X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ‘সার্কাস’ পার্টি?

প্রভাষ আমিন
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৫৭আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৫৭

২২ আগস্ট দুপুরের কিছু আগে হঠাৎ রাজনীতিতে তোলপাড়—জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির কাউন্সিল নেই, কোনও মিটিং নেই, কোনও আলোচনা নেই। হঠাৎ চেয়ারম্যান কীভাবে বদলে গেলো? তারচেয়ে বড় কথা হলো, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের যখন দেশে নেই, তখনই বেছে নেওয়া হলো এই পরিবর্তনের কৌশল। জাতীয় পার্টির জন্ম ক্যু’র মাধ্যমে। তাই ক্যু’র বিষয়টি দলের নেতাদের মাথায় গেঁথে আছে। ক্যু তাদের খুবই পছন্দ। কিন্তু এবারের ক্যুটি হয়েছে খুবই কাঁচা হাতের কাজ। পরে প্রমাণিত হয়েছে পুরো বিষয়টিই সাজানো এবং ফেক। সেটি সাজানো হয়েছে ৮ মাস আগের দুটি চিঠির ভিত্তিতে।

২২ আগস্ট বেলা ১‌১টা ৪০ মিনিটে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রথম বিষয়টি ছড়ানো হয়। জাতীয় পার্টির প্যাডে পাঠানো প্রথম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’ নিচে রওশন এরশাদের স্বাক্ষর থাকলেও পরে তিনি দাবি করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। কিছুক্ষণ পর ‘সভার কার্যবিবরণী বহি’ শিরোনামে হাতে লেখা একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘মামলা-মোকদ্দমায় জাতীয় পার্টির চলমান অচলাবস্থা নিরসনে পার্টির চার জন কো-চেয়ারম্যান দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নে উল্লিখিত পার্টির চার জন কো-চেয়ারম্যান প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে দলের ক্রান্তিকাল মোকাবিলায় অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পণ করেন।’

হাতে লেখা এই চিঠিতে জাপার চার জন কো-চেয়ারম্যানের নাম ও তাদের স্বাক্ষর দেখানো হয়। তারা হলেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম। এছাড়া পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না ও শফিকুল ইসলাম সেন্টুর নাম ও স্বাক্ষরও দেখানো হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই কার্যবিবরণী গত বছরের ৭ ডিসেম্বরের। আরও মজার ব্যাপার হলো, যাদের নাম ব্যবহার করে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে, তারা সবাই বলেছেন, বিষয়টি ভুয়া। দিনভর জাতীয় পার্টির এই নাটক নিয়ে তোলপাড় হয়। পার্টির বনানী কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশও করেন। তবে সন্ধ্যা নাগাদ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। জানা যায়, রওশন এরশাদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কাজী মামুনুর রশিদ অতি উৎসাহী হয়ে এই ব্যর্থ ক্যু’র চেষ্টাটি করেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, রওশন নিজেই নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। এমনকি প্রেস বিজ্ঞপ্তি কারা দিয়েছে, সেটিও জানতে চেয়েছেন তিনি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেন, ‘এটা ফেক নিউজ।’

সন্ধ্যায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।’ এর মাধ্যমেই শেষ হয় জাপার ব্যর্থ ক্যু’র চেষ্টা।

পুরো বিষয়টিকে লোকজন রাজনৈতিক সার্কাস হিসেবে অভিহিত করছেন। শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তার চারদিন পরই এই ধরনের নাটক। আর ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে যখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারত সফর করছেন। সব মিলিয়ে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে সরকারের ইঙ্গিতেই জাতীয় পার্টিতে এই রদবদল। তবে বার্তাটি যে ভুল ছিল, তা বুঝতে দেরি হয়নি। ফেসবুকে মাঝে মাঝে ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতিতেও যে ফেক নিউজ থাকতে পারে, তা কিছুটা অভিনবই বটে।  

এবারই প্রথম নয়, জাতীয় পার্টিতে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি খুবই পরিচিত দৃশ্য। সব দলেই কোন্দল থাকে। কিন্তু জাতীয় পার্টির মতো এমন প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব খুব বেশি নেই। মাঠের বিবেচনায় তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কাগজে-কলমে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আর মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। জাতীয় পার্টি যে সংসদে প্রধান বিরোধী দল, এটা মানুষ তো বিশ্বাস করেই না, আমার ধারণা জাতীয় পার্টি নিজেরাও নিজেদের বিরোধী দল বলতে লজ্জা পায়। এমন অদ্ভুত বিরোধী দল অবশ্য বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল। সরকারি দলের নির্বাচনি মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল হয়ে যায়। তবে জাতীয় পার্টিকে সবাই আদর করে গৃহপালিত বিরোধী দল বলে। এবার তবু চক্ষুলজ্জার কারণে সরাসরি সরকারে যোগ দেয়নি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলও ছিল, আবার মন্ত্রিসভায়ও ছিল। একই সঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে থাকার অতীত কোনও উদাহরণ না থাকলেও গৃহপালিত বিরোধী দলের কীর্তিটি জাতীয় পার্টিরই গড়া। ১৯৮৮ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বাংলাদেশের মূলধারার সব রাজনৈতিক দল। তখন আ স ম আব্দুর রব কাগুজে ৭২ দল নিয়ে একটি সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) বানিয়ে এরশাদের সেই নির্বাচনকে বৈধতা দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। সে নির্বাচনে আ স ম আব্দুর রব ছিলেন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা। এখন যেই দায়িত্ব পালন করছেন রওশন এরশাদ।

স্বৈরাচারী এরশাদের হাতে গড়া দল জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দুষ্টক্ষত। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে জন্ম নেওয়া জাতীয় পার্টির কোনও আদর্শিক চরিত্র নেই। পুরোটাই সুবিধাবাদে ঠাসা। তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে এই দলটির কিছু জনসমর্থন আছে। আর এই জনসমর্থনকে পুঁজি করেই দলটি আজ এ ঘাটে তো কাল ও ঘাটে নৌকা ভিড়ায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণআন্দোলনের মুখে পতনের পর কেউ ভাবেনি এরশাদ আবার এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’, এই আপ্তবাক্যকে পুঁজি করে জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেদের জায়েজ করে নিয়েছে। প্রথমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এরশাদ। এরপর বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে জাতীয় পার্টি।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের সাফল্যে আওয়ামী লীগ বুঝে যায়, তারা একা বিএনপির সঙ্গে পারবে না। তাই জাতীয় পার্টিকে কাছে টেনে নেয় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই জাতীয় পার্টি আওয়ামী  লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক। তারপর থেকেই গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে জাতীয় পার্টিতে বরাবরই দুটি ধারা বিদ্যমান- একটি আওয়ামীপন্থি, অন্যটি আওয়ামী বিরোধী।

বর্তমানে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বরাবরই আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরশাদ বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলেও নানা কারণে পারেননি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি। এমনকি জোর করলে তিনি আত্মহত্যারও হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদকে অসুস্থ সাজিয়ে চিকিৎসার নামে সিএমএইচে আটকে রেখে আওয়ামী লীগ সেবার নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়ে যায়। এরশাদ সিএমএইচ থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে বের হন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে।

এরশাদকে বশে রাখার কার্যকর একটি উপায় বের করে নিয়েছিল সরকারি দল। এরশাদ যখনই সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখন মঞ্জুর হত্যা মামলার তারিখ পড়েছে। আর দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা এরশাদ আর কখনোই কারাগারে ফিরে যেতে চাননি। তাই নিজের পছন্দের রাজনীতিটাও করতে পারেননি শেষ জীবনে। বিএনপির সঙ্গে আদর্শিক নৈকট্য থাকলেও তার শেষ জীবনটা কাটাতে হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আর ঘরের শত্রু বিভীষণ রওশন তো ছিলেনই। মামলার তারিখ পড়লেই এরশাদের বিপ্লব ফুরিয়ে যেতো। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব পান তার ছোট ভাই জি এম কাদের। তবে এরশাদের সঙ্গে রওশনের যে দ্বন্দ্ব ছিল তার ধারাবাহিকতা এখন চলছে। এখন চলছে রওশনের সঙ্গে জি এম কাদেরের। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব এখন বাংলাদেশের রাজনীতির রসালো আলোচনার বিষয়।

সরকার এরশাদকে যে কৌশলে বশ করে রেখেছিল, জি এম কাদেরের জন্যও সেই একই কৌশল বের করা হয়েছে। তবে জি এম কাদের তো আর এরশাদের মতো দুর্বৃত্ত নন, তাই তার বিরুদ্ধে পুরোনো কোনও মামলাও নেই। তাকে আটকাতে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতার মামলা সাজানো হয়েছে। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জি এম কাদেরের রাজনৈতিক তৎপরতায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।

এরশাদের পতনের আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি একটাই ছিল। কিন্তু এরশাদ পতনের পর থেকে সুবিধাবাদীরা নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় পার্টি কতবার কতভাবে ভেঙেছে তার হিসাব রাখা কোনও গবেষকের পক্ষেই সম্ভব নয়। এখনও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া তিনটি জাতীয় পার্টি আছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি-জাপা, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি-জেপি, নাজিউর রহমান মঞ্জুরের ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি। এছাড়া প্রয়াত কাজী জাফরের নামে একটি জাতীয় পার্টির আওয়াজ পাওয়া যায় মাঝে মধ্যে। আরও কয়েকটি হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে।  

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি-জাপার এই দ্বন্দ্ব আবার সামনে আসবে এটা নিশ্চিত। রওশন এরশাদ বরাবরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করতে চান। আর জি এম কাদের চান আলাদা নির্বাচন করে সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের বিকশিত করতে। তবে আমার ধারণা, আওয়ামী লীগ এখন স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখবে। নির্বাচনের সময়কার মাঠের অবস্থা বিবেচনায় জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে যেতে হবে। আর বিএনপি না এলে হয়তো তারা আলাদা নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। তাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই। তাদের আলাদা করে ভাবার সুযোগ খুব কম। জি এম কাদের দিল্লি থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন, তার ওপরও নির্ভর করবে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল। তাই জাতীয় পার্টিতে আগামীতে এ ধরনের আরও সার্কাস দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।      

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ