X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কী বার্তা দিলো বৈশ্বিক রাজনীতিকে?

ডা. জাহেদ উর রহমান
০৬ মে ২০২১, ১৮:২৫আপডেট : ০৬ মে ২০২১, ২২:০২

ডা. জাহেদ উর রহমান কেরালা, তামিলনাড়ু, আসাম, পন্ডিচেরি-  এ দফায় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই চারটি রাজ্যের‌ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোর নির্বাচন নিয়ে আদৌ কোনও আলোচনা হয়নি। এমনকি ভারতেও কেন্দ্রীয়ভাবে খুব বেশি কথাবার্তা হয়নি। অত্যন্ত ক্ষুদ্র (৩০টি বিধানসভা আসন) গুরুত্বহীন রাজ্য পন্ডিচেরি বাদ দিয়ে এক তামিলনাড়ু ছাড়া বাকি ২ রাজ্যে কী হবে সেটা খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। তার চাইতে বড় কথা, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ দখল করার জন্য সর্বস্ব বাজি ধরে এটিকে পরিণত করেছিল ‘মোদি বনাম দিদি’ লড়াইয়ে। তাই মিডিয়ার দৃষ্টি সেদিকেই ছিল। আর বাংলাদেশের ঠিক পাশের একই জাতিসত্তার মানুষের রাজ্য হাওয়ায় আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন ছিল তুমুল আলোচনার ব্যাপার।

এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। কেন্দ্রে তো বটেই, অনেক রাজ্যে সরকার গঠন করে বিজেপির তখন দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাসী অবস্থা। খোদ রাজধানীতেই একেবারে নবীন একটা দলের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চয়ই শাসকগোষ্ঠীর অহমে চরম আঘাত করেছিল। সর্বশক্তি নিয়োগ করে দিল্লি জয়ে। ফর্মুলা সেটাই যেটা ভারতবর্ষ সাময়িকভাবে হলেও জয় করেছে– আইডেন্টিটি পলিটিক্স (পরিচয়বাদী রাজনীতি)। দিল্লিতে সেই ফর্মুলা সফল করে তোলার জন্য বিজেপি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ ‌ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, নরেন্দ্র মোদির পরের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা অমিত শাহ তো ছিলেনই, ছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। সর্বশক্তি দিয়ে লড়াও বিজেপির যাচ্ছেতাই পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। সেই নির্বাচনের পরপরই বাংলা ট্রিবিউনে লেখা একটা কলামে আমি এই দাবি করেছিলাম দিল্লি নির্বাচন বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দিল্লির তুলনায় যেকোন‌ও‌ বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য। শুধু তাই না, পূর্ব ভারতের আসাম, ত্রিপুরায় সরকার গঠন করতে পেরে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী হয়েছিল। আর শুধু সেটাই না, বিজেপির ট্রেডমার্ক রাজনীতি আইডেন্টিটি পলিটিক্সের অন্তত দুটি কার্ড এখানে খেলার সুযোগ আছে। সেই কার্ড ব্যবহার করে তাদের সাম্প্রতিক সাফল্যও খুব ঈর্ষণীয় ছিল। এই তো কিছুদিন আগে এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে পেরেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে।

তৃণমূলের জেতা ২২টি আসনের বিপরীতে বিজেপি জিতে নিয়েছিল ১৮টি আসন। আরও অবাক করা ঘটনা আছে, পপুলার ভোটের ক্ষেত্রে– দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান মাত্র ২.৬% (তৃণমূলের ৪৩.৩% -এর বিপরীতে বিজেপির ৪০.৭%)।

গত লোকসভার আগের লোকসভায় বিজেপির ফলাফলের সঙ্গে এই ফলাফলকে তুলনা করলে তাদের সাফল্যকে অবিশ্বাস্য উন্নতি বলে মানতেই হবে। সুতরাং কিছুটা সিরিয়াস চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যাবে, এমন বিশ্বাস হওয়া খুব অযৌক্তিক নয়।

বিজেপি অকল্পনীয় রকম চেষ্টা করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে দু’টি পরিচয়বাদী কার্ড খেলা যায়, খেলা হয়েছিল‌ও– একটা ধর্মীয়, হিন্দুত্ববাদ আর আরেকটা নাগরিকত্বের অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি। এই খেলার সবচেয়ে পাকা দুই খেলোয়াড় যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিত শাহ নির্বাচনের প্রচারণার পুরোটা সময়ই প্রায় পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন। অকল্পনীয় পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এমনকি এক অভিনব নির্বাচনি কৌশলে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমাদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ‘রথ দেখা’ তো ছিলই তার ‘কলা বেচা’ ছিল আসলে গোপালগঞ্জের মতুয়া সম্প্রদায়ের আদি মন্দিরে গিয়ে তাদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা।

পশ্চিমবঙ্গের ৩০-এর বেশি আসনে এই মতুয়ারাই ফলাফল নির্ধারণ করে দিতে পারেন। আরও পঞ্চাশের বেশি আসনে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।

যে তিন জন মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথ জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আর নরেন্দ্র মোদি তো প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দেশের প্রধানমন্ত্রী। যে সময় পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রচণ্ড রকম ডামাডোল চলছে ঠিক সে সময় ভারত করোনার বীভৎস পরিস্থিতিতে চলে যায়। সেই সময়ে এমন বড় জনসভা করে এখানেও করোনা ছড়াচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন সরিয়ে রেখেও বলা যায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী সেই করোনা মোকাবিলায় তাদের পূর্ণ মনোযোগ না রেখে তারা চষে বেড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ। এদিকে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তর প্রদেশ করোনার কারণে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়া রাজ্যগুলোর একটা। কিন্তু না, সবকিছু ছেড়েছুড়ে তারা বসে ছিলেন বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বিজেপির খুব আবেগগত একটা জায়গাও কিন্তু আছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএস-এর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে মাঠে এসেছিল ভারতীয় জনসংঘ নামে ১৯৫১ সালে, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সেটাই কালক্রমে জনতা পার্টি এবং শেষে এসে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-তে পরিণত হয়। তাই বলাই যায় বিজেপি দলটির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বাংলার সন্তান। বাংলা দখল করার ব্যাপারে মরিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে বহু আগে থেকেই বিজেপি এই বিষয়টি নিয়ে রাখঢাক করেনি।

দিল্লির নির্বাচনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিল আমি দেখতে পাই। যেকোনও পরিচয়বাদী রাজনীতির একটা ঝুঁকি থাকে- কেউ যখন কোনও একটা পরিচয়কে সামনে এনে রাজনীতি করে তার প্রতিক্রিয়ায় অপর পক্ষ অন্য কোনও পরিচয়কে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। দিল্লিতে কেজরিওয়াল সেটা করেননি। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই পথে খুব সিরিয়াসলি যাননি। এটা মানি, এবারের নির্বাচনি প্রচারণার সময় মমতা মন্দিরে পুজো দিয়েছেন আগের চাইতে বেশি; ‘বাঙালি’ পরিচয়কে কিছুটা সামনে এনেছেন। কিন্তু তারা উভয়েই যেহেতু সেই সময়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল ছিলেন, তাই তারা তাদের মানুষের জন্য করা কাজগুলো সামনে নিয়ে আসতে পেরেছেন। মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন সেগুলোর ভিত্তিতে এবং মানুষকে বিভাজিত করে ভোট জেতার কৌশলের বিরুদ্ধে কথা বলে।

এই নির্বাচনের ফলের সঙ্গে আমি আরেকটা রাজ্যের নির্বাচনের ফলকেও যুক্ত করতে চাই। তামিলনাড়ুতে হেরে গেছে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে দলটি। ২০১৬ সালে জয়ললিতার মৃত্যুর পর এবারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনের পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে তাদের। তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী করুনানিধির সন্তান ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এম কে স্টালিনের নেতৃত্বাধীন ডিএমকে  কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জিতে যায়। মজার ব্যাপার, এআইএডিএমকে ভোটে লড়েছে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে। অর্থাৎ এখানেও বিজেপির পরাজয় হয়েছে  এটা বলাই যায়।

সারা পৃথিবীতে পরিচয়বাদী রাজনীতির এক ধরনের উত্থান দেখা যাচ্ছিল গত এক দশকের বেশি সময় ধরে। পৃথিবীর উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের জন্য এটা একটা অশনি সংকেত ছিল। জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত ছিল এই পরিচয়বাদী রাজনীতির একটা অতি উর্বর ক্ষেত্র। সেই ধারাটা কতটুকু শক্তি পেতে পারে সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল সারা পৃথিবীতে।

কিছু দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরেক অতি আলোচিত পরিচয়বাদী রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছিলেন জো বাইডেনের কাছে। সেই নির্বাচনেও ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করার জন্য জো বাইডেন পাল্টা কোন‌ও পরিচয়বাদী রাজনীতি সামনে আনেননি,‌ ভোটারদের সামনে গেছেন উদার গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। এই নির্বাচনের ফলাফল এক ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল পরিচয়বাদী রাজনীতি শেষ না হয়ে গেলেও সেটা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে শুরু করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ভারতের সাম্প্রতিক রাজ্য নির্বাচনের ফলগুলো একই ধরনের ইঙ্গিত দেয়। সুতরাং ভারতের এই নির্বাচনের ফলাফল বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতবহ ঘটনা বলে আমি বিশ্বাস করি।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি একেবারে মোদি বনাম দিদি বানিয়ে ফেলেছিল বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীসহ মমতার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীসহ নানা পর্যায়ের বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীকে দলে ভিড়িয়েছিল বিজেপি। ওদিকে অন্য যে উল্লেখযোগ্য জোটটি ছিল কমিউনিস্ট পার্টি, কংগ্রেস এবং ভারতীয় সেক্যুলার ফ্রন্টকে মিলিয়ে সেটিও যেটুকু ভোট পেয়েছে সেটা বিজেপির ভোট ব্যাংক না, তৃণমূলের ভোট ব্যাংক‌। চ্যালেঞ্জটা আসলেই ভীষণ বড় ছিল কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে কী দারুণভাবেই না উতরে গেলেন মমতা। তার এই বিজয় ভবিষ্যতে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কোন‌ও কেন্দ্রীয় জোট গঠন করার ক্ষেত্রে মমতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে দরকষাকষির সুযোগ করে দেবে। কথাটা সম্ভবত ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে গেলো, যাক ইঙ্গিত বাদ দেই– এই বিজয় ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দরকষাকষির খুব ভালো সুযোগ করে দেবে।

পাদটীকা: দিল্লির নির্বাচনে কেজরিওয়ালের পরামর্শক ছিলেন আলোচিত নির্বাচন কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর। তিনি কাজ করেছেন মমতার সঙ্গেও। এটা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে খুবই সমস্যা হয়েছিল; অনেক সিনিয়র নেতা মেনে নিতে চাননি তার খবরদারি। কিন্তু তিনি প্রমাণ করলেন নিজের যোগ্যতা। নির্বাচন শুরুর আগে নানা প্রতিষ্ঠান নানা জরিপ করছিল, ভোটগ্রহণ শেষে এক্সিট পোল হচ্ছিল,  কিন্তু নির্বাচন শুরুর আগেই প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন বিজেপির আসন সংখ্যা কোনোভাবেই তিন অঙ্কে যাবে না। কী অসাধারণভাবেই না সেটা সত্যি হলো। নির্বাচনে এমন নির্বাচনি কৌশলবিদের একের পর এক সাফল্য প্রমাণ করে সময়ের সঙ্গে রাজনীতি অনেক পাল্টেছে। সনাতনী রাজনীতির অনেক কিছু পাল্টে ফেলতে হবে আগামী দিনে।

লেখক: শিক্ষক ও অ্যাকটিভিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ