X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংখ্যাগরিষ্ঠের গ্লানি

প্রভাষ আমিন
১৫ মে ২০১৬, ১৯:২৯আপডেট : ১৭ মে ২০১৬, ১৮:১০

প্রভাষ আমিন সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু—এই ধারণাটার সঙ্গে আমি একমত নই। মানুষকে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ দিয়ে বিবেচনা করার মানেই হলো মানবতাকে অপমান করা। আমি সবসময় মানুষকে বিবেচনা করি তার শিক্ষা-দীক্ষা, মানবিক গুণাবলি দিয়ে। আমার কাছে একজন ব্যক্তির পরিচয় শুধুই মানুষ, আর কিছুই নয়। আর এই সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর ধারণাটাও  আপেক্ষিক। বাংলাদেশে যারা সংখ্যাগুরু, সীমানা পেরুলেই তারা সংখ্যালঘু, মিয়ানমারে তারা নিষ্পেষিত। তারপরও ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষকে সংখ্যা দিয়ে গোনার এই বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে আমাদের। জন্মসূত্রে বাংলাদেশে আমি সংখ্যাগুরু। কিন্তু অহঙ্কারের পরিবর্তে এই পরিচয়টা কখনও কখনও গ্লানিতে ডুবিয়ে দেয় আমাকে। একটি উদার সমাজে সংখ্যাগুরুদের দায়িত্ব হলো সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা। সংখ্যালঘু মানেই তারা দুর্বল। তাই যারা সবল, সেই সংখ্যাগুরুদের দায়িত্ব হলো তাদের সুরক্ষা দেওয়া। যত সবল, যত বড়, তার দায়িত্বও তত বেশি, তার উচিত তত বেশি বিনয়ী হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো ঘটনা। গায়ের জোরে মাপা হয় শক্তি। কেউ কেউ দায়িত্বকে ভাবা হয় ক্ষমতা। আর ক্ষমতাকে মাপা হয় ক্ষতি করার সামর্থ্য দিয়ে। যার ক্ষতি করার সুযোগ বেশি, তারই যেন ক্ষমতা বেশি।
বাংলাদেশে যখন হিন্দুদের দেবী মূর্তি ভাঙচুর হয়, বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়, সংখ্যালঘুরা দিনের পর দিন নির্যাতিত হন; লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়। কারণ আমি জানি, আমার মতো সংখ্যাগুরুদেরই কেউ না কেউ এ হামলা চালিয়েছেন। যখন দেখি হামলার প্রতিবাদে বৌদ্ধরাই মানববন্ধন করছেন, হিন্দুরাই সমাবেশ করছেন; লজ্জা পরিণত হয় গ্লানিতে। মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করে। মানুষ হিসেবে ছোট হয়ে যাই। সংখ্যাগুরুদের মধ্যে এই ধরনের কোনও কোনও  নির্যাতনকারী, হীন মানসিকতার মানুষ তো সংখ্যালঘু হওয়ার কথা। তাহলে প্রকৃত সংখ্যাগুরু ভালো মানুষেরা কেন নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ান না? মন্দিরে আগুন লাগলে, মূর্তি ভাঙচুর হলে, জমি দখল হলে সংখ্যালঘুদেরই কেন প্রতিবাদে মাঠে নামতে হয়? দলে দলে তো সংখ্যাগুরুদের মাঠে নামা উচিত, বলা উচিত, আমরা লজ্জিত, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। ভালো মানুষরা সব ঐক্যবদ্ধ হলে তো এ সব পশুদের ভেসে যাওয়ার কথা। কিন্তু বারবারই তো সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হন। সংখ্যাগুরুদের কেউ কেউ সংখ্যালঘুদের কথায় কথায় ‘মালাউনের বাচ্চা’, ‘বড়ুয়ার পোয়া’ বলে গালি দেই। তাহলে কি সংখ্যাগুরুদের মধ্যে মনে মনে এ ধরনের নির্যাতনকারীরাই সংখ্যাগুরু?
একই ভাবনায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অস্তিত্বটাই আমার কাছে সংখ্যাগুরু মানুষের জন্য লজ্জার মনে হয়। এ সংগঠনের অস্তিত্বই আমাদের ব্যর্থতার প্রমাণ। তবু এটাই বাস্তবতা। আমরা সংখ্যাগুরুরা ঠিকমতো আমাদের দায়িত্ব পালন করি না বলেই এই সংগঠনটি আমাদের লজ্জা দিয়ে সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। গত শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এক সর্বদলীয় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই সংলাপেও সংখ্যাগুরু অংশের সুশীলরা বলেছেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সংখ্যাগুরুদের মাঠে নামতে হবে। কিন্তু সমাজে মনে হয় সুশীলের চেয়ে ‘কুশীলে’র সংখ্যাই বেশি। সুশীলরা বেশি হলে তো কাউকেই মাঠে নামতে হতো না। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও বুঝব,  সংখ্যাগুরুদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছেন, যারা স্বভাবে, চরিত্রে  ভালো নন। ১৯৪৭ সালে যেখানে সংখ্যালঘু ছিল ৩০ শতাংশ। সেখানে ২০১১ সালে তা কমতে কমতে ১০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। যেভাবে সংখ্যালঘুর নির্যাতন, জমি দখল, বঞ্চনার ঘটনা ঘটছে; তাতে দেশ এক সময় হয়তো সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে যাবে; এমন আশঙ্কার কথাও উঠে এসেছে সংলাপে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বিশ বছরের মধ্যে হিন্দু খুঁজতে চিড়িয়াখানায় যেতে হবে। কী ভয়ঙ্কর আশঙ্কা! বহু মতের, বহু ধর্মের, বহু পথের একটা বর্ণাঢ্য বৈচিত্র্যময় সমাজকে আমরা ক্রমশ একঘেয়ে সমাজে বদলে দিচ্ছি। মানুষ যাই করুক, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া, প্রয়োজনে তাদের জন্য কোটা রেখে বাড়তি সুযোগ দেওয়া, তাদের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা। কিন্তু ঘটছে মনে হয় উল্টো। ৪৭'র দেশভাগে অনেকে দেশত্যাগের পরও সংখ্যালঘু ছিল ৩০ শতাংশ। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ নির্যাতন, ৬৫'র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে দেশত্যাগের পরও সে সংখ্যা খুব একটা কমেনি। একাত্তরে একটি উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। এটা যে আমাদের স্বাধীনতার চেতনার কত বড় লঙ্ঘন, সেটাও বোধহয় আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। অনেক মৌলবাদী সংখ্যাগুরু অভিযোগ করেন, হিন্দুরা টাকা জমায় ভারতে এবং সুযোগ পেলেই পাড়ি জমায়। কিন্তু এটা যে একশোভাগ মিথ্যা, একটু দরদ নিয়ে দেশত্যাগী কোনও পরিবারের সঙ্গে কথা বললেই যে কেউ তা বুঝতে পারবেন। নিরাপত্তহীনতার বোধ চরম না হলে একজন মানুষ কখনোই তার শিকড় ছেড়ে যেতে চান না। দেশ ছেড়ে যাওয়ার ৫০ বছর পরও বাড়ির সামনের আতা গাছের গল্প করতে গিয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

আরও পড়তে পারেন: প্লিজ এই ভালোবাসাকে শাস্তি দেবেন না

সকালে যখন ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সর্বদলীয় জাতীয় সংলাপে সুশীলরা বড় বড় কথা বলছেন, তখনই অনলাইনে অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জে একজন সংসদ সদস্যের  নির্দেশে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার সচিত্র খবর। ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করা এই ভদ্রলোকের মূল অপরাধ তিনি একজন সংখ্যালঘু। একজন ছাত্রকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনা হয়। তারপর তাকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করা হয়। সংসদ সদস্য  সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরিয়ে উঠবস করানো হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা। স্কুল পরিচালনা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সবাইকে খেপিয়ে তোলা হয়েছে। এটাই আসলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করার তরিকা! একজন সংখ্যালঘুকে এভাবে হেনস্তা করা খুবই সহজ। পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন এই শিক্ষক যদি মুক্তি পেয়ে ভারতে পাড়ি জমান, আমরা কি তাকেও বলব, মালাউনের ছেলে ২২ বছর শিক্ষকতা করে সব টাকা-পয়সা কলকাতায় জমিয়েছেন। কিন্তু আসল সত্য হলো, সংখ্যাগুরুদেরই কেউ কেউ এভাবে কোনঠাসা করে, অপমান করে, হেনস্তা করে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।

আরও পড়তে পারেন: থানার আশপাশেই ছিনতাই রাজ্য!

শিক্ষাসচিব থাকার সময় নজরুল ইসলাম খানের বাসায় এসেছিলেন তার প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক। শিক্ষাসচিব সেই শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করছেন, এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল তখন। সেই ছবিটিকেই আমরা আমাদের মূল্যবোধের মানদণ্ড হিসেবে জেনে আসছিলাম এতদিন। ছাত্র যত বড়ই হোক, শিক্ষকের কাছে তিনি ছাত্রই। বেতন-কড়ি যেমনই হোক, একজন শিক্ষকের মর্যাদা আমাদের সমাজে অনেক। কিন্তু একজন এমপির সামনে কান ধরে উঠবস করছেন একজন প্রবীণ শিক্ষক, এই ছবি আমাদের বোধে প্রবল ধাক্কা দেয়। এই শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করানোর ভিডিও এতদিনে সবাই দেখে ফেলেছেন। সেলিম ওসমান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুনছেন শিক্ষকের কানে ধরে উঠবস করা। কয়েকবার করার পর পঞ্চাশোর্ধ সেই শিক্ষক পড়ে যান। তুলে আবার তাকে উঠবস করতে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। শিক্ষক যখন পড়ে যান, তখন জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের অনুসারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে এমপিকে সমর্থন দেন। কয়েকদিন আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’র এত বড় অপমান আর দেখিনি। এই ভিডিও দেখে রাগে, ক্ষোভে, অপমানে আমাদের মরে যেতে ইচ্ছা করে। এই সমাজ, এই রাষ্ট্র, এই এমপি আমাদের অচেনা। এই ছবিটি যতবার দেখেছি, ততবার  কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি মনে পড়েছে।

বাদশাহ আলমগীর

কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লির।
একদা প্রভাতে গিয়া

দেখেন বাদশাহ—শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া

ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে

পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,

শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরই পায়ের ধুলি

ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

শিক্ষক মৌলভী

ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবই।

দিল্লিপতির পুত্রের করে

লইয়াছে পানি চরণের পরে,

স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!

ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।

হঠাৎ কী ভাবি উঠি

কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,

শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার

দিল্লির পতি সে তো কোন্ ছার,

ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,

বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,

প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।

তার পরদিন প্রাতে

বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।

খাস কামরাতে যবে

শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ‘শুনুন জনাব তবে,

পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?

বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,

নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা।’

শিক্ষক কন—‘জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,

কী কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?’

বাদশাহ্ কহেন, ‘সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে

নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,

পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।

নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে

ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।’

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে

কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে—

‘আজ হতে চির-উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির,

সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’

আমরা দেখি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তার শিক্ষকদের মর্যাদার উচ্চতম আসনে আসীন করেন। যে দেশে এমপির সামনে শিক্ষক কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, সে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার!

লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ