X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশল ঠিক থাকলে ভাঙা পায়েও গোল দেওয়া যায়

আবদুল মান্নান
০৭ মে ২০২১, ১৬:০৫আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ১৬:০৫
আবদুল মান্নান ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্র শাসিত রাজ্যের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার (রাজ্য বিধানসভা) সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো, যার মধ্যে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একটি। অন্য কোনও রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের তেমন কোনও আগ্রহ না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ যেমন ছিল ঠিক তেমন আগ্রহ ছিল এই দেশের মিডিয়ার। এই আগ্রহের কারণ নানাবিধ ও ঐতিহাসিক। একসময় বাংলা নামে একটি দেশ ছিল। তার বিস্তৃতি ছিল বিহার ও উড়িষ্যা পর্যন্ত। পুরো ভারতবর্ষে এই বাংলা ছিল সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধশালী। ইতিহাসের মারপ্যাঁচে সেই বাংলা ভাগ হয়ে গেলো ১৯৪৭ সালে। ঐতিহাসিক আর রাজনীতিবিদরা বলে থাকেন ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়েছিল। বাস্তবে ভারত ভাগ হয়নি ,হয়েছে বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগ। সে অন্য প্রসঙ্গ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস অথবা জোট সরকার পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে, মাঝখানে কেন্দ্রের শাসন (১৯৬৭-১৯৭২)। ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর এই রাজ্য শাসন করেছে বামফ্রন্ট সরকার। ২০১১ সালে অনেকটা দমকা হাওয়ার মতো বামফ্রন্ট সরকারকে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় এলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা, যাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দিদি অথবা পিসি বলে জানেন, রাজনীতি শুরু করেছিলেন কংগ্রেস দিয়ে। এই দল থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি ভারতের রেলমন্ত্রীও হয়েছিলেন। তারপর দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গঠন করলেন তৃণমূল কংগ্রেস। একেবারেই পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। শুরুতে কেউ তেমন একটা পাত্তা দেয়নি তৃণমূল অথবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই মমতা ২০১১ সালের নির্বাচনে ঝড়ো হাওয়ার  মতো উড়িয়ে দিলেন বামফ্রন্টকে। অবশ্য সেবার তৃণমূলকে জোট বাঁধতে হয়েছিল কংগ্রেস আর সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে (কমিউনিস্ট)। সেই জোট বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২২৭টি আসনে বিজয় লাভ করেছিল আর তৃণমূল একা পেয়েছিল ১৮৪টি আসন। সেবার সরকার গঠন করতে তৃণমূলের শরিক দলগুলোর সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। সম্প্রতি সমাপ্ত নির্বাচনে তৃণমূলের ধস নামানো বিজয়ের পর মমতা পর পর তিনবার পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। এতে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সমর্থকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও খুশি। আর এপার বাংলায় যারা ভারতের রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখেন তারাও বেশ খুশি। এই নির্বাচনে তৃণমূল বিজয়ী হওয়ায় যারা খুশি হয়েছেন তারা ভিন্ন ভিন্ন কারণে খুশি হয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। আবার এই বাংলায় একটি বড় অংশের মানুষের কাছে মমতা একটি বিষয় নিয়ে বেশ সমালোচিত আর সেটি হচ্ছে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে তাঁর আপত্তি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সেই আপত্তি থেকে তিনি সহজে সরে আসবেন না।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ নানা কারণে। বাংলার দুপারের মানুষ ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প সাহিত্য, ভাষা আর সংস্কৃতি সবকিছুর মধ্যেই একটি অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র বজায় রাখতে পেরেছে। এপারের মানুষ ওপারে গেলে অথবা ওপারের মানুষ এপারে এলে কেউই মনে করে না দেশ ছেড়েছেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে এক নজিরবিহীন উত্তেজনা দেখা গেছে, যা সাধারণত জাতীয় নির্বাচনে দেখা যায়। ভারতের কোনও একটি রাজ্যের বিধান সভার নির্বাচনে অতীতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে কেন্দ্রের ডজন খানেক মন্ত্রীর এত দৌড়ঝাঁপ কখনও দেখা যায়নি। নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পশ্চিমবঙ্গে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছিল। যেকোনও মূল্যে তৃণমূলকে ঠেকাতে  হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে একবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, নির্বাচনি জনসভা করেছেন। নির্বাচন উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদি মোট ১২ বার পশ্চিমবঙ্গ সফর করে ১৮টি সমাবেশ করেছেন। শুধু নির্বাচনে আগের সপ্তাহে করোনার ভয়াবহতার কারণে তিনি পশ্চিমবঙ্গে আসেননি। এ কারণে চারটি জনসভা শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে। এসেছেন মোদিসহ মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ অন্য মন্ত্রীরা। মোদি কিছুটা সংযত আচরণ করলেও অন্যদের  আচরণ ছিল উসকানিমূলক ও কখনও কখনও অনভিপ্রেত ও অসৌজন্যমূলক। মমতা তার জনসভায় বক্তৃতা শেষ করেছেন ‘জয় বাংলা’ বলে। এই দুটি শব্দ অনেককাল আগে কবি নজরুল ইসলাম ব্যবহার করেছেন। বাংলা ভাগ হয়েছে তা বলে নজরুল তো ভাগ হয়নি। অমিত শাহ ও তার সহকর্মীরা অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলেছেন মমতা দুই বাংলাতে একত্রিত করতে চান। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় আড়াই কোটি মুসলমান বাস করেন। এই রাজ্যে মোট ভোটের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলমান। প্রয়োজনে মমতা তাদের পাশে দাঁড়ান। মমতা ইসলামের ইতিহাসের স্নাতক। তিনি ইসলাম বোঝেন। বিজেপি পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বাংলাদেশ হতে অনুপ্রবেশকারী ভাবে। কোন দুঃখে বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করবে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। এ দেশের কিছু মানুষ ব্যাংকের টাকা লুট করে অথবা কোনও বড় ধরনের অপরাধ করে সীমান্তের ওপারে গিয়ে আশ্রয় নেন। সব ধরনের পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চেয়ে কোনও অংশে খারাপ নেই। পশ্চিমবঙ্গেও মুসলমানরা তৃণমূলকে সমর্থন করেন এই অজুহাতে বিজেপি নেতারা মমতার নামের আগে বেগম যোগ করেছেন। ঘোষণা করেছেন নির্বাচনে জিতলে সব ‘অনুপ্রবেশকারীকে’ তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিজেপির রাজনৈতিক দর্শনই হলো কট্টর হিন্দুত্ববাদী। সংসদে তারা এনআরসি আর সিএবি নামক দুটি মধ্যযুগীয় আইন পাস করেছে। সেই আইনের অধীনে সকল ‘বৈধ ভারতীয়’কে তালিকাভুক্ত করে বাকিদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হবে। এতে যেকোনও মুসলমান আতঙ্কিত না হয়ে পারে না। সোজা কথায় বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভয়াবহ কার্ড খেলতে চেয়েছে।

বিজেপি নেতা অমিত শাহ কথায় কথায় বলতেন বাংলাদেশ হতে আসা অনুপ্রবেশকারীরা উইপোকার মতো, যা তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার কাছ হতে কেউ আশা করে না। নির্বাচনের পর বলিউডের এক খ্যাতিমান তারকা কঙ্গনা রানাউত আবিষ্কার করেছেন মমতার এই জয়ের পেছনে বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গাদের হাত আছে। তিনি প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার আবদার করেছেন। একজন ব্যক্তি ‘গণ্ডমূর্খ’ না হলে এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। এই নির্বাচনে একদিকে মমতা একা লড়ছেন আর অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা। তার ওপর নির্বাচনের আগে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন একাধিক বিধায়ক (সংসদ সদস্য)। মমতার বিরুদ্ধে জোট গঠন করেছে কংগ্রেস, বাম ফ্রন্ট আর হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ফুরফুরা শরিফের পীর সাহেব আব্বাস সিদ্দিকীর ওয়ান ম্যান পার্টি ইন্ডিয়ান সেক্যুলার পার্টি। সবার লক্ষ্য একটাই তৃণমূলকে ঠেকাতে হবে। সকলে অনেকটা অবাক হয়ে দেখলো একজন মহিলাকে ঠেকাতে এত সব তোড়জোড়, তাও আবার মহিলার এক পা প্লাস্টার করা, হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন । মমতা স্লোগান তুললেন ‘খেলা হবে’ যা নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শামিম ওসমানের স্লোগান। বিজেপির নেতারা বললেন ভাঙা পা নিয়ে কীভাবে খেলবেন? কৌশল ঠিক থাকলে ভাঙা পা নিয়েও গোল করা যায় তা মমতা এবার প্রমাণ করেছেন। তিনি নির্বাচনি লড়াইটাকে বাঙালিত্ব বনাম হিন্দুত্ববাদী লড়াইতে পরিণত করতে পেরেছেন। মানুষকে বুঝাতে পেরেছেন বিজেপি বিজয়ী হওয়ার অর্থ হচ্ছে রাজ্যে একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা। বাঙালি সব সময় সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থাকার চেষ্টা করেছেন। ছেচল্লিশের যে ভয়াবহ দাঙ্গা অবিভক্ত বাংলায় হয়েছিল তার পেছনে ছিল রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থ। তার জন্য মূল্য দিয়েছে সাধারণ মানুষ। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান সরকার একাধিকবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। তা যে শুধু হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। বাঙালি অবাঙালিদের মধ্যেও তারা দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে।

বিজেপি’র একটা বড় কৌশলগত ভুল ছিল তারা বিজয়ী হলে কে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন তা পরিষ্কার করতে পারেনি। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ঠিকই জানে তৃণমূল বিজয়ী হলে মমতাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ জীবনযাপন করেন। সরকারি বাড়িতে না থেকে কালিঘাটে নিজের পৈতৃক বাড়ি, তাও আবার টালার চালা দেওয়া, তাতে থাকেন। লেখালেখি করেন, ছবি আঁকেন। তা বিক্রি করে সংসারে খরচ করেন। এই সাধারণ জীবনযাত্রা মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গে এবারের মোট ভোটারদের ৪৬ শতাংশ নারী। আর মুসলমানরা সব সময় মমতাকে প্রয়োজনে তাদের পাশে পেয়েছেন। এনআরসি আর সিএবি’র  খড়্গ যখন মুসলমানদের মাথার ওপর ঝুলছিল, মমতা ঘোষণা করেছেন এই আইন তাঁর রাজ্যে প্রয়োগ করে তিনি অশান্তি সৃষ্টি করতে দিবেন না। শেষ পর্যন্ত  ফুরফুরার পীর সাহেবের মুসলমান ভোটারদের তাঁর পক্ষে টানার স্বপ্নই রয়ে গেছে। তাঁর দল সিট পেয়েছে একটি। তাঁর জোটের অন্য কোনও শরিক দল কোনও আসনে জয়ী হতে পারেনি। তারা কুড়িটি সিটে প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাম ঘরানার কোনও সদস্য নেই।

মমতা নিজের আসনে জিততে পারেননি। তবে সেই আসনে ভোট গণনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের আচরণও প্রশ্নাতীত নয়।  মমতা বলেছেন তিনি এই আসনের ফলাফল নিয়ে আদালতে যাবেন। বুধবার মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাঁকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ১৮০ দিনের মধ্যে যেকোনও একটি আসন থেকে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। তা তাঁর জন্য অসুবিধা হবে না।
কয়েক দিনের মধ্যে মমতা তৃতীয় মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করবেন। অনেক কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোট ভোটের তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৯৪ (২১৩টি আসন) শতাংশ আর বিজেপি পেয়েছে ৩৮.১৩ শতাংশ (৭৭টি আসন)। এর অর্থ ভোটের হিসাবে  বিজেপি তৃণমূলের বেশ কাছে চলে এসেছে । ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপির ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র তিনটি আসন আর ভোট পেয়েছিল ১০.১৬ শতাংশ।  এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি ধীরেসুস্থে অগ্রসর হচ্ছে। সাবধান না হলে সামনের বার ফলাফল ভিন্নও হতে পারে । ১৯৮৪ সালে প্রথমবার যখন বিজেপি লোকসভায় নির্বাচন করে তারা মাত্র দুটি আসনে বিজয় লাভ করেছিল। আর বর্তমানে তারা কেন্দ্রে বসে দেশ শাসন করছে। মমতার এই বিজয় ধরে রাখতে হলে তাঁকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। ভারতে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

গত ২৮ এপ্রিল লন্ডন হতে প্রকাশিত গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখক অরুন্ধতি রায়ের ভারতে কোভিড পরিস্থিতি ও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি লিখেছেন দেখা গেছে কলকাতার অধিবাসীদের মধ্যে প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন কোভিড পজিটিভ। এটি একটি আতঙ্কিত হওয়ার মতো খবর। তৃণমূলের এই মুহূর্তে বড় দায়িত্ব হচ্ছে এই অতিমারি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আর দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই কাজটি অনেক জায়গায় সিপিএম’র সদস্যরা শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে, যদিও সিপিএম সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে কোনও আসন পায়নি। তৃণমূল কর্মীদের সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের একটি বড় অভিযোগ হচ্ছে অনেক জায়গায় তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি করেন, তোলাবাজি  (কোন কাজের বিনিময়ে জোরপূর্বক বাড়তি টাকা আদায় করা) করেন । তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীকে এসব দুর্বৃত্তকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নির্বাচনের পর রাজ্যে বিভিন্ন অংশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এসব যদি রাজ্য সরকার থামাতে না পারে, তখন কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে পারে ।

বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে স্বাভাবিক সময়ে বেশ বড় অবদান রাখেন। শুধু ঈদ বাজার হতো কয়েক শত কোটি টাকার। গত দু’বছর তা হচ্ছে না। মমতা চেষ্টা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে। শেখ হাসিনাও তাঁকে স্নেহ করেন । এখন সময় হয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে তাঁর চিন্তা ভাবনা পরিবর্তনের। কেউ কেউ ২০২৪ সালের ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর মমতাকে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পদেও। পথটা নিঃসন্দেহে কঠিন কিন্তু অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। প্রয়োজন দূরদর্শিতা, ধৈর্য আর কর্মদ্বারা নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখা। নরেন্দ্র মোদি যদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নয়? মমতা বান্দ্যাপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যাত্রা শুভ হোক। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যেসব অমীমাংসিত সমস্যা আছে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার সমাধান হোক। বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব অটুট থাকুক ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ