X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছিয়ে কেন?

সামিয়া আনোয়ার রাফা
০৮ মার্চ ২০২৩, ১৬:১১আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩, ১৬:১১

কলসি কাঁকে একজন নারী গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে চলেছে– এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণ একটি দৃশ্য। দেশের অধিকাংশ পরিবারে পানি সংগ্রহের ভার পরিবারের নারী বা মেয়েদের ওপরই এসে পড়ে। মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ অনুযায়ী, পানি সংগ্রহের কাজটি ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা এবং মেয়েরাই করে থাকে। এই পানি সংগ্রহের পেছনে ব্যয় হচ্ছে তাদের মূল্যবান সময়, যা মেয়েরা শিক্ষার পেছনে এবং নারীরা আর্থিক উপার্জনে, দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে, অথবা পরিবারের সঙ্গে বিশ্রাম ও বিনোদনের পেছনে ব্যয় করতে পারতো। পানি সংগ্রহের মতো অত্যাবশ্যকীয় কাজ নারীদের অনেকাংশকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে, এবং সৃষ্টি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য।

বৈষম্যের এই গল্প বিভিন্ন খাতে বিরাজমান, আর আজকের এই লেখাটি পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) বিষয়ে নারীদের অংশগ্রহণের বৈষম্যকে কেন্দ্র করে। দেশের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, ৮৫ শতাংশ পরিবার পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং শুধু ১৫ শতাংশ পরিবারের নেতৃত্বে আছেন নারীরা। এই তথ্য যখন পরিবারের মধ্যেই নারী নেতৃত্বের ভারসাম্যহীনতাকে তুলে ধরে, তখন সমগ্র দেশের প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অবস্থান আরও নড়বড়ে।

বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারীদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ২০ শতাংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কোনও পদেই নারীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। ২০২২ সালে সৈয়দপুর ও মেহেরপুর পৌরসভায় পরিচালিত ‘শহরের স্যানিটেশন ও ক্ষমতায়ন পরিমাপক’ অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাত্র ৪ শতাংশ নারী নিজ লোকালয়ের স্যানিটেশন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে। এই অবস্থা থেকে নারীদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিতকরণে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে, সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে অবকাঠামো পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন সব স্তরে– পরিবার থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার ৫০.৫ শতাংশ যেখানে নারী, সেখানে তাদের বাদ রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যকর হবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদে যখন নারীরা বসবেন, নিজেদের প্রয়োজন অনুধাবন করে ব্যবহার উপযোগী অবকাঠামো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। সম্ভব হবে সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে নীতি প্রণয়ন।

এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি সুযোগ পানি ও স্যানিটেশন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অপরিহার্য ভূমিকাকে তুলে ধরার। পানির প্রয়োজনীয়তা যেমন নারী-পুরুষ সবার, এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার দায়িত্বও নারী ও পুরুষ উভয়ের। নারীদের সমতা থেকে এগিয়ে এসে, বর্তমান সময় ন্যায্যতা নিয়ে কথা বলার।

এই ধারাবাহিকতায় একটি ছোট্ট প্রয়াস যা ওয়াটারএইড এবং সুইস ওয়াটার পার্টনারশিপ ইয়ুথ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ শুরু করেছে ‘ওয়াটারওমেন’ (WaterWomen)। এটি একটি নারীদের দ্বারা এবং নারীদের জন্যে তৈরি নেটওয়ার্ক, যা ডিসেম্বর ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করে। উদ্যোগটির লক্ষ্য হলো নারী পেশাজীবীদের একত্রিত করার পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নেতৃত্বদানের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং সর্বোপরি সেক্টরে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যার মধ্য দিয়ে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বদানকারী নারী থেকে বিশ্বব্যাপী নারীদের নেতৃত্বের যাত্রা শুরু হবে।

সহ-লেখক: মো. তাহমিদুল ইসলাম এবং হাসিন জাহান।

লেখকগণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড -এ কর্মরত

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
সর্বশেষসর্বাধিক