিনিকগুলো ফের চালু করেন বা অন্য নামে চালু হবে বা ইতোমধ্যে হয়েছে।

তবে এই অভিযান দুটি গোপন এজেন্ডা পূরণ করেছে।

এক: ছোট ছোট অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তুলনামূলক বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাকে সহজ করেছে। গরিব মানুষের দরকষাকষির ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাচ্ছে।

দুই: এই অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্জন নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠিত সার্জনদের বেসরকারি  হাসপাতালে কাজ করার স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে ভূমিকা পালন করেছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে– স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ ধরনের অভিযান পরিচালনার কোনও নৈতিক শক্তি আছে কিনা। স্বাস্থ্য অধিদফতর তৈরি হয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা তদারকি করা, নিশ্চিত করার জন্য। সরকারি হাসপাতালের ভয়ংকর অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সেবার কারণেই এসব অনিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। হাসপাতাল সংলগ্ন বেশিরভাগ ক্লিনিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বা কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যে প্রতিষ্ঠান তার নিজের ওপর অর্পিত প্রাথমিক দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ, সে কোন অধিকারে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর খবরদারি করে। দ্বিতীয় প্রশ্ন– স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশালায়তন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের তাদারকি করার সক্ষমতা রাখে কিনা? স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিপুল বেসরকারি খাতকে তদারকি করার জন্য কোনও জনবল সৃষ্টি করা হয়নি। একজন পরিচালক, দুজন উপ-পরিচালক, তিন জন সহকারী পরিচালক ও পাঁচজন মেডিক্যাল অফিসারের পক্ষে সরকারি হাসপাতাল দেখভাল করাই কঠিন। সেখানে একই জনবল দিয়ে হাজার হাজার বেসরকারি হাসপাতাল তদারকি করা তাদের সক্ষমতার বাইরে।

অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এটাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রথম অভিযান নয়। অতীতেও বহুবার অভিযান চালানো হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে অস্ত্র উঁচিয়ে ভীতিকর পোশাকে, ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে জনৈক ম্যাজিস্ট্রেট মিডিয়া সরগরম করেছেন। যা আতঙ্ক সৃষ্টি, সুনাম নষ্ট, বেসরকারি খাতের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জরিমানা করা হয়েছে। তাতে স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি, বন্ধ হয়নি চিকিৎসা প্রার্থীদের প্রতারিত হওয়া। সরকারকে প্রথমেই স্পষ্ট করতে হবে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার ভূমিকা কী হবে? কীভাবে তারা পরিচালিত হবে। বেসরকারি খাতের সমস্যা কোথায়? সমস্যা চিহ্নিত না করে অভিযান চালিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো যাবে, স্বাস্থ্যসেবার সংকট বাড়িয়ে তোলা হবে। অ্যাকশন ড্রামায়  আসক্ত জনগণকে অভিযান, আরও বড় অভিযানের নাটকে ভুলিয়ে রাখা যাবে, তবে সত্যিকারের পরিবর্তন অর্জন সম্ভব হবে না। পরিবর্তন আনতে নিরলস অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে হবে। পরিবর্তন একটা সর্বাত্মক, দীর্ঘ লড়াই।

কী করণীয়

শুধুই সরকারি ব্যবস্থা বা শুধুই বেসরকারি ব্যবস্থা চালু রাখার প্রস্তাব একটা চরমপন্থি ধারণা। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের মিশ্র ব্যবস্থাই বাস্তবতা। যেখানে লাভজনক বাণিজ্যিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে বা কম খরচে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার সহ-অবস্থান থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আর্থিক, ব্যবস্থাপনাগত ও দক্ষতার চূড়ান্ত ঘাটতি দেখা যায়। তেমনি বেসরকারি খাতে বাজার ব্যর্থতা- ব্যক্তি জানে না কী কিনতে হবে, কত দামে কিনতে হবে, এমনকি জানে না কী তার চাহিদা যা তার সেবা প্রদানকারী নির্ধারণ করে দেয়।

এই দুই ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটির ফাঁক গলে নিম্নমানের সেবা প্রদানকারী ও নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা জায়গা করে নিচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের ব্যর্থতা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে এবং তাদের আর্থিক ঝুঁকিতে ফেলছে।

সুদীর্ঘ ইতিহাসের নানা বিবর্তনের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের মিশ্র স্বাস্থ্যসেবা খাত। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি খাতের ব্যাপক প্রভাব তৈরি হলেও তা কখনোই সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা বা আনুকূল্যে গড়ে ওঠেনি। এককভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা, এককভাবে অর্থ ব্যয় করা ও অবকাঠামো তৈরি করা- সরকারের কাজ। এই  ধারণা থেকে সরকার ও জনগণকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা এমন কোনও বেসরকারি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দিতে পারি না, যা শুধু অর্থবানদের চিকিৎসা দেবে, স্বাস্থ্যসেবা লাভে অসমতা বাড়িয়ে দেবে।

সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ, সেবার মান ও ব্যয়ের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। অনিবার্যভাবে গড়ে ওঠা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রণোদনার দুর্বলতা ও শক্তি অনুধাবন করতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপ্তি, উন্নতি ও উদ্ভাবনী শক্তি মিশ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন ধরনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে।

সরকারকে সর্বাগ্রে বিনিয়োগ করতে হবে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় স্বাস্থ্য ডাটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) নির্মাণে। যা সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে প্রতিটি সেবা, কর্মকাণ্ডের বিপুল ও হালনাগাদ উপাত্ত বাস্তব সময়ে পৌঁছে দেবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, পরিকল্পনা তৈরি করে, বাস্তবায়ন ও সাফল্য-ব্যর্থতার শিক্ষা নিয়ে তৈরি হবে মিশ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গতিশীল কর্মকৌশল।

মিশ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করছে কার্যকর তদারকি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় সময়ে হস্তক্ষেপের ওপর। একটি সমন্বিত, সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারি খাতকেই নেতৃত্বের  (স্টুয়ার্ডের) ভূমিকায় থাকতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্য খাতের নেতৃত্বকে নিরপেক্ষ ও ন্যায়নীতির উচ্চতর স্তরের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠা  করতে হবে মিশ্র স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন ধরনের দৃঢ় সুশাসন।

উল্লেখযোগ্য আশু কিছু পদক্ষেপের কথা নিচে উল্লেখ করতে পারি।

১. বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে জাতীয় জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য পূরণে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে– এ লক্ষ্যে

ক. বেসরকারি চিকিৎসা সেবা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য নীতি, আইনি, সাংগঠনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোসহ একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করতে হবে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে-

১)  বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর সেবার মান পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলসহ একটি নিরপেক্ষ তদারকি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।

২) একটি জাতীয় মূল্য নির্ধারণ কমিটি তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো, নির্মাণ সামগ্রী, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী, চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বৃহৎ যন্ত্রপাতি এবং স্বাস্থসেবার প্রতিটি আইটেমকে কোডের আওতায় আনতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি  নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে।

৩) বেসরকারি খাতের একটি হাসপাতাল সরকারি হাসপাতালে প্রদত্ত একই সেবা কম ব্যয়ে প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সেই বেসরকারি  প্রতিষ্ঠান যদি সেই পরিমাণ অর্থই রোগীর জন্য মূল্য নির্ধারণ করে, তবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেবার বিপরীতে গরিব রোগীদের মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ পেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়ন এবং বেসরকারি পরিষেবা বিধানের সংযোগ ঘটাতে হবে। জনগণের নিজের পকেট থেকে সরাসরি অর্থ ব্যয় কমানো হবে প্রধান লক্ষ্য।

৪) অলাভজনক বেসরকারি  স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে সহায়তা দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি  স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ত্যাগী মনোভাব ও সক্ষমতার এনজিওদের জন্য পরিপূরক হয়ে কাজ করার সুযোগ বাড়াতে হবে।

২. সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়াতে আশু করণীয়– বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্য সেবার রয়েছে বিশাল অবকাঠামো, দক্ষ জনবল ও বিশাল বিস্তৃতি।

ক. বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে কিছু অর্থ বাড়িয়ে সরকারের তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা উচিত– প্রয়োজনীয় ওষুধের সহজলভ্যতা এবং প্রাপ্যতা, সার্বক্ষণিক ডায়াগনস্টিক সেবা চালু রাখা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও মান উন্নয়ন।

খ. প্রাইভেট প্র্যাকটিস রদ বা সীমিত করা– চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষায় মান বৃদ্ধি, গবেষণা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সকল মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস রহিত করতে হবে। সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পরিবর্তন ও সুযোগ-সুবিধার বিন্যাস করতে হবে। আমরা এজন্য ন্যূনপক্ষে প্রতিবেশী দেশে প্রচলিত কাঠামো অনুসরণ করে যাত্রা শুরু করতে পারি। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, বেসরকারি  হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অশুভ জোট ভাঙতে হবে।

গ. নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর শূন্যতা দূর করে সামগ্রিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

ঘ. কর্মক্ষেত্র সুখী স্বাস্থ্য সেবা কর্মী ছাড়া উন্নত সেবা আশা করা যায় না। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জীবনমান ও কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে।

সরকারের অগ্রাধিকার দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকারে নিয়ে সামান্য বিনিয়োগ বাড়ালেই দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বাধিক সাফল্য পাবে এবং তৈরি হবে উন্নত শ্রমশক্তি, স্কুল শিক্ষায় রাখবে ভাল অবদান, নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনীতিতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা তৈরি হবে।

পরার্থপরতার অর্থনৈতিক কাঠামোর ক্ষমতা সীমিত। একটি কার্যকর বাণিজ্যিক মডেলের ক্ষমতা অসীম এবং টেকসই।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ল্যাব কো-অর্ডিনেটর, প্যাথলজি বিভাগ, এভার কেয়ার হাসপাতাল।
 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ