X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

এমরান হোসাইন শেখ
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১০

দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরে ২১টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী ২২তম জাতীয় সম্মেলন। ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ২১টি সম্মেলনের মধ্যে পাকিস্তান আমলে আটটি আর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৩টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় প্রয়োজনে দলটি বিভিন্ন সময়ে সাতটি বিশেষ সম্মেলন করেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রথমে বার্ষিক, পরে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হলেও এখন হয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। দলটির সম্মেলনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬টি হয়েছে মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ইডেন হোটেলে। এখানে সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৮১ সালে। ওই সম্মেলনেই দলটির বর্তমান প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শনিবার অনুষ্ঠেয় ২২তম সম্মেলনসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন হয় ৪টি।

দলটির বেশিরভাগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিনব্যাপী। ২২তম সম্মেলনসহ চারটি সম্মেলন একদিনে শেষ করা হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে কৃচ্ছ্রসাধনে এবার সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কয়েকটি সম্মেলন হয়েছে টানা তিন দিনব্যাপীও।

পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দুদিনব্যাপী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বিরোধিতা করে দলটির প্রগতিশীল অংশ এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতারা সেসময় এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গঠনের সময় দলটির নাম ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ রাখা হলেও ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে মুসলিম শব্দটি তুলে দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ভাবধারায় ফিরতেই তখন ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বাধিক নয়বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু টানা চারবার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চারবার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠার সময়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া, অন্যান্য সভাপতির মধ্যে আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার, আব্দুর রশীদ তকর্বাগীশ, এইএইচএম কামারুজ্জামান ও আব্দুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হন।

সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে জিল্লুর রহমান দায়িত্বে ছিলেন চারবার; তাজউদ্দীন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার করে এবং শামসুল হক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুল জলিল এক টার্মের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলতি টার্মসহ দুইবার দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত দলের ১১তম সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ওই সময় জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি হয়েছিল।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো আওয়ামী লীগের যত সম্মেলন

প্রতিষ্ঠা সম্মেলন: ২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯; ঢাকা, রোজ গার্ডেন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন পদে প্রতিষ্ঠাকালীন ১১ জন কর্মকর্তাসহ ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্কিং কমিটি করা হয়।

দ্বিতীয় সম্মেলন: ৩-৫ জুলাই, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। এ সম্মেলনে সহ-সভাপতির পদ ৫টি থেকে কমিয়ে ৪টি করা হয়। যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সম্পাদনের পদ বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া একটি করে সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও পার্মানেন্ট সেক্রেটারি (দফতর সম্পাদক) পদ সৃষ্টি করা হয়। আগের কমিটির সহসম্পাদক খন্দকার মোশতাক আহমেদ বাদ পড়েন। ওই বছর নভেম্বরে ময়মনসিংহে আরেকটি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তৃতীয় সম্মেলন: ২১-২৩ অক্টোবর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। এ সম্মেলনেই প্রথম দলের সদস্যদের চাঁদা দেওয়ার বিধান যুক্ত হয়। চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এক আনা। এর আগে কেবল কাউন্সিলরদের বার্ষিক দুই রুপি চাঁদার বিধান ছিল।

এ সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কাউন্সিলের মেয়াদ করা হয় দুই বছর। এর আগে ছিল এক বছর। এছাড়া শ্রম, মহিলা ও সমাজকল্যাণ, সংস্কৃতি ও স্বেচ্ছাসেবক- এই তিনটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়। সহসভাপতির পদ একটি কমিয়ে তিনটি করা হয়। ১২ জন কর্মকর্তা ও সভাপতি মনোনীত ২৫ জন সদস্যসহ মোট ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্ধারণ হয় ৩৭ জন। সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ১১ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠনের বিধান গণতন্ত্রে যুক্ত হয়। এছাড়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নামে নতুন বিশেষ সংগঠন গঠনের বিধান করা হয়। মন্ত্রী বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হলে পদ শূন্য হওয়ার বিধান করা হয়।

উল্লেখ্য, এই সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সৃষ্টি করা হয়। সম্মেলনে উপস্থিত ৭০০ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে মাত্র ৫ জন মুসলিম লীগ বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ভোট দেন।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

চতুর্থ সম্মেলন: ১৩-১৪ জুন, ১৯৫৭; নিউ পিকচার্স হাউজ, আরমানীটোলা, ঢাকা। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারির ফলে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। যা কারণে ৬ বছর কোনও সম্মেলন হয়নি।

পঞ্চম সম্মেলন: ৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকার গ্রিন রোডস্থ আমবাগানে। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। এই সম্মেলনে খন্দকার মোশতাক সদস্য হিসেবে নতুন করে দলের পদ পান।

ষষ্ঠ সম্মেলন: ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, মতিঝিলের হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা অনুমোদিত ও গৃহীত হয়।

সপ্তম সম্মেলন: ১৯-২০ অক্টোবর, ১৯৬৮; ঢাকা, হোটেল ইডেন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে আটক, তখন অনুষ্ঠিত হয় দলের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন। অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি হয়। এতে কর্মকর্তার পদ হয় ১৩টি এবং সদস্য পদ একটি বাড়িয়ে ২৬টি করা হয়। সব মিলিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হয় ৩৯জন।

অষ্টম সম্মেলন: ৪-৫ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, ইডেন হোটেল। এটি ছিল পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন। সত্তরের নির্বাচনের আগে এই সম্মেলনটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এতে সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হন। এই কমিটিতে সিরাজুল আলম খান কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছিলেন।

নবম সম্মেলন: ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন। ঢাকার কাকরাইলের আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণ। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। এ সম্মেলনে দলকে পুনর্গঠনের স্বার্থে ওয়ার্কিং কমিটির পরিবর্তে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট অরগানাইজিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে তোফায়েল আহমেদ প্রথম যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

দশম সম্মেলন: ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকার কাকরাইলের আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণ। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। এই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ১০ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণের বিধান যুক্ত করা হয়। মহিলা আওয়ামী লীগ নামে শাখা সংগঠন সৃষ্টি হয়। একক সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ দফতর দুটি পদ সৃষ্টি করা হয়।

এই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু দলের সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তিনি সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। তবে তাঁকে দলের এক নম্বর সদস্য পদ দেওয়া হয়। দলের সভাপতি হওয়ার কারণে কামারুজ্জামান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

১১তম সম্মেলন: ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। গঠনতন্ত্রে দ্বিবার্ষিক চাঁদা ২ টাকা করা হয়। (এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।)

১২তম সম্মেলন: ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সহসভাপতির পদ তিনটি বাড়িয়ে ৬টি করা হয়। আগে বাতিল হওয়া যুগ্ম সম্পাদকের পদ পুনর্বহাল করে দুটি যুগ্ম সম্পাদকের পদ দৃষ্টি করা হয়। যুব সম্পাদকের পদ নতুন করে সৃষ্টি করা হয়। সাংস্কৃতিক সম্পাদকের সাথে শিক্ষা যুক্ত করা হয়। মোট কর্মকর্তার পদ দাঁড়ায় ২০ জনে। কয়েক দফা মতবিরোধ শেষে ৫৪ জন সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি চূড়ান্ত হয়।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

১৩তম সম্মেলন: ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। এতে ১৮৮৪ জন কাউন্সিলর যোগ দেন। এই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কয়েকজন নেতা অনড় অবস্থানে থাকেন। পরে দলের একটি অংশের প্রচেষ্টায় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। দলের সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। পরে সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।

এই সম্মেলনে সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন করে জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় কমিটি এবং সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের বিধান করা হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয় ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট। এরমধ্যে সভাপতিসহ ১১ জন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য (১০ জন সভাপতিমণ্ডলী), সাধারণ সম্পাদক, ১৪ জন বিভাগীয় সম্পাদক এবং ২৭ জন সদস্য হবেন। এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বিষয়ক পদ সৃষ্টি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি পদকে দুইভাগে ভাগ করা হয়।

১৪তম সম্মেলন: ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১০ জন থেকে বাড়িয়ে ১২ জন, অর্থ ও পরিকল্পনা, তথ্য ও গবেষণা এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং নতুন তিনটি সহকারী সম্পাদকের পদ সৃষ্টি হয়। যুব সম্পাদকের পদ বিলুপ্ত করা হয়। ৫৪ সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি বাড়িয়ে ৫৯ জন করা হয়। দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য মনোনীত হন।

১৫তম সম্মেলন: ১৯-২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশন দুই বছরের স্থলে তিন বছর করা হয়। সভাপতিমণ্ডলীর পদ একটি বাড়িয়ে ১৩টি করা হয়। শিল্প ও বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবেশ বিষয়ক দুটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি হয়। তিনটির স্থলে ৫টি সহ সম্পাদকের পদ করা হয়। ওয়ার্কিং কমিটি বাড়িয়ে ৬৫ জন করা হয়। এই প্রথম ১৫ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিধান যুক্ত হয়। প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগে ৯ সদস্যের উপ পরিষদ গঠনের বিধান যুক্ত হয়। প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের বিধান হয়। সব থেকে বড় পরিবর্তন যেটা হয় তা হলো- দলের পদে থাকলে সরকারের পদে (মন্ত্রিসভার সদস্য) থাকতে পারবে না  বলে যে বিধান ছিল তা বিলুপ্ত হয়। এছাড়া সংগঠনের স্বার্থে যেকোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা সভাপতিকে দেওয়া হয় (ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে)। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদাধিকার বলে দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার বিধান করা হয়।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো

১৬তম সম্মেলন: ৬-৭ মে, ১৯৯৭; আউটার স্টেডিয়াম, ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান। ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দুইজন বাড়িয়ে ৬৭ করা হয়। যুগ্ম সম্পাদকের নাম পরিবর্তন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পদ একটি বাড়িয়ে তিনটি করা হয়। নির্বাহী সদস্যের পদ একটি বাড়িয়ে ২৯টি করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া নামে দুটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পদ পৃথক করে শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক করা হয়। সহ-প্রচার ও সহ-দফতর ছাড়া সহ-সম্পাদকের বাকি তিনটি পদ বিলুপ্ত করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ২১ জন করা হয়।

১৭তম সম্মেলন: ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; পল্টন ময়দান, ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ৬৭ জন থেকে বাড়িয়ে ৭৩ করা হয়। ধর্ম এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক দুটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়। একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের স্থলে ৭ জন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ ২১ জন থেকে বাড়িয়ে ৪১ জন করা হয়।

১৮তম সম্মেলন: ২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিধান যুক্ত হয়। যুব মহিলা লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের শর্ত প্রতিপালনে এ সম্মেলনে শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা প্রদান বাতিলসহ আরও কিছু সংশোধনী আনা হয়।

১৯তম সম্মেলন: ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাদামাটাভাবে নিয়ম রক্ষার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পুনর্নির্বাচিত হন।

২০তম সম্মেলন: ২২-২৩ অক্টোবর ২০১৬; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ৮১ জন করা হয়। এরমধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ ৪টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ ১টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ১টি এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ২৬টি থেকে দুটি বাড়িয়ে ২৮টি করা হয়। এছাড়া সব ধরনের চাঁদা বাড়ানো হয়। তাঁতি লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়।

২১তম সম্মেলন: ২০-২১ ডিসেম্বর ২০১৯; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সম্মেলনে মৎস্যজীবী লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদকে একীভূত করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ করা হয়।

কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো বিশেষ সম্মেলন

আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলনগুলোর মধ্যে প্রথমটি ১৯৫৩ সালের ১৪ থেকে ১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহের অলকা সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় । এতে জোট গঠনের প্রস্তাব পাস করা হয়। যার অংশ হিসেবে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট।

১৯৫৬ সালের ১৯ ও ২০ মে দ্বিতীয়বার বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন যেন ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর স্থগিত রাখা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশেষ সম্মেলনটি আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় কোনও নেতা একই সঙ্গে দলের নেতৃত্ব ও মন্ত্রিসভায় থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন থাকেন।

ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর ১৯৬৬ সালের ৮ মে আওয়ামী লীগের সে সময়ের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান আটক হওয়ার পর, ১৯৬৭ সালের ১৯ আগস্ট দলের কৌশল নির্ধারণে ডাকা হয় চতুর্থ বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ভোটে প্রতিকূল অবস্থায় ৬ দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার তিন বছর পর রাষ্ট্রপতি ও সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে জিয়াউর রহমানের সরকার। আর নির্বাচনকে ঘিরে বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। দলের পঞ্চম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে।

১৯৯৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলটির ষষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়।

২০০০ সালের ২৩ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের সপ্তম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর বাড়াতে এই সম্মেলন ডাকা হয়।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন ও মাহফুজ সাদি

/এপিএইচ/এমওএফ/
টাইমলাইন: আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৪৯
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৫৮
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৭
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০০
কেমন ছিল আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলো
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশে তিনদিনের হিট এলার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিনদিনের হিট এলার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী