X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘দামের চাপে দম ফুরায়’

লীনা পারভীন
০৬ আগস্ট ২০২২, ১৮:০০আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৮:০০

নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে যাওয়ার নাম শুনলেই আজকাল বাড়ির বাজার করা ব্যক্তিটির রক্তের চাপ বেড়ে যায়। একদিকে বাজারের চাপ সামলানো আবার অন্যদিকে বাসায় আসার পর চাহিদামত পণ্য না আনার চাপ। বাসার বুয়াও আজকাল জিনিসপত্র শেষ হয়ে গেলে বলতে সাহস পাচ্ছে না। বাসায় বাজার করেন আমার স্বামী। প্রতিবার বাজার থেকে এসেই ‘প্রজ্ঞাপন জারি’ করেন, খরচ কমাতে হবে। আর পারা যাচ্ছে না। কাঁচা মরিচ এমন একটা জিনিস যা তরকারিতে দিলেও চলে আবার না দিলে স্বাদ কমে যাওয়ার চিন্তা আছে। অথচ সেই কাঁচা মরিচের কেজি বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা যা গত সপ্তাহেও কিনেছিলাম ২০০ টাকা করে। বেড়েছে শুকনা মরিচের দামও।

এভাবে হিসাব করতে গিয়ে দেখি প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। কাঁচা মরিচতো আমাদের দেশেই উৎপাদন হয় অথচ বৃষ্টির অজুহাতে সেই মরিচের দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি বা বন্যা কিন্তু সব এলাকাতে হয়নি। তাহলে কেন বাড়লো? আর বাড়লোই যদি সেটি কেন রেসের ঘোড়ার মতো বাড়বে? প্রশ্নতো আছে কিন্তু উত্তরদাতার অভাব। তাইতো চুপ হয়ে থাকি আজকাল।

প্রতিটা মুহূর্ত কেবল ভাবনায় থাকি কেমন করে কোন দিকে কত খরচ কমানো যায়। কোন খরচটা বাহুল্য আছে আর কোনটা বাদ দিতে হবে? আগে অন্তত মাসে একবার বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে খেতে যেতাম এখন সেটা ছয়মাসেও করতে পারছি না। আগে জামাকাপড় কেনায় কোনও টাইম-টেবিল হিসাব করতাম না। পছন্দ হলেই নিয়ে নিতাম। এখন আগে মাসিক খরচ কতটা কেমন করে মেটাবো সেই হিসাব করি তারপর একটার জায়গায় দুইটা পছন্দের কাজ করবো কিনা চিন্তা করি।

এভাবেই দিনে-দিনে আমাদের জীবন থেকে পছন্দ বিষয়টা হারিয়ে যেতে বসেছে। আমি জানি আমাদের দেশে এমনও মানুষ আছে যার কাছে আমার এই লেখাটা পড়ে মনে হবে আমি একজন অতি দরিদ্র লেখক তাই নিজেকে দিয়ে এইসব চিত্র তুলে ধরছি। আসলেই কি তাই?

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কত অংশ আমার মতো সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছেছে? অস্বীকার করবো না যে উন্নয়ন আসেনি কিন্তু উন্নয়নের হিসাব আর খরচের হিসাব একসঙ্গে রাখলে কোথাও সেটা সমানও থাকছে না, মাইনাসে নেমে আসছে। অথচ পত্রিকার পাতায় আজকাল যেসব চুরি বা দুর্নীতির সংবাদ আসে সেগুলো কোনোটাই কোটি কোটি টাকার নিচে নয়। আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো যেন কেবল রূপকথার কাব্য শোনার মতো লাগে।

আবারও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ইতোমধ্যেই ভোগান্তির মাত্রা আরেকদফা যুক্ত হয়েছে আমাদের জীবনে। পরিবহণ মালিকরা দাবি করছেন বাস ভাড়া সমন্বয় করতে হবে দ্রুত। বাসাভাড়া বাড়তি মানেই আমার আপনার পকেটের ওপর আরেক দফা চাপ বাড়লো। এর প্রভাব সরাসরি বাজারে। বাজারের চাপ মানেই আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের মানসিক চাপ বাড়া। সমন্বয় করতে করতে আর কোথায় করবো জানি না।

আন্তর্জাতিক ইস্যু আছে জানি কিন্তু সেই রাজনীতি তো আমার মাথায় কাজ করবে না। পেটে ভাত থাকলেই না রাজনীতি বুঝবো আমি। যদি তিনবেলা খাওয়ার খরচে টান পড়ে যায় তাহলে আপনার হাজার যুক্তিও আমার কানে পৌঁছাবে না। সরকার সবাইকে সঞ্চয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান করেছে। যৌক্তিক আহ্বান। সেই আহ্বানে আমরা সবাই সাড়া দিতে প্রস্তুত। অপরদিকে যখন দেখি সরকারি লোকজনের বিলাসবহুল জীবনের সংবাদ তখন কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে যায়। দৈনন্দিন খরচে সাশ্রয়ী হবো আমি অথচ আয়েশী জীবন কাটাবে সরকারি আমলারা– সেটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে? বরং সরকারি কর্মকর্তাদের কোন খাতে কতটা খরচ কমানো হলো এবং কোথায় কোথায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো সেই হিসাবটা পরিষ্কার থাকা দরকার সবার আগে। সাধারণ মানুষতো কেবল মাসিক বেতনটাই পায় অথচ সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনের চেয়েও বেশি পায় আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটা পরিবার বা প্রতিষ্ঠানে দুইরকম খরচ থাকে। একটা বেসিক বা মৌলিক খরচ আর কিছু থাকে ‘Good To have’ যা আসলে করলেও চলে, না করলেও চলে। আমাদের সরকারি অফিস বা কর্মকর্তাদের জীবনেও কি অতিরিক্ত খরচের তালিকা করা হয়েছে? না হলে কেন করা হয়নি সেই জবাবদিহিতার কী হবে? যে কারণেই আপনি দাম বাড়ান না কেন তার পেছনে একটা শক্তিশালী যুক্তি ও সেই খরচে কার কেমন অংশগ্রহণ থাকবে সেই হিসাবটা করে নিতে হবে। শ্রমজীবীদের কথা নাইবা বললাম।

এই যে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব সেটা কি সবার জন্য সমান প্রভাব নিয়ে এসেছে? এখানেও বৈষম্য প্রতিয়মান। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আসলে এইখানেই কাজ করা দরকার বেশি। মুখস্থ কিছু বলে সমাধান পাওয়া যাবে না। আমার মতো সাধারণ মানুষদের মাথায় চাপ বাড়িয়ে দিনশেষে কার লাভ হচ্ছে সেই হিসাবটা যেমন আপনাদের করা উচিত ঠিক তেমনই সাধারণ জনগণও করবে। কারণ আমাদের তো দামের চাপে দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমরা লড়াকু জাতি তাই, দমটা ফুরানোর আগে অবশ্যই একটা লাফ অন্তত দিতে চাই। সেই লাফটা কে কখন কীভাবে দেবে সেটাও কিন্তু হিসাবের মধ্যেই রাখা লাগবে।

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ