X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও লিখে যাই, কেন?

তুষার আবদুল্লাহ
০৮ অক্টোবর ২০১৬, ১২:১৩আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৬, ১২:২৯

তুষার আবদুল্লাহ ইচ্ছে করছে না কিছু লিখতে। ভাবনার উঠানে কত বিষয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চোখ রাখলেই লিখে ফেলা যাবে বিস্তর। লেখা অনলাইনে উঠিয়ে দেওয়া হবে। কিছু লাইক-শেয়ার জুটবে। ব্যস এইতো প্রাপ্তি তাই না? এতটুকুতেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে হবে। কারণ যে বিষয়ে উদ্বেগ নিয়ে লেখা। যে ঘটনাটি নিয়ে রাষ্ট্র, সমাজ বা কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি, তাদেরকে কি লেখাটি স্পর্শ করতে পেরেছে? ইভটিজিং নিয়ে তো কত কথাই বলে গেছি। বলেছি আমি, বলেছি আমরা। তারপরও কি ইভটিজিং থেকে মেয়েদের নিরাপদ রাখা যাচ্ছে? শুধু রাষ্ট্রের ওপর ভরসা করে তো ইভটিজিং রোধ করা যাবে না। এজন্য পরিবারকে সচেতন হতে হবে। সক্রিয় হতে হবে সমাজের চোখ। কিন্তু দেখছি পরিবারের সঙ্গে সন্তানের বিচ্ছিন্নতা বাড়ছেই। সমাজও রূপ নিয়েছে দ্বীপচরে। বলেছিলাম- ছাত্র সংগঠনগুলোর ভেতর থেকে সৃজনশীল রাজনীতির চর্চা উধাও হয়ে যাওয়ার কথা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র সংসদ ফিরিয়ে আনার অনিবার্য যুক্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বলেছি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার্থী হয়ে যাওয়ার পরিণতির কথা। ক্লাস রুমের চেয়ে কেন কোচিং ক্লাস এখন জনপ্রিয়। কৃষকের উৎপাদনের খরচ না ওঠার দীর্ঘশ্বাস। তার বিদ্যুৎ, সার, বীজ ন্যায্য দামে না পাওয়ার ক্ষোভ। নদীর দখল হয়ে যাওয়ার দুঃখবোধ। সড়কে সড়কে যানজট, মৃত্যুর মিছিলের কথাওতো কম বলা হয়নি। বলা হয়েছে সাইবার অপরাধের কথা, জঙ্গিবাদে তরুণদের দলে ভেড়ানোর কৌশল ও বাস্তবতা। বলতে আমরা ভুল করিনি শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ এবং সাংবাদিকের জবাবদিহীতা ও পেশাদারিত্বের দুর্বলতার কথা।
এই যে লেখার মাধ্যমে যা কিছু বলেছি বলে ফিরিস্তি তুলে দিলাম তার মধ্যে হয়তো কোনও কিছু বাদও থেকে গেল। কিন্তু যেটুকুই তুলে ধরলাম সেই বলার জায়গাগুলোতে কি কোনও পরিবর্তন এলো? আমরা সেবাখাতের দুর্নীতি নিয়ে লিখছি, আমরা ক্ষমতা বলয়ে উচ্চফলনশীল নেতাদের আস্ফালন, সমাজে পুঁজির দৌরাত্ম্য নিয়ে লেখেছি, বলেছি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা। কিন্তু এসব কিছু্ই আগের মতই আছে, চলছে। সমাজ নির্লিপ্ত। সমাজের চরিত্র হচ্ছে অন্ধকারেও বাতি নিভিয়ে চলার। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাবে, এমন করে পথ চলার অভ্যাস ভুলে গেছে সমাজ। চারদিকে কেবল সমাজ কেবল দেয়াল দেখতে পায়। দেয়ালকে স্পর্শ করে এমন উচ্চতায় শব্দ করা নিষেধ। দেয়াল গলিয়ে সেই শব্দ কোন গন্তব্যে পৌঁছে যেতেই পারে, যা সমাজের কাছে এখন অনাকাঙ্ক্ষিত।
রাষ্ট্র সক্রিয়। রাষ্ট্রের যে ধর্ম সেই ধর্ম মেনেই। উন্নয়নের সূচক দেখে তার পথ চলার অভ্যাস। রাষ্ট্র সেইভাবেই চলছে। রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পুঁজির স্বর্গের। উন্নয়নের পিরামিডের। সমস্যা হলো রাষ্ট্রকে সুষম করে যে দুই উপকরণ, রাজনৈতিক সংগঠন এবং সমাজ। তাদের কাছে জীবনের, রাষ্ট্র গড়ার কোনও ইশতেহার নেই। উভয়পক্ষই পুঁজির অংশীদার হতে চায়। উষ্ণ থাকতে চায় ক্ষমতার তাপে।

ফলে যে কথা আমরা লিখে যাচ্ছি বলে যাচ্ছি সেই কথা তাদের স্পর্শ করে না। এর অন্য কারণও থাকতে পারে হয়তো, আগে বলার মতো লোকেরাই বলতেন। তাদের বলার জন্য প্রস্তুতি ছিল। কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে তারা বললেও সেই বলার মধ্যে ছিল প্রজ্ঞার সুগন্ধি। এখন বলার জায়গা বেড়েছে, তাই অনেককে দিয়ে বলাতে হয়। সেই বলা হয়তো প্রজ্ঞাহীন। লেখার জায়গাটিও হয়তো সেই রকম। তাই কেউ কিছু শুনতে কান পাতছেন না, চোখ রাখছেন না। না পাঠক, না দর্শক, না কোনও কর্তৃপক্ষ। তাই আজকাল লিখতে, বলতে মন টানে না। এইতো ক্রিকেটের কথাই যদি বলি- সেই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বলে আসছি দায়িত্বশীল ব্যাটিং এর প্রয়োজনীয়তার কথা। কই কালওতো মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ একই ভাবে ব্যাট চালালেন। খেলোয়াড় নির্বাচনে নাসির দলে জায়গা পাচ্ছে না, দলে তার প্রয়োজন থাকা স্বত্ত্বেও। তবুও লিখছি কারণ- লেখাটাই বুঝি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার যুৎসই মাধ্যম।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো মোটরসাইকেলচালকের
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো মোটরসাইকেলচালকের
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিরুৎসাহের কারণ ব্যাখ্যা করলেন শেখ হাসিনা
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিরুৎসাহের কারণ ব্যাখ্যা করলেন শেখ হাসিনা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ