X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া উপদেষ্টায় চড়ে মহাযাত্রা…

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:১৪আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৫০

রাজপথে ফয়সালা করবে, রাজপথ দখলে থাকবে; লাখো লাখো মানুষের সমাগম হবে; সরকার ভেসে যাবে– এমন বহু কথা বললেও রাজপথ বিএনপির দখলে ছিল না। বরং হুমকি-ধমকির ফল হয়েছে ‘অশ্ব ডিম্ব’।

বিএনপি পারেনি। পিছু হটেছে। তারা সমাবেশস্থল যে কারণেই হোক ছেড়ে চলে গেছে। তারা তো বসে থাকতো পারতো, অবস্থান নিতে পারতো। কিন্তু সরে গেছে। তার মানে হলো তাদের ভেতরে ভেতরে অন্য কিছু চলছে, যা তাদের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা জানে না বা টের পেলেও কিছু করার নাই।

২৮ অক্টোবর ঘিরে সব হম্বিতম্বির ফল বিএনপির জন্য নেতিবাচক। সেই পুরোনো সহিংসতার পথই তারা বেছে নিলো। মুখরোচক বক্তৃতার মধ্য দিয়ে যে সরকার পতন হয় না তা আবারও প্রমাণিত। এমন হুমকি দিয়েছিল আগেও, এই বলে যে ১০ ডিসেম্বর (২০২২ এর ১০ ডিসেম্বর) থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথা মতো। কিন্তু হলো তার উল্টো।

বিএনপির নেতাকর্মীরা যানবাহন ভাঙচুর করলো, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করলো, ৫০ জনাধিক পুলিশ সদস্যকে আহত করলো, তাদের নির্মমতায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হলো, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বিএনপি এতে কোনও সহমর্মিতা দেখালো না। মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়তো বিএনপির চরিত্রে নেই।

বিএনপির অতীতে যে অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের মধ্যে যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল তাদের প্রতি বিএনপি কোনও সহমর্মিতা বা সহানুভূতি দেখায়নি। বরং তাদের পক্ষের একজন বিশিষ্ট জন (!) টকশোতে এমন মানুষ পুড়িয়ে মারা-আগুন সন্ত্রাসকে ‘Collateral damage’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। কী নির্মম!

রাজপথে আন্দোলন-সহিংসতা করে বিএনপি কোনোদিনও আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে পারবে না। সবাই এটা বোঝে। কিন্তু আন্দোলনের নামে তারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে, হাসপাতালে হামলা করবে, যানবাহনে আগুন দেবে। আর মুখে বলবে জনগণের সরকার চাই। জনগণের সরকার চাইলে জনগণকে পুড়িয়ে মারা কেন? জনগণের জানমাল সম্পদ নষ্ট করা কেন? বিএনপির কেউ কি এই প্রশ্নের উত্তর দিবে?

বাংলাদেশের জনগণসহ সারা বিশ্ব বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে। এমন সহিংসতা তারা করেছিল ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর। যেন একই চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি। এখানে জনগণ কী পেলো আর বিএনপির অর্জনই বা কী? এখন ভিসানীতি কাদের ওপর প্রয়োগ করা উচিত তা আর না বোঝার কিছু না।

বিএনপির পক্ষে জনসমর্থন থাকলে ব্যালটেই তার প্রমাণ মিলবে। সহিংস পন্থা তো অবলম্বন করার কোনও প্রয়োজন নেই। হরতাল অবরোধের রাজনীতি মানুষ আর চায় না। নতুন প্রজন্ম তো গত ১০ বছরে ভুলেই গেছে হরতাল কী। বর্তমান এমন অগ্রসরমাণ অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা ও বাস্তবতায় হরতালের উপযোগিতা আর নেই বললেই চলে। তবে মানুষের ঘাড়ে জোর করে এই চাপ তুলে দিয়ে জনসমর্থন বাড়বে না বরং কমবে।

তাহলে কি আমরা ধরে নিবো– এসব সহিংসতা, পুনরায় বাসে-ট্রাকে আগুন, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, পুলিশ সদস্যকে হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে হামলা, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করা- এগুলোই দণ্ডিত আসামির ‘টেকব্যাক বাংলাদেশে’র নমুনা, যা আমরা আগেই ধারণা করে আসছিলাম।

যে আদিম বর্বরভাবে বিএনপির লোকজন পুলিশকে পিটিয়েছে তা কোনও সভ্য দেশে চলতে পারে না। এমন নারকীয় নির্মমতার রাজনীতি কেউ প্রত্যাশা করে না।

তবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, অন্যান্য সহিংস কর্মকাণ্ডের মতোই গণমাধ্যম কর্মীদের নির্যাতন করা বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। সবার স্মরণে আছে, বিএনপি জামায়াত জোট আমলে ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মাত্র ৪ বছরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলা দায়ের এবং ৭৫০টি হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটে। আরও উল্লেখ করতে চাই, জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা; প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট, রেডিও, টেলিভিশন সর্বত্র দলীয়করণ করা হয়েছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাংবাদিক খুনের সন্দেহভাজন আসামিকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। একমাত্র বাসসেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে  ভিন্নমতাবলম্বী পেশাদার ৪০ জন সাংবাদিককে। গ্রেফতার ও পুলিশি নির্যাতন করা হয় ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ৪-এর সাংবাদিক লিওপোল্ড ব্রুনো সরেন্তিনো, জেইবা মালিক, বাংলাদেশের সালিম সামাদ, প্রিসিলা রাজ ও এনামুল হক চৌধুরীসহ বিশিষ্ট কয়েকজন সাংবাদিককে।

সাবেক ছাত্রদল ক্যাডার চট্টগ্রামের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আকবরের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের সামনে সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিকদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছিল জোট সরকার। সুতরাং গণমাধ্যমকে আঘাত করা বিএনপির স্বভাবজাত, যা ২৮ অক্টোবর পুনরায় প্রমাণ হয়েছে।

বিএনপির নেতৃত্ব ও কর্মী-সমর্থকরা সভাস্থল ত্যাগ করে চলে গিয়ে হয়তো মানুষের সহানুভূতি পাবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের সহিংসতা ও সন্ধ্যায় ‘ভুয়া বাইডেন উপদেষ্টা’কে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন প্রমাণ করে অর্বাচীন-অপরিপক্ব-রাজনৈতিক শিষ্টাচারহীন-হাস্যকর কাজ করেছে বিএনপি, এমন রসালো প্রহসন শুধু বিএনপিই করতে পারে। কারণ এই ব্যক্তিকে তারা নাকি চিনেই না, না চিনলে তাদের অন্দরমহলে ঢুকলো কী করে। আবার বলে তাদের মহাসচিবও নাকি জানতেন না। এখনও তো বলতে হয়, চলছে অজানা পথে নিরুদ্দেশে হাওয়া মেখে (!)।

সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ওই লোকের পরিচয় বিষয়ে জানায়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। এদিকে ২৯ অক্টোবর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা সেই ভুয়া উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। এই বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনও সুযোগ নেই।

বিএনপি এখন অস্বীকার করলেও এর পেছনের সত্য উদঘাটন করা প্রয়োজন কারণ। এসব দেশের মানুষের সঙ্গে এমন ধরনের মোকারি ও জালিয়াতি। এই ব্যক্তি কে, তার পরিচয় কী, কী করে এবং কেন সে বিএনপি কার্যালয়ে গেলো, বক্তব্য রাখলো- এগুলোর সঠিক উত্তর জানলে ও তদন্ত করলে টেকব্যাক বাংলাদেশের আড়ালে কি আছে তা বেরিয়ে আসবে। মানুষ তখন সাদা চোখে বিএনপির উদ্দেশ্য-বিধেয় জানতে পারবে।

‘অবতার-ভগবান’ অধ্যায় শেষ করে এখন যেন বিএনপি হাঁটছে উপদেষ্টার ঘোড়ায় চড়ে; এ যেন অন্ধ সেজে মানুষকে অন্ধ ভাবা।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ