X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কি দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়ন আনতে পারবে?

স ম মাহবুবুল আলম
১৮ জুন ২০২৩, ১৮:০৯আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩, ১৮:২০

শামসুর রাহমানের মতো বলতে হয় ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’। স্বপ্ন ‘দ্যাখে’ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। সেই পথরেখা ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয় বর্তমানের ২ হাজার ৮২৪ ডলার থেকে ১৩ হাজার ডলারে উন্নীত হবে সেই সময়ে। কিছু মানুষ নিশ্চয় সেদিন উন্নত চিকিৎসা ক্রয় করার আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করবে। তবে স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান স্বতঃস্ফূর্ত ও বল্গাহীন বিকাশের ধারা জানাচ্ছে, সেদিনও বেশিরভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায়  প্রবেশের সুযোগ সীমিত থাকবে, সেদিনও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধার জন্য মানুষের হাহাকার থাকবে। অত দূরে নয়, আগামী পাঁচ বছরে কি কোনও দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা সম্ভব? আপনি কোথায় বাধা আছে মনে করেন?

আমার তালিকায় প্রধান তিনটি বাধা–

১। স্বাস্থ্য সরকারের অগ্রাধিকার খাত নয়।

২। স্বাস্থ্যসেবা নেতৃত্ব ও জাতীয় নেতৃত্বের কাছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের পথ স্বচ্ছ নয়। অধিকন্তু স্বাস্থ্য নেতৃত্ব ও জাতীয় নেতৃত্বের মধ্যে উন্নয়নের পথ নিয়ে কোনও স্পষ্ট ঐকমত্য নেই।

৩। স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় বড় বিনিয়োগে অর্থ সংকট।

আমরা অর্থ সংকট দিয়ে কথা শুরু করি। বাংলাদেশের মতো একটি নিম্ন আয়ের দেশের সরকারের কাছে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না উন্নত দেশসমূহের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের) মতো জিডিপির ১০ শতাংশ অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ৫ হাজার ডলারেরও অধিক ব্যয় করতে পারবে। তবে আমরা তো অবশ্যই থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো জিডিপি’র ৩ শতাংশ ব্যয় করার সক্ষমতা রাখি। সরকার যদি স্বাস্থ্যসেবায় এই পরিমাণ বাজেটও বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়, তাহলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অত্যন্ত অপ্রতুল থাকবে। তাই প্রশ্ন আসে, সবচেয়ে কার্যকর পথ নির্ণয়ের। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী, কার্যকর পথকে অগ্রাধিকারে নিতে ভুল করার সুযোগ নেই।

আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কাঠামোর বিন্যাসে ও বিভিন্ন সেবা স্তরের গতানুগতিক সেবা পদ্ধতিতে অতিমাত্রায় অভ্যস্ত। তাই এই কাঠামো বিন্যাসের ভেতর অনেক অদক্ষতা ও অপচয়ের জায়গা তৈরি হয়েছে, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে কয়েকটি পুনর্বিন্যাস এ ক্ষেত্রে অদক্ষতা দূর করে কম ব্যয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এনে দিতে পারে।

সর্বপ্রথম প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সর্ব নিম্নপর্যায়ের ঘাটতি দূর করে ওপরে উঠতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হলো– গ্রামীণ স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে মাঠকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।  ৪৪ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কাজ করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখার আরও ১৫ হাজার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মাঠ কর্মীদের কাজ তদারক করছে। এছাড়া প্রায় ৭ হাজার কমিউনিটি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজ করছেন দুই অধিদফতরের অধীনে।

গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরুতে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ তার গবেষণা ‘টেল অব টু উইংগে’ দেখিয়েছেন– স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই শাখা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জনশক্তি মাঠ পর্যায়ে একই কাজের পুনরাবৃত্তিতে, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের টানাপোড়নে বছরের পর বছর ধরে বিপুল জনবলের শ্রমঘণ্টা ও সম্পদের অপচয় ঘটাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতি ১০ হাজার জনে স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন ৪৪.৫ জন, বর্তমানে বাংলাদেশ তা আছে ৭.৪ জন। স্বাস্থ্যসেবায় এই তীব্র জনসংকটের মধ্যেও ভয়ংকর জনশক্তির কী অপচয়। চার দশক আগে তা চিহ্নিত করা হলেও সরকারি কয়েকটি উঁচু পদ হারানোর আশঙ্কা এই দুই বিভাগকে একীভূত করতে বাধা হয়ে আছে। এই বাধা দূর করতে কোনও উদ্যোগ না নেওয়া শুধু বেদনাদায়ক নয়, গুরুতর অপরাধ।

২০০০ সালে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক– গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত অনন্য সংযোজন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেলে তা ২০০৯ সালে  আবারও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। প্রথমে প্রকল্প হিসেবে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৪ হাজারেরও বেশি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সমসংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেবার পরিধি বাড়াতে দুই কক্ষের স্থলে চার কক্ষবিশিষ্ট নতুন নকশার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী বাবদ বাৎসরিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাস্তবে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকই রুগ্ন। জরাজীর্ণ ভবন, ক্লিনিকে ওষুধের সংকট, বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকে না, থাকে না নিয়মিত পানির সরবরাহ, কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট। অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকেই সিএইচসিপি এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব।  জনবল সংকট, তদারকির অভাব ও দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকের অনন্য সংযোজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল। তাই এ প্রত্যাশা খুবই স্বাভাবিক যে এই প্রকল্প সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে ও বিশেষ যত্নে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, কমিউনিটি ক্লিনিককে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার শক্তিশালী বুনিয়াদ হিসাবে গড়ে তুলে নতুন উচ্চতায় নিতে স্বাস্থ্য নেতৃত্বের সেই উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বা উদ্ভাবনী পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

কমিউনিটি ক্লিনিককে স্বাস্থ্যসেবার মূলধারার সঙ্গে একীভূত করতে হবে। সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত দুই অধিদফতরে বিভক্ত সত্তর ৭০ হাজার জনবলকে একীভূত করতে আর বিলম্ব নয়। তাদের পুনঃপ্রশিক্ষণ দিয়ে ও দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করে প্রকৃত ক্ষমতায়ন করতে হবে। একজন কমিউনিটি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সাকমো) বা সমপ্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্সকে কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব দিয়ে জনবল সজ্জিত করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৪ ঘণ্টা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় জনবল দিতে হবে। একজন মিডওয়াইফ পদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টিসেবা, টিকাদান,  সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রদানকৃত সব স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রেখে পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্টিং, অসংক্রামক রোগীদের উচ্চ স্তরে প্রাপ্ত চিকিৎসা অব্যাহত রাখা ও গর্ভকালীন সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে।

শক্তিশালী, পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলতে পারলেই কেবল কম খরচে জনগণের সহজ স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও উন্নত স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্য অর্জিত হবে। সমতার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে।

উপজেলাভিত্তিক ছোট ছোট চিকিৎসকদের দল কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহের চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কার্যক্রম একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখবে এবং রেফারেল ব্যবস্থার যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় স্বাস্থ্য ডাটাবেজ নির্মাণ। যা স্বাস্থ্যসেবায় নিরঙ্কুশ তদারকি, তথ্য সংগ্রহ, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ডাটার ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির অসম্ভব শক্তির ব্যবহার সেবা প্রদানকারী ও সরকারের সঙ্গে জনগণের প্রকৃত সময়ে জবাবদিহির প্রক্রিয়া উন্নত করবে।

বাংলাদেশের নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক ঘাটতি ও গলদ বিদ্যমান। তা নিরসন করতে হবে। গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকের আদলে গরিব ও সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গড়ে তুলতে হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক পার হয়ে আমাদের সব প্রচেষ্টাকে সমবেত করতে হবে পূর্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী জেলা স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে। আমাদের জনবল ও সম্পদের অভাবকে মাথায় রেখে আপাত বাস্তবায়নযোগ্য কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। উপজেলাকে আমরা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ একক হিসাবে মনে করি। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রথম রেফারেল কেন্দ্র। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও সীমিত বিশেষজ্ঞ সেবার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য আছে। তথাপি আজও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক, ইমেজিং, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রীর অপর্যাপ্ততা বা অকেজো হয়ে ভুগতে থাকে। জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সীমাবদ্ধতার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স তার সামর্থ্যের সমানও কাজ করতে পারে না। তাই আমাদের আর্থিক সামর্থ্য, জনবল ও অবকাঠামোর বিবেচনায়  অনেক দুর্বল উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের চেয়ে একটি শক্তিশালী বৃহৎ জেলা হাসপাতাল অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও কার্যকর হতে পারে। যেখানে শক্তিশালী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের তদারকিতে রোগীরা রেফার্ড হয়ে আসবে।

 আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ব্যবস্থায় জেলা হাসপাতাল এক গুরুত্বপূর্ণ হাব হলেও তা অবহেলিত। কিছু সময়ের জন্য, সরকারকে উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে বর্তমান অবস্থায় স্থগিত রেখে জেলা হাসপাতালের অবকাঠামো সম্প্রসারণের দিকে নজর দিতে হবে। উপজেলার জনবল জেলা সদরে সংযুক্ত করে সব সম্পদ ও প্রচেষ্টা দক্ষ জনবল ও সক্ষমতা তৈরিতে নিয়োজিত করতে হবে। জেলা হাসপাতালে সরকারকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জেলা হাসপাতালকে সব বিশেষজ্ঞ ও পর্যায়ক্রমিকভাবে বিশেষায়িত সেবা প্রদানে সক্ষম হতে হবে। সকল জরুরি চিকিৎসা, জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা (আইসিইউ, সিসিইউ) ও রোগ নির্ণয়ের আধুনিক ল্যাবরেটরি ও ইমেজিং পরীক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে। কোনও রোগীকে যেন জেলা হাসপাতালকে পাশ কাটিয়ে টারশিয়ারি কেয়ারে চলে যেতে না হয়। একটি কার্যকর জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালনায় আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকতে হবে। পুরো জেলার স্বাস্থ্য তথ্য, প্রশিক্ষণ, জনস্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণসহ জেলাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালনা করতে হবে।

জেলার কোনও এলাকা থেকে সদর অনেক দূরের পথ হলে ভৌগোলিক বিবেচনায় কোনও একটি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সকে মধ্যবর্তী জরুরি সেবা দেওয়ার মতো জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে।

জেলা পর্যায়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী ও আধুনিক করতে সরকারকে নীতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য তদারকি সংস্থাকে বেসরকারি খাতে জনগণের নিরাপদ ও ন্যায়সংগত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাত পরস্পরের সম্পূরক হবে।

দেশের কিছু চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে উন্নীত করতে হবে। প্রতিবেশী দেশে যে সুযোগ-সুবিধা, বাজেট ও বিধি ব্যবস্থা আছে তা অনুসরণ করেই আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে স্বাস্থ্য– শিক্ষা, গবেষণার মতো প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বাইরে আনতে হবে সর্বাগ্রে।

এ বছরের বাজেট উপস্থাপনের আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেই পুরনো গীত গাইতে শুরু করেছে– “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তার বরাদ্দ বাজেট খরচ করার সক্ষমতা নাই”। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে পৃথিবীর সর্বনিম্ন ব্যয়কারী দেশটির বাজেট পরিকল্পনাকারীদের এসব বুলি এক নিদারুণ প্রহসন।

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ শুধু খরচ নয় তা নানাভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। দারিদ্র্য নিরসন ও অসমতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ  উন্নত শ্রমশক্তি জোগান, স্কুল শিক্ষায় ভালো অবদান, নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনীতিতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। মোট বরাদ্দের নিরিখে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ বছরের উপস্থাপিত বাজেটে তা হয়েছে ৫ শতাংশ। এটা প্রমাণ করে স্বাস্থ্য খাত সরকারের অগ্রাধিকার নয়। অপচয়, দুর্নীতি, চুরি বন্ধ করতে হবে। তবে যত উদ্ভাবনী পথই আমরা খুঁজে বের করি না কেন, স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের কাছে উন্নীত না করে কোনও পরিবর্তন আনতে পারার সম্ভাবনা অলীক স্বপ্ন।

বর্তমান অবকাঠামো রেখে খুবই  সুনির্দিষ্ট কিছু বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ এখানে দেখানো হয়েছে। এই পুনর্বিন্যাসগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে কম ব্যয়ে কম সময়ে দৃশ্যমান উন্নতি আনা সম্ভব হবে। আর এর জন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সদিচ্ছাই যথেষ্ট।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। কনসালটেন্ট, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, এভার কেয়ার হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিষয়ক কলামিস্ট।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ