X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনকারীরা সচেতন মানুষের নাগরিক অধিকার হরণ করছেন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৫ মে ২০২১, ১৬:০২আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ১৬:০২

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ মাঝপথেই স্থগিত হয়েছে মঙ্গলবার। এখন ভারতে ক্রিকেট বোর্ড ভাবছে তারা শেষ পর্যন্ত অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনও করতে পারবে কিনা। ভারতীয় বোর্ডের কর্তারা সংযুক্ত আরবে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছেন।

করোনা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে ভারতে, এটা পরিষ্কার। এটাও পরিষ্কার যে, ভারতে করোনার বিস্তার ঘটতে থাকলে বাংলাদেশও নিরাপদ নয়। দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের কাছাকাছি লোক মারা গেছে। আর আক্রান্ত হয়েছে প্রায় আট লাখ।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। গত জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। এ বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি। মাঝে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করে।

সাম্প্রতিক লকডাউনে সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যু কমতে থাকে। কিন্তু লকডাউন সরকার ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ালেও গণপরিবহন ঈদের আগে চালু করে দিচ্ছে, যেমন করে খুলে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট, মার্কেট ও বিপণি বিতান। যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই হচ্ছে – স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যাপক ভিড় করে বেচাকেনা করছে সবখানে।

একটু যা-ও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল, তা যে আবার খারাপ হবে সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সংকটের মেঘ কাটার কোনও ইঙ্গিত নেই কোথাও। অথচ আমরা কেমন ঢিলেঢালা আচরণ করতে শুরু করেছি। আমাদের ঠিক করা দরকার কোনটা আমরা করবো। অতিমারি মোকাবিলায় পুরোপুরি নাকি আংশিক লকডাউন, নাকি রাত্রিকালীন কারফিউ? ভারতের ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’(এমস)-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে দীর্ঘকালীন লকডাউনের পথে হাঁটতে হতে পারে।

কিন্তু আমরা জানি, এটা আমরা পারবো না। টিকা নিয়ে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো, তা থেকে আমরা শিখেছি নিশ্চয়ই যে, মহাসংকটে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য কোনও একক দেশ বা সূত্রের ওপর নির্ভরশীলতা চলে না। ভারতে অক্সিজেনের জন্য যে হাহাকার আমরা দেখলাম সেটা থেকেও নিশ্চয়ই বোধোদয় হওয়ার কথা। কিন্তু যা কখনও আমরা শিখবো না হয়তো, তা হলো ব্যবস্থাপনা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেসব কারণে বাড়ে ভারতে তার সবগুলো ঘটেছে। নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমাবেশ, মিছিল হয়েছে, কুম্ভমেলার মতো বড় বড় ধর্মীয় জমায়েত হয়েছে, অন্যান্য সামাজিক জনসমাগম তো অব্যাহত ছিলই। এগুলো আমরাও করেছি। করোনার মধ্যে আমাদের পৌরসভাসহ বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে, বিভিন্ন জমায়েত হয়েছে, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলেছে, আর আমাদের মানুষজন হামলে পড়েছিল পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

আমাদের সামনে করণীয় বিষয়গুলো পরিষ্কার। হাসপাতালগুলোর উন্নয়ন প্রয়োজন। আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহের কথা এখনই ভাবতে হবে। যেকোনোভাবেই হোক দেশের ৭০ থেকে আশিভাগ মানুষের টিকাকরণ নিশ্চিত করতে হবে। এবং অবশ্যই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাষ্ট্রকে অতিসক্রিয়তা দেখাতে হবে।

ঈদের পর ১৬ মে পর্যন্ত লকডাউন থাকছে। কিন্তু এভাবে তো আজীবন চলা যাবে না। তাই লকডাউন বা বিধিনিষেধ উঠিয়ে মানুষের নিয়ন্ত্রিত চলাচলের মাধ্যমে অর্থনীতিকে কীভাবে সক্রিয় রাখা যায় তার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে বাকি সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় খুব জরুরি। মানুষের জীবিকা, জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা কীভাবে বাধাহীন করা যায় তার বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনা প্রয়োজন।

কোভিডের ভারতীয় স্ট্রেইনগুলো নিয়ে অনেক অস্বচ্ছ কথাবার্তা হচ্ছে। মানুষকে একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে, তাদের সচেতন করতে এ নিয়ে সহজ করে এর ভয়াবহতা সব প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। সাম্প্রতিককালের ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, বা ব্রাজিলিয়ান বা আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে মানুষকে ঠিক সেভাবে জাগানো যায়নি, যেভাবে প্রয়োজন ছিল।

ঈদ আসছে, তাই ব্যবসায়ীদের কিছুটা সুবিধা দিতে ঈদ বাজার খুলে দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের দিক থেকে উচ্চারিত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যে সতর্কতা তার প্রতিপালন কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এসব সতর্কবার্তা সার। আদতে সবকিছু হচ্ছে বিধির বাইরে গিয়ে। অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও মার্কেটে, বাজারে প্রতিদিনই সকাল থেকে অসংখ্য মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশ উপেক্ষা করে সুপার মার্কেটে অগণিত মানুষের ভিড় হচ্ছে। মাস্ক পরছেন খুব কম লোকই, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা কোথাও দেখা যাচ্ছে না আর শারীরিক দূরত্ব বিষয়টাই কেমন যেন অজানা।

শপিং করতে এসে ভিড়ের মধ্যে মানুষজন করোনাবিধি লঙ্ঘন করলে তা রুখতে কড়াকড়ি প্রশাসনিক তৎপরতা দেখতে চায় সেসব মানুষ, যারা নিয়ম মেনে চলছেন। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনকারীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মানুষের নাগরিক অধিকার হরণ করছেন। এদের বিরুদ্ধে তাই পুলিশি ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই এখন চাওয়া সচেতন মানুষের।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ