X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বড়দিনে বাঙালি মুসলিম ও ইলিশ

দাউদ হায়দার
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:০৩আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:০৬

দাউদ হায়দার ‘আপনি অবিবাহিত, আপনার সন্তানাদি নেই। আমাদের এক কন্যা, এক পুত্র। কন্যার বয়স আট, পুত্রের ছয়।’
- বলতে চাইছেন আপনারা বিবাহিত।
‘নিশ্চয়। মৌলভী ডেকে, সাক্ষী রেখে, তিন কবুল করে বিয়ে করেছি।’
- জার্মানিসহ ইউরোপের বহু দেশে বিয়ে না করে সঙ্গিনীর সঙ্গে একত্রে বসবাস, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
সন্তান হচ্ছে। সন্তানকে আদর-স্নেহ-দেখভালে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর চেয়ে বরং বেশি। ভালোবাসে। বিয়ে প্রায়-উঠেই যাচ্ছে, বলে ‘সেকেলে কালচার।’ স্ক্যানডেনেভিয়ান দেশে সত্তর ভাগের বেশি বিবাহবিচ্ছেদ, জার্মানিতে ষাট ভাগ। আরও বাড়ছে। গত বছর, গোটা জার্মানিতে দুই হাজার ছয়শ’ সাতাত্তর নরনারীর বিয়ে, এই নিয়ে মিডিয়ায় খবর, ধর্মযাজকরা মহাখুশি। বিয়েও এখন চাকরি, অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। বিয়েও যে কখন কর্পোরেট সংস্থার অধীনস্থ হবে, ভাবনা তরুণ-তরুণীর। বিয়ের পরে বিচ্ছেদ হলে বিচ্ছেদের খরচ ০ গুণ। সন্তান মায়ের কাছে থাকলে আরও খরচ, দিতে হবে বাপকেই, যদি সামর্থ্য থাকে।
বিয়ে মানেই অফিসিয়ালি স্বামী-স্ত্রী, কিন্তু তার অর্থ এই নয় স্বামীর পদবী নিতে হবে স্ত্রীকে, বাধ্য নয় নিতে। অধিকাংশই নেয় না আজকাল। যখন পূর্ব জার্মানি ছিল, আজকের চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, স্বামীর পদবী ছিল মেরকেল। বিচ্ছেদের পরে আরেকজনকে বিয়ে করেছেন ঠিকই, কিন্তু প্রাক্তন স্বামীর পদ রদ করেননি, বহাল রেখেছেন। বর্তমান স্বামীরও আপত্তি নেই।
বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের কথা যখন বলছেন, আরো একটি বিষয় জেনে রাখবেন, এই বার্লিনেই, তিন বাচ্চা একত্রে দেখলে (ভিন্ন পিতামাতার) এক বাচ্চার বাবা-মায়ের বিয়ে হয়নি। না হোক, এই নিয়ে কী সন্তানের মাথাব্যথা? আরো জানবেন,  মা যদি চান সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেটে পিতার নাম থাকবে না, বাধ্য নয় লিখতে সোস্যাল ডিপার্টমেন্ট। এমনকি, মা যদি না চান তাঁর পরিচয় দিতে। নথিপত্রে অনুল্লেখিত থাকবে। বহু বছরই, পাসপোর্টে বাবা মায়ের নাম থাকে না। দরকার নেই। ব্যক্তি পরিচয়ই মূলে।
জিনাত এবং তাঁর স্বামী মকবুল কেন ‘আপনি অবিবাহিত, আপনার সন্তান নেই’, বলছিলেন, নানাকথায় পরিষ্কার হলো। ওঁরা সিলেটের। পীর পরিবারের। ইসলাম অন্নপ্রাণ। জিনাত সাধারণত ঘরের বাইরে যান না। কালেভদ্রে গেলেও, বোরকা না পরলেও, হিজাবে মাথা ও দুই চোখ ঢাকেন। স্বামীর মাথায় সর্বদাই টুপি। শীতকালে ‘ক্যাপ’ পরেন। উলের। মকবুল এক আরবি রেস্তরাঁয় কাজ করেন, ‘সবই খাবারই হালাল এখানে।’ জানান।
‘আপনার সন্তান নেই, ভালো আছেন।’
-কেন? জিজ্ঞেস করি।
জিনাত-মকবুলের কথা, ‘ভাইনাক্টেন’-এ ক্রিস্টমাস স্কুলে মাত্র দুইদিন ছুটি, নববর্ষ উপলক্ষে একদিন ছুটি, এই ছুটিতে কোথাও যাওয়া যায় না, দেশে যাওয়া যায় না। ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানেই থাকতে হয়। ছেলেমেয়ের স্কুলের ছুটি দেড় মাস, গ্রীষ্মকালে। তখন, আমাদের দেশেও প্রচণ্ড গরম, ছেলেমেয়ে যেতে চায় না। বড় বিপদে আছি।
- কীসের বিপদ?
ভাইজান, সেই কথাই বলছি। মেয়ে ও ছেলে স্কুলে পড়ে (মেয়ে স্কুলে, ছেলে কিন্ডার গার্টেনে)। ভাইনাক্টস উপলক্ষে ২৪ তারিখে (ডিসেম্বর) স্কুল ছুটি। ওই দিন, বিকেল থেকে সন্ধ্যা, রাত আটটা-ন’টা পর্যন্ত, নিকোলাই (সান্তাক্রুজ) খ্রিষ্টানদের ঘরে যায় (যে ঘরে তথা বাড়িতে শিশু ছেলেমেয়ে আছে), উপহার দেয়। ঘর নানা আলোকে সজ্জিত। এ উপলক্ষে স্কুলের সহপাঠিনী/সহপাঠীরা এর-ওর বাড়িতে যায়। উপহার পায়। খাবার পায়। আমাদের মেয়ে ও ছেলের আবদারে ভাইনাক্টস বাউম (ক্রিস্টমাস ট্রি) দিয়ে ঘর সাজাতে হয়, হরেকরকম টুনি বাতি (ক্রিস্টমাসের বিশেষ বাতি) ট্রি-তে। ট্রি-তে নানা ধরনের উপহার সাজানো। মেয়ে ও ছেলের বন্ধুরা আসে। ওরা যে-যার মতো গাছ থেকে উপহার খুলে নেয়। ওদের জন্যে খাবারও তৈরি করতে হয়। আমার মেয়ে, ছেলেও বন্ধুদের (সহপাঠী/ সহপাঠিনী) বাড়িতে যায়। খায়। উপহার নিয়ে আসে। আমরা সাচ্চা মুসলমান, কিন্তু ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে এসব করতেই হয়। না করলে ছেলেমেয়ে ব্যাজার। সাংঘাতিক ঘটনা। ছুটির পরে ছেলেমেয়ের বন্ধুরা জানতে চায় কোন বন্ধুর বাড়িতে কে কোন উপহার পেয়েছে। সেসব উপহার দেখায়। আমাদের মেয়ে ও ছেলেও পায়। কোন কোন বন্ধুর বাড়িতে কী খায়, কত চকলেট, উপহার পেয়েছে দেখায়, আনন্দ করে। কিন্তু ভাইজান......।
- কিন্তুটা কি?
- আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্মে এসব নেই। এসব করা কি গুনাহ নয়?
- বলতে অপারগ। তবে ইসলামের হাদিসেই আছে, ‘শিশুর (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) পরিচর্যায়, আনন্দদানে পিতামাতার কর্তব্য।
শিশুর কোনও ধর্মবোধ নেই। শিশুর জগৎ-ই শৈশবের জগৎ, শিশুর আনন্দে পিতামাতা স্বর্গীয়। একথা সব ধর্মীয় গুরু, বয়স্করাও বলেন। ইসলামেও আছে।’ শুনে, জিনাত-মকবুল চুপ।
যিশুলগ্নে ‘টার্কিশ’ খাওয়া ‘কালচার’ ইউরোপে (নানা দেশে), টার্কিশ-খাওয়ার কিংবদন্তি আছে। থাক।
বাংলাদেশের বাঙালিরা চড়া দামে ইলিশ মাছ কেনে, ইলিশের নানা পদ তৈরি করে, খেয়ে সেলিব্রেট করে যিশুলগ্ন। বলে, “পদ্মার ইলিশের কাছে টার্কিশ? ধ্যেৎ।”

লেখক: কবি ও সাংবাদিক
 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ