X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘হট’ হওয়াই ভালো!

আহসান কবির
২৮ মে ২০২৩, ১৯:৫৮আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ২১:০৬

‘জীবনে প্রেম ছাড়াও বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু এই গরমে ফ্যান ছাড়া বাঁচা অসম্ভব’-ফেসবুকীয় প্রবাদ।

এক বয়স্ক লোকের ঠান্ডা লেগেছে। সে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ সে একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের ডাকে পুলিশ এসে ওই লোকের কাছে জানতে চাইলো– আপনি এই কাজটা কেন করলেন? বয়স্ক ভদ্রলোক উত্তর দিলেন–দেখুন ওই মেয়েটার টি-শার্টের পেছনে লেখা– ‘আই অ্যাম ঠু হট!’, আমি ঠান্ডা দূর করে একটু গরম হতে চেয়েছিলাম।

অনেকে রসিকতা করে বলেন, খাবার কেক আর সিনেমার নায়িকা নাকি ‘হট’-ই ভালো। শীত, বর্ষা কিংবা গ্রীষ্ম; সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের অনেক সময় পোশাক দেখে মনে হতে পারে তাদের পুরো কাপড় কেনার টাকা নেই। কয়েক বছর ধরে ঢাকা শহরে মাঝে মাঝে দেখা মেলে ‘মানবতার দেয়ালের’। বাড়তি থাকলে সেখানে কেউ কেউ কাপড়-চোপড় রেখে আসেন। যদি কারও প্রয়োজন হয় এখান থেকে কাপড় নিয়ে পরতে পারে। নায়ক-নায়িকারাও প্রয়োজন হলে এখান থেকে কাপড় নিয়ে পরতে পারেন!

বাংলাদেশে ‘গরমের ওম’ কিন্তু অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে! একদণ্ড শান্তি মেলে না তাতে। যারা সবসময়ে পজিটিভ চিন্তা করেন তারা অবশ্য বলেন যে গরমে অভ্যস্ত হওয়া ভালো। অভ্যাস হয়ে গেলে নাকি নরকেও কষ্ট কম মনে হবে। মজা করে কেউ কেউ বলেন– ‘গরম, দয়া করে কাউকে ভালোবেসো না, ভালোবাসায় জোর দেখাতে এসো না। জানো তো জোর করে ভালোবাসা হয় না!’

প্রকৃতি ও আবহাওয়ার হাত ধরে গরম এমনি এমনি আসে, জোর করে আসে না। পরিস্থিতির কারণে গরমকে আরও গরম মনে হয়। বাংলাদেশে এখন মরুভূমির গরমের ছোঁয়া সহজেই পাওয়া যায়। ধরুন ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আপনি ফার্মগেটের জ্যামে আটকা পড়েছেন। পাবলিক বাসে ‘এসি’ থাকে না। আকাশ থেকে নেমে আসা গরমের ভাপ, বাসভর্তি মানুষের শরীরের তাপ আর রাস্তায় থেমে থাকা বাহনের ইঞ্জিনের উত্তাপ আপনাকে ‘মরুভূমি পাগল’ করে তুলবে! ব্রিটিশরা নাকি একসময় আয়োজন করে গাছ লাগিয়েছিল, এখন নাকি খুব সামান্যতে আমরা গাছ কেটে গরম আনি! সাহারা মরুভূমির গড় তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সাহারাতে গাছপালা এবং বাতাসের আর্দ্রতা কম ও বালুরস্তূপের তাপের (বালু গরম হয় খুব তাড়াতাড়ি) কারণে ‘ফিল লাইক’ বা গরম অনুভবের ব্যাপারটা একটু বেশি। গত এক দশক ধরে (২০১৩-২০২৩) বাংলাদেশে এপ্রিল, মে, জুন আর জুলাই মাসে গড়ে ৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রার দেখা মেলে, যার মানে বাংলাদেশেও আপনি মরুভূমির স্বাদ পাওয়া শুরু করেছেন। জীবনানন্দকে বনলতা সেন কোন ঋতুতে বেশি শান্তি দিতেন? শীত, বর্ষা নাকি গরমে? গরমেরও কিন্তু পর্যায় আছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে শুনুন।

এক লোক হোটেলে গিয়ে হোটেল বয়ের কাছে জানতে চাইলো-

-গরম কী আছে?

-(বয়) স্যার ভাত বিরানি আর খিচুড়ি।

-এর চেয়ে গরম?

-পুরি কিংবা মোগলাই।

-না না। এর চেয়েও গরম কিছু?

-চা কিংবা কফি স্যার?

-আরে না না। আরও গরম কিছু নাই?

-(বয় খানিক রেগে) আছে। চুলার আগুনটাই আছে!

-ধন্যবাদ। এটাই জানতে চেয়েছিলাম। আমার কাছে লাইটার বা ম্যাচ নাই। সিগারেট ধরাতে পারছি না। প্রয়োজনে চুলা থেকে একটু আগুন নিয়ে আসো!

গাছ কেটে ফেলা, সমুদ্র জলের স্তর উপরে উঠে আসা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মাটির নিচে জলের স্তর আরও নিচে নেমে যাওয়া, নদী শাসনসহ বিবিধ কারণে প্রকৃতি বা আবহাওয়া নিজেই হয়তো গরম হয়ে গেছে। আমাদের জন্য তাই তাদের নিত্য গরম উপহার। তবু গরমের কিছু পরোক্ষ উপহার আছে যা আমরা ভাবি না। নিজের পুরোনো লেখা থেকে তার সামান্য বিবরণ-

এক. লিবিয়ার ঘাদাম হচ্ছে মরুভূমিবেষ্টিত এক দুর্গম এলাকা। বেদুইনরা বাস করে এখানে। তাদের ঘর বানানোর পদ্ধতিটা দারুণ। মাটি ও বালির ছাদের নিচে তারা একসঙ্গে অনেকগুলো ঘর বানায়, যাতে গরমটা কম লাগে। মাটি, চুন আর গাছের গুঁড়ি দিয়ে বানানো এসব ঘরকে ‘ঐতিহ্য বা হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। বাংলাদেশে এখন থেকেই বাসাবাড়ি বানানোর এই প্র্যাকটিসটা শুরু করা উচিত।

দুই. এশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের একটি ইসরাইলের তিরাত জভি। এখানে মাত্র ৬৫০ জন মানুষের বাস কিন্তু খেজুর গাছের সংখ্যা বিশ হাজার। খেজুর উৎপাদন আর রফতানির জন্য তিরাত জভি বিখ্যাত। মরুভূমিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খেজুর জন্মে।

তিন. তিউনিসিয়ার মরুভূমি অঞ্চল কেবিলিও খেজুরের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। তবে কেবিলি মরুভূমিতে গরম বাড়লে এখানকার লোকজন এলাকা ছেড়ে পালায়। কারণ, গরমের চোট এত বেশি যে মুরগির পাড়া ডিম সেদ্ধ হয়ে যায়। সুদানের হালফাতেও একই অবস্থা। তাপমাত্রার গড় ৩৯ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মোমবাতি কিংবা চকলেট গলে তরল হয়ে যায়।

বাংলাদেশে গরমের পরোক্ষ উপহারগুলো অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসা যায়। যেমন-

এক. যৌবন ধরে রাখা কিংবা ‘কোল্ড স্টোরেজ’র মতো গরম ধরে রাখার ব্যবস্থা করা গেলে দারুণ হবে। শীতকালে উষ্ণতা পাওয়া যাবে। পাঁচ দশ টাকা দিয়ে হাতপাখা কিনে রাখতে পারেন। হাতপাখা সামনে রেখে নিজেই নড়াচড়া করুন। বাতাস পেয়ে যাবেন। গান ধরুন- তোমার হাতপাখার বাতাসে...।

দুই. জ্বালানির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে গরম। কোনও না কোনোভাবে এই গরম সংরক্ষণ করা গেলে এটা দিয়ে ডিম, ভাত বা আলু সেদ্ধ করা যেতে পারে। সিটি করপোরেশনের ‘হিট অফিসার’রা এই গরমের হিসাব রাখবেন, স্বল্পমূল্যে টিসিবি এটা সাধারণের মাঝে বিক্রিও করতে পারবে!

মনে রাখবেন পকেট গরম মানে মন নরম, প্রেমে উৎসুক।  দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা বাজারে যতই আগুন লাগুক, পকেট গরম থাকলে বাজার করায় ওম শান্তি। ক্ষমতার চারপাশে যেমন তেলের অভাব নাই, ক্ষমতার গরম যেমন খুব উপভোগ্য, তেমনি পকেট গরম রাখার চেষ্টা করুন! আরে ভাই আশপাশে তাকান, পকেট গরমের উপায় পেয়ে যাবেন!

তিন. আর কিছুতেই কিছু না হলে গরমটাকে কাজের সময় থেকে আলাদা করে ফেলতে পারেন। যেমন, অফিস হবে সকাল ছয়টা থেকে দশটা। এরপর বিকাল পাঁচটা থেকে দশটা। একঘণ্টা কর্ম সময় বাড়তি পাওয়া যাবে। মাঝখানের সময়টাতে মানুষ বাসায় থাকবে। এছাড়া ‘নাইট শিফটে’র কথা ভাবা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অফিস শুরু হবে বিকাল চারটায়। শেষ হবে রাত বারোটায়। আগে কর্মস্থলে যেমন ‘ লাঞ্চ টাইম’ ছিল তেমন থাকবে ডিনার টাইম। কারও কারও ধারণা এতে বিদ্যুতের ব্যবহার ও জনসংখ্যা (অফিস শেষে অন্য কিছু নয়, ক্লান্তির ঘুম!) কমে আসতে পারে!

কথায় আছে যে দেশে যাবেন সেখানকার অধিবাসীদের মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন! গরম আমাদের কাছে এসেছে। তাকে আমরা অন্যান্য দেশের মতো ধরে রাখার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে উপভোগ করি। গরম যখন ঝড় নিয়ে আসে, যখন প্রচণ্ড নিম্নচাপ হয়, তখন প্রয়োজনে সাগরপাড়ে গিয়ে ঝড় উপভোগ করুন, ঝড়ের সঙ্গে সেলফি তুলুন। একদিন গরমও আসবে সেলফি তুলতে।

প্রাণ খুলে হাসুন। অনেক দিন বাঁচুন। পকেট গরম থাকুক আপনার। দয়া করে মাথা গরম করবেন না। মাথা গরম করলেন তো হারলেন!

লেখক: রম্যলেখক

 

/ইউএস/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ