X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতেও কি অলরাউন্ডার হবেন সাকিব?

তানজীম আহমেদ
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫০আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৬

মাগুরার সাহাপাড়ায় আত্মীয়-স্বজন কিংবা কাছের জনেরা তাকে ফয়সাল নামেই চেনেন কিংবা ডাকেন। এই ফয়সাল সময়ের পরিক্রমায় শুধু বাংলাদেশেই নয়, ক্রিকেট বিশ্বে সাকিব আল হাসান হয়ে উঠলেন।

বছরের পর বছর বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারের খেতাব নিজের কাছে রেখেছেন। ৩৬ বছর বয়সে ক্রিকেটের পাশাপাশি নতুন এক জগতে নাম লেখালেন। রাজনীতির দুর্নিবার আকর্ষণ হঠাৎ টেনেছে সাকিবকেও। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে নৌকার কান্ডারি হয়ে মাঠে-ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বড় তারকা। ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট-বল হাতে সফল তারকা এবার রাজনীতির মাঠে কতটুকু সফল হবেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আসতেই পারে। আরও পরিষ্কার করে বললে, রাজনীতিতে কি অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখাতে পারবেন?

অন্যভাবে দেখলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান এমনই এক নাম যার লাখ-কোটি অনুসারী রয়েছেন। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে তার সমান পরিচিতি। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ তো আছেই, যেসব দেশে ক্রিকেট খেলাটা ততটা পরিচিত নয়, সেখানকার অনেকেই তাকে চেনেন-জানেন। কাতার বিশ্বকাপে গিয়ে আর্জেন্টিনাসহ অন্য দেশের সমর্থকদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে সাকিবের নাম শুনে একটু অবাকই হতে হয়েছে।

তার খ্যাতি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। এক যুগের বেশি সময়ের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দেশকে জিতিয়েছেন। ক্রীড়ামোদীদের নানান সময়ে বিনোদিত করেছেন। খেলেছেন দেশের বাইরের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। একাধারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক সাকিব। এরই মাঝে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ থেকে এসে রাজনীতির কাতারে যোগ দিয়েছেন।

অথচ রাজনীতিতে জড়ানোর আগে ক্রিকেটীয় কারণে সাকিবকে নানা সময়ে একাধিকবার নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হতে হয়েছিল। গ্যালারিতে দর্শকদের দিকে ব্যাট হাতে তেড়ে যাচ্ছিলেন, আবার উইকেটে লাথি মেরে ভেঙে দিয়েছেন, কখনও মারমুখী আচরণ করেছেন আম্পায়ারের প্রতি। খেলার মাঝে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি দেখাতেও লজ্জা পাননি। মাঝে তো ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটা গোপন করার অভিযোগে তিনি দুই বছরের জন্য সাসপেন্ড হন, যার একটি বছর স্থগিত করা হয়েছিল।

এত নেতিবাচক কিছুর পরও সাকিবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন। শুধু সমর্থক নন, ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের জনপ্রিয়তাও কম নয়। মাঝে ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তাই তো সতীর্থ সৌম্য-সাব্বিররা তার হয়ে মাগুরাতে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন!

এমনিতে ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে ব্যস্ত খেলোয়াড় সাকিব। এই খেলছেন তো, এই বিজ্ঞাপনচিত্রে নায়ক হচ্ছেন। শো-রুমের ফিতা কাটছেন। আজ ঢাকায় তো, কাল দুবাই কিংবা অন্য শহরে। পণ্যের প্রসারের জন্য মাঝেমধ্যে বিতর্কের জন্মও দিয়েছেন। এছাড়া সাকিবের স্ত্রী-তিন সন্তান থাকেন আমেরিকাতে। তাই সেখানে নিয়ম করে সময় দিতে হচ্ছে। রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ব্যস্ততার কারণে জন্মস্থান মাগুরাতে যাওয়ার সময় হয়ে উঠে কমই।

অবাক করা বিষয় হলো সেই সাকিবের এখন ধ্যান-জ্ঞান মাগুরা-১ আসন নিয়ে। গত কিছু দিন ধরে এলাকার এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে তিনি চষে বেড়াননি। শুধু রাজনীতি করবেন বলেই নিজের জীবনধারা বদলে ফেলছেন! মিশছেন আমজনতার সঙ্গে। জনসংযোগ করার সময় রাস্তার ধারে এলাকাবাসীর দেওয়া খাবার খেতে কার্পণ্য করছেন না। মাঠে নেমে কৃষকের সঙ্গে কথা বলছেন, সবার সঙ্গে হাত মেলানোর পাশাপাশি বুকে জড়িয়ে ধরছেন; এমনকি একের পর এক সেলফির আবদারও মেটাচ্ছেন হাসিমুখে।

একজন রাজনীতিবিদ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে যা যা করার দরকার, নির্বাচনকে সামনে রেখে সাকিব তা-ই করে যাচ্ছেন। তার সাহাপাড়ার বাসার দুয়ার এখন এলাকাবাসী কিংবা ভোটাদের ভিড়ে সরগরম! রাজনীতির কারণেই বুঝি এমন সাকিবের চেহারা দেখা যাচ্ছে।

সাকিবের ক্রিকেট ও ক্রিকেটীয় ব্যস্ত সূচির মাঝে এখন রাজনীতির মাগুরা-১ আসনটি জায়গা করে নিয়েছে। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হতে পারলে মাগুরাকে দেশের অন্যতম সেরা জেলা বানানোর প্রতিশ্রুতি ছড়িয়ে দিতে হয়েছে জনগণের মাঝে।

নির্বাচনের উত্তাপে তরুণ ভোটারদের একজন তো এক আলোচনায় মাগুরাতে বিনোদনের জায়গার অভাবের কথা তুলে রাজশাহীর এক উদাহরণও সামনে নিয়ে এসেছিলেন। সাকিব চটপট শহরঘেষা নদীর পাশেই তেমনটি করার চিন্তা-ভাবনার কথা উত্তরে জানিয়ে দিয়েছেন।

এর মানে রাজনীতিতে নামার আগে মাগুরাকে নিয়ে নতুন কিছু করার মাস্টারপ্ল্যান হয়তো তার ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে।

সাকিব নির্বাচিত হবেন কিনা তা ৭ জানুয়ারির ভোটে পরিষ্কার হবে। চার লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে সাকিবের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের খ্যাতি কমই আছে। তাই নির্বাচনে সাকিবের বেরিয়ে আসাটা কিছুটা সহজ হতে পারে।

তার সূচিতে রাজনীতি নতুন নাম হলেও তা তিনি ভালো করে করতে পারবেন বলে অনেকের ধারণা। তার ফুফাতো ভাই সাফ জয়ী অন্যতম ফুটবলার মেহেদী হাসান উজ্জ্বল তো দারুণ আশাবাদী, ‘ফয়সাল (সাকিব আল হাসান) এমন একজন ছেলে। ওর প্রতিভা কেমন তা দেশবাসী আগেই জেনেছে। ও যেখানে হাত দিয়েছে সেখানে বলতে গেলে সফল হয়েছে। ফয়সাল নিজেও জানে কীভাবে উন্নয়ন করতে হবে। তাই ফয়সাল নির্বাচিত হলে মাগুরা-১ আসনের চেহারা আগের চেয়ে অনেক পাল্টে যাব- এটা আমাদের শুধু নয়, এলাকাবাসীরও বিশ্বাস। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’

দক্ষিণ এশিয়াতে খেলোয়াড় থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন এমন সংখ্যা কম নয়। ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, আজহার উদ্দিন কিংবা বাংলাদেশে আরিফ খান জয়, মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাঈমুর রহমান দুর্জয় কিংবা আব্দুস সালাম মুর্শেদী অন্যতম। তবে সফল রাজনীতিবিদ ক’জন হতে পেরেছেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি শুভদৃষ্টি রয়েছে সাকিবের ওপর। সাকিব যদি নিজের নেতিবাচক দিক পরিহার করে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে গিয়ে পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হতে পারেন তাহলে এখানেও সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার হাতছানি তার সামনে।

এখন ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের অপেক্ষা। এরপর নির্বাচিত হতে পারলে আগামী ৫ বছরে সাকিব কী করবেন, তাও দেখতে হবে। নিশ্চয়ই মাগুরার নির্বাচনের মাধ্যমে জিতে খোলনলচে পাল্টে সফল রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না ক্রিকেটের বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে বৃষ্টির নানা রূপ বর্ণনা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ