X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেন্টমার্টিনকে ধ্বংস করছে কারা?

ড. জেবউননেছা
১৭ নভেম্বর ২০২২, ২১:০৪আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২২, ২১:০৪

কয়েক দিন আগে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দ্বীপে পৌঁছে চোখে পড়লো জেটি ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। তবে প্রতিবছরের মতো পর্যটকদের জাহাজ এবার বন্ধ থাকায় কক্সবাজার থেকে এখন একটি জাহাজই আসা-যাওয়া করে। ঘাটে তাই পর্যটকদের লাগেজ বহন করার জন্য নেই দ্বীপের বাচ্চাদের হুড়োহুড়ি। প্রতিবারের মতো জেটি পার হয়ে ভ্যানগাড়ি চোখে পড়লো না। অটোরিকশা চোখে পড়লো। আমার গন্তব্য পূর্ব বিচের কোরাল ভিউ রিসোর্ট। রিসোর্টে যাওয়ার পথে ভাঙা রাস্তা দেখে অটোচালককে জিজ্ঞেস করলাম, রাস্তা এত ভাঙা কেন? তিনি জানালেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ভেঙেছে। রিসোর্টের সামনের রাস্তা ভাঙা, তাই একটু দূরে নেমেই রিসোর্টে হেঁটে গেলাম।

তার পরদিন সকালে পূর্ব বিচ থেকে হাঁটা শুরু করলাম। পথে দেখা হলো মিয়ানমার থেকে আগত দুজন রোহিঙ্গার সাথে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো কাজের উদ্দেশ্যে এসেছে টেকনাফ থেকে। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর  প্রতি কৃতজ্ঞ। কেননা, তাদের তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, শত শত মা-বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে পুনরায় হাঁটা শুরু করি। চোখে পড়ে সাগর পাড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে আছে কেয়া গাছ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানারকম বর্জ্য। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম সেন্টমার্টিনের মেরিন পার্কে। মেরিন পার্ক তালাবদ্ধ ছিল বিধায় ভেতরে কেউ আছেন বললে একজন এগিয়ে আসেন। বললাম, পার্কটি ঘুরে দেখতে চাই। তিনি প্রবেশ করতে দিলেন। মেরিন পার্কের বাম পাশে ওয়াচ টাওয়ার, যার টিনগুলো ভেঙে গেছে। একটি চৌবাচ্চা আছে, যেখানে কচ্ছপ ছাড়া হয়। যদিও এখন আর তেমন কচ্ছপ ছাড়া হয় না।  একটি সামুদ্রিক জাদুঘর রয়েছে, কিন্তু তালাবদ্ধ। আমি দেখতে চাইলাম। তালা খুলে দেওয়ার পর দেখি খুব সুন্দর পরিপাটি জাদুঘর। নানা প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী রয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘর থেকে বেরিয়ে চোখ পড়লো মেরিন পার্কের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া এবং পিলার  ভেঙে পড়ে আছে। পুরো মেরিন পার্ক ঝোপঝাড়ে ভর্তি। জানতে চাইলে আমাকে বলা হয়, সিত্রাংয়ের কারণে পিলার ভেঙে গেছে। আর ঘাস কাটার জন্য যে খরচ হবে সে খরচ করার মতো অর্থ নেই আমাদের। জানতে চাইলাম, এর দায়িত্বে যিনি আছেন তার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। তিনি বললেন, মুঠোফোনে কথা বলতে হবে। কারণ, তিনি কক্সবাজারে থাকেন। মাঝে মাঝে আসেন। তাকে ফোন করলাম। তিনি তার নানা সীমাবদ্ধতার কথা বললেন। কিছু বললেন, কিছু বলতে চাইলেন না। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বরে কথা বললাম সেন্টমার্টিনের পরিবেশ প্রতিবেশ নিয়ে। তার কাছ থেকে আমি এমন কোনও সদুত্তর পাইনি। আমি তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি। কথা প্রসঙ্গে বললেন, তিনি এখনও সেন্টমার্টিন যাননি। তবে তিনি জানতে চেয়েছেন, আমি কেমন সেন্টমার্টিন দেখতে চাই তার একটি কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার জন্য। যাহোক, রিসোর্টে ফিরে কথা বলি জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু স্বপ্ন এবং সীমাবদ্ধতার কথা। অতঃপর মুঠোফোনে সেন্টমার্টিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা এবং পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বীপের চারদিকে ময়লা, অবৈধ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হলো। এরপর সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলাম ক্ষয়ে যাওয়া সেন্টমার্টিনকে নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? তিনি জানান, তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই, তিনি  প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল।

দ্বীপের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে উঠেছে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভবন। দ্বীপের অধিবাসীরা দোষারোপ করেন প্রশাসনের। তাদের অভিযোগ, কেউ তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না এবং যদি করতো তাহলে এত ভবন গড়ে উঠতো না। দ্বীপের অধিবাসীরা জানান, সেন্টমার্টিনের গলাচিপা এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বিচ থেকে চুরি করে নেওয়া পাথর ভাঙা হয়, যা সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট স্থাপনায় ইটের খোয়ার বদলে ব্যবহার করা হয়। দ্বীপবাসী অসচেতনভাবে এটি তাদের স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করেছে। অথচ কেউ দেখার নেই।

সাগর পাড়ে চোখে পড়ে ক্যামেরা হাতে ফটোগ্রাফারদের। জানতে পারি প্রায় ২০০-এর বেশি ক্যামেরাম্যান আছে এই দ্বীপে। আগের মতো পর্যটক আসে না বলে তাদের উপার্জনও কমে গেছে এবং তারা তাদের অভিভাবকদের মতো মাছ শিকারেও পারদর্শী নয়। দ্বীপে অটোচালকও আছে দুই শতাধিক। তাদেরও পর্যটকের অভাবে উপার্জন কমেছে। তারাও মাছ চাষে অভ্যস্ত নয়। সবকিছু মিলিয়ে যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা দ্বীপটিতে।

এদিকে ঘাটের দোকানগুলোতে মূল্য তদারকি  করার বিষয়টি না থাকার ফলে পর্যটকদের চড়ামূল্যে মাছ ক্রয় করে খেতে হয়। তাছাড়া ঘাটেও খাস জমিতে গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো দোকান।

এবার চারদিন থেকেছি সেন্টমার্টিনে, একদিনও পুলিশি টহল চোখে পড়েনি।  অথচ একটি তদন্ত কেন্দ্র  আছে সেন্টমার্টিনে। যে কয়দিন ছিলাম সেন্টমার্টিন সে কয়দিন পূর্ণিমা ছিল বলে পূর্ব বিচের সাগর পাড়ের ময়লাগুলোও যেন চাঁদের আলোতে দেখা যাচ্ছিল।

গত ১৯ বছর ধরে আমি নিয়মিত সেন্টমার্টিনে যাই। ১৯ বছর আগের সেন্টমার্টিন আর এখনকার সেন্টমার্টিনে যেন  আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যত্রতত্র ভবন, কেয়া ফলের গাছ নিঃশেষ হওয়া, নারকেল গাছের নারকেল কমে যাওয়া।  প্রতিটি নারকেলের মূল্য ১৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়া থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিনকে একটি ভাগাড় মনে হয়েছে এবার।

ভ্রমণপিয়াসী হিসেবে দেশের বাইরে যাওয়া হয়। সেখানকার দ্বীপগুলো এত নোংরা  এবং অগোছালো নয়। ঢাকায় ফিরে বারবার মনে হচ্ছে সেন্টমার্টিন যদি এমন হতো। দ্বীপের জেটি থেকে দেখা যাবে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘সেন্টমার্টিন’। ঘাটের কাছে খাসজমিতে স্থাপিত অবৈধ দোকানগুলো থাকবে না, থাকবে ঝাউগাছ এবং কেয়া গাছের সমাহার। প্রতিটি দোকানে থাকবে খাবারের মূল্য তালিকা। এরপর সাগরপাড়ে মালদ্বীপের মাফুশি আইল্যান্ডের মতো পাথর দিয়ে উচু করে বাঁধ দেওয়া হবে। যেখানে ঢেউ আছড়ে পড়বে এবং পাড়ে ঢেউ আসতে বাধা পড়বে। পাড় ভাঙবে না। সেই পাথরের ওপরে রোপণ করা হবে  নানা রকমের গাছ। পর্যটকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন। দ্বীপের চারদিকে কেয়া ফলের বেষ্টনী থাকবে। রাস্তাগুলো টেকসই হবে এবং দ্বীপের চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করে ওয়াকওয়ে হবে। যেটি বর্তমান বাস্তবতায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা, প্রতি মুহূর্তে দ্বীপের আয়তন কমছে। যারা বিচ থেকে পাথর তুলে পাথর ভাঙছে এবং সেই পাথরভাঙা ভবন নির্মাণের কাজে লাগাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। নিয়মিত দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহল থাকবে। রাতে বাতি জ্বালানো নিষেধ যেহেতু, সেহেতু নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে অল্প আলোর তৈরি সোডিয়াম বাতি জ্বলবে।

সেন্টমার্টিন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল হবে। কেননা, দ্বীপবাসী জানিয়েছেন, সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সাবমেরিন ক্যাবলের সব প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এখন তারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ সুবিধা নিচ্ছেন পাঁচগুণ দামে। যেখানে সরকারি সর্বনিম্ন ইউনিট আছে সাত টাকা, সেখানে  সারা বছর দ্বীপে নেওয়া হয় আবাসিকে ৪৮ টাকা, বাণিজ্যিকে ৬৬ টাকা। প্রতি মাসে আলাদা করে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয় ৫০০ টাকা। সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলে দ্বীপবাসী নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাবেন এবং সেই সঙ্গে জেনারেটর ব্যবহার বন্ধ হবে। জেনারেটরের শব্দ বন্ধ হলে  দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কাজে লাগবে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়া যে রিসোর্টগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে এবং আইনের আওতায় তাদের আনতে হবে। যাদের গাফিলতিতে এমন করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ভাঙা রাস্তাগুলো মেরামত হবে। তবে যতটুকু শুনেছি রাস্তা মেরামতের লক্ষ্যে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার তার কার্যাদেশ পেয়েছে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছেন না। দ্বীপবাসীর অভিযোগ, দ্বীপের উন্নয়নে যতটুকু বরাদ্দ আছে তার চেয়ে বেশি বরাদ্দ আনা হয় এবং অতিরিক্ত বরাদ্দ রিসোর্টের মালিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। মেরিন পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মেরিন পার্কের কক্ষগুলো পর্যটকদের জন্য ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মেরিন পার্কের ওয়াচটাওয়ার সংস্কার করা হবে। মেরিন পার্কের জাদুঘরের প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মেরিন পার্কের ভেতরে খালি স্থানে বাচ্চাদের জন্য পার্ক তৈরি করা হবে। দ্বীপে দায়িত্বরত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অবস্থান নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। দ্বীপকে যারা ব্যবসার মূলধন হিসেবে বেছে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হবে।

দ্বীপবাসীর জন্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে, সমুদ্রের পানি পরিশোধন করে পানীয় জলের সরবরাহ করা হবে। এতে টেকনাফ প্লাস্টিকের বোতলে মিনারেল ওয়াটার আনা বন্ধ হবে। সেক্ষেত্রে দ্বীপে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার কমে যাবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। দ্বীপবাসী অভিযোগ করেছেন, সেখানে কেউ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুসরণ করেন না। এতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। জানা যায়, বর্জ্যতে একপ্রকার মেডিসিন দিয়ে মিশিয়ে পাইপের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে সাগরে ফেলা হয়। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন এবং সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ৮০ কিলোমিটার আসা যাওয়া দূরত্ব হলেও গত বছর পর্যটকদের কাছে সর্বনিম্ন ভাড়া রাখা হয়েছে ৭০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৫০০ টাকা। এতে সাধারণ পর্যটকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ বরিশাল থেকে ঢাকার নৌপথের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের বেশি। অথচ সর্বনিম্ন ডেকের ভাড়া তিনশ’  থেকে চারশ’ টাকা। আমি নিজেও কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন গেছি চড়ামূল্যের টিকিট কিনে। সে কারণে ভ্রমণ ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় জনগণ রিসোর্ট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় তারা যত্রতত্র নিজের জমিতে রিসোর্ট নির্মাণ করছে অর্থ উপার্জনের জন্য। তাই তাদেরও রিসোর্ট ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষিত হতে হবে।

গত ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রদত্ত ১৩ দফা নির্দেশনা মেনে চলবে সবাই। দিবানিশি এমন স্বপ্নই দেখছি দ্বীপটিকে নিয়ে।

তবে দুঃখের বিষয়, ১৩ দফার একটি নির্দেশনা ছিল দ্বীপকে ঝড় ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ ও কেয়াবেষ্টনী বৃক্ষ রোপণ করা, যা এবারের বর্ষাকালে রোপণ করা হয়নি। প্রকৃতি যেভাবে সেন্টমার্টিনকে সাজিয়েছে, সেভাবেই সেন্টমার্টিন প্রকৃতির করুণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটকদের জাহাজ চালু থাকলে প্রায় ১৮ হাজার পর্যটক প্রতিদিন দ্বীপে বেড়াতে যান। এরমধ্যে অর্ধেক পর্যটক দিনেই ফিরে যান। বাকিরা রাতে থাকেন। এত সুন্দর প্রবাল দ্বীপে পর্যটক তো যাবেনই। কিন্তু এই এতটুকু দ্বীপ কতটুকু পর্যটক ধারণ করতে পারবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। যারা কখনোই সেন্টমার্টিন যাননি, তারা হয়তো এখন এটিকে দেখে বিমোহিত হবেন। আর আমরা যারা বছরের পর বছর নির্মল হাওয়া উপভোগ করতে সেন্টমার্টিন যাই, আমাদের কাছে সেন্টমার্টিনের বাতাস এখন ভারী লাগে। দ্বীপটিকে বড্ড অসুখী মনে হয়। নানা ধরনের ক্ষত এখন এই দ্বীপে। এই ক্ষত সারতে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্তাব্যক্তিকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, জবাবদিহি এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

দ্বীপের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় বাড়াতে হবে। প্রায় ১২ জন কর্তাব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে ভীষণ সমন্বয়হীনতা। মনে হয়েছে সবাই যেন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ভীষণ। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন। যারা দ্বীপ ধ্বংস করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত তারা মানসিকভাবে তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বুঝে নিয়েছে, কীভাবে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া রিসোর্ট নির্মাণ হয় এবং নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ট্রলারে টেকনাফ থেকে ভবন নির্মাণের সামগ্রী আসে।

সুতরাং যার যার দায়িত্ব সেটি পালন করলে হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরে পাবেন কর্তাব্যক্তিরা। নয়তো যারা দ্বীপটিকে ক্ষতি করে  নিজের কথা ভাবছেন, প্রকৃতিই হয়তো তাদের বিচারের ভার নেবে একদিন। কারণ, প্রকৃতি জানে কী করে প্রতিশোধ নিতে হয়। তবে আশার কথা, দ্বীপে এখন বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব নান্দনিক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। অনিন্দ্যসুন্দর বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দ্বীপটি মারা গেলে কেউ সেখানে যাবেন না। সেন্টমার্টিন আমাদের ভালোবাসার এবং আবেগের দ্বীপ। এই দ্বীপ যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত থাকুক, এটাই প্রার্থনা।

 

লেখক: অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ