X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতি-‘অ-রাজনীতি’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৩৫আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৪৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতি নাকি আদতে সম্ভাব্যতার শিল্প। রাজনৈতিক দল ও নেতারা যেকোনও পরিস্থিতিতে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে। তাহলে একটি বৃহত্তর এবং গভীরতর প্রশ্ন উঠতে পারে, সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি কোনও সম্ভাব্যতা জাগিয়ে তুলেছে দেশবাসী ও তার কর্মী-সমর্থকদের মাঝে? নির্বাচনের মান নিয়ে, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে এবং সেখানে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে বেশি সমালোচনা সইতে হচ্ছে। কিন্তু নিজস্ব কর্মী-সমর্থকরাও কেন ভোট দিতে এলো না, সে উত্তর দিচ্ছে না প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে পরদিনই সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। কিন্তু সেই হরতাল সফলেও দলের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। তাই অনেকে বলছে, বিএনপি নামের দলটির কর্মী-সমর্থকরা ভোটেও নেই, হরতালেও নেই। আছে কেবল মিডিয়ায়। শাসক দল আওয়ামী লীগও শক্ত সাংগঠনিক শক্তি থাকার পরও তার নিজস্ব ভোটারদের কেন্দ্র পর্যন্ত আনতে পারেনি। এমন রাজনৈতিক সংগঠন তাহলে কোন রাজনীতি করে বা কার প্রতিনিধিত্ব করে, সে এক বড় প্রশ্ন।

জনজীবনকে উন্নত করার বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে জনপরিসরে বিতর্ক আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু মানুষ কেন ভোটের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে ফেলেছে, সেই প্রশ্নের আপাতত কোনও সুরাহা দেখছি না। আমাদের ভাবা উচিত, এই নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষিত থেকে ঠিক কী অপেক্ষা করছে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। আমাদের ভাবতে হচ্ছে আগামীতে কোন মানুষ রাজনীতিতে আসবে, তারা কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের রাজনৈতিক আচরণ কতটা রাজনৈতিক আর কতটা সুবিধা আহরণ কেন্দ্রিক হবে ইত্যাদি।

রাজনীতির মাধ্যমেই সরকার গঠন হয়। সরকার সবার, তাই রাজনীতিতে সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত। কিন্তু বলা হচ্ছে আমাদের রাজনীতিতে নাকি উচ্চ শ্রেণির হাতে বন্দি হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে, কারণ এখন এর নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে ব্যবসায়ী আর সাবেক আমলাদের হাতে। তাই নির্বাচনে দরিদ্রের অংশগ্রহণের কথা আসে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এমন চিত্র কোনও আশার আলো সঞ্চার করে না। ফলে যে সম্ভাব্যতার কথা শুরুতে বললাম, সেটি কোন সম্ভাব্যতা, তার ধারণা পাই না সহজে। শুধু এটুকু বুঝতে পারি, গণতন্ত্রে যদি শুধু বিত্তশালী ভদ্রলোকদেরই বারবার নানাভাবে দেখা যায়, তাহলে সবার জন্য গণতন্ত্রকে সফল করার যে দায়বদ্ধতা, সেই দায়বদ্ধতাকে অস্বীকার করে রাজনীতি।

আমাদের তরুণ সমাজ রাজনীতির প্রতি আগ্রহটা হারিয়ে ফেলেছে। এবং তারা ভোট দিতেও যায় না আগের মতো। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? পুরো সমাজে কি কোথাও যথার্থ রাজনৈতিক শিক্ষার খামতি সৃষ্টি হয়েছে? রাজনীতি তো সর্বত্রই আছে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সর্বত্রই মানুষ নানা উপায়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগতভাবে নানা রাজনীতি করে। তাহলে আগামীতে যারা এসবের কান্ডারি হবে, সেই তারুণ্যের কেন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণে এত তীব্র অনীহা ও বিরোধ? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনীতি খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে। রাজনীতি এদেশে কঠিন নানা কারণেই। তাই ব্যক্তিগত সুখের আশ্রয় ছেড়ে এসে খুব কম লোকই চায় রাজনীতি করতে। আমরা রাজনীতির সুফল ভোগ করতে চাই, কিন্তু কারণে অকারণে রাজনীতিকদের সমালোচনা করি, তাদের প্রতি কটু মন্তব্য করি। তাদের যোগ্যতা, সততা, অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলি। এভাবেই ছোটবেলা থেকে একটা রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম সৃষ্টি করি। এভাবেই রাজনীতি থেকে সন্তানকে দূরে রাখার সাফল্যকে আমরা অহংকারের বিষয় করে তুলি।

যে আমরা রাজনীতি নিয়ে এত বীতশ্রদ্ধ তারাই আবার আশা করি শুদ্ধ রাজনীতির। রাজনীতিকরা ভুল করেন, অন্যায় করেন। বাকিরা কি করছে না? আমি যদি রাজনীতির বয়ান না শেখাই, রাজনীতি করতে না দিই, তাহলে আমার সন্তান বড় হয়ে হঠাৎ করে রাজনীতি শুরু করলে, ভুল রাজনীতি হবেই। অথচ এই আমিই গায়ক বানাতে ছোটবেলা থেকে ওস্তাদ রেখে তালিম দেই, শিল্পী বানাতে ছোটবেলা থেকে রংতুলি তুলে দেই শিশুর হাতে। খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সেই খেলার শিক্ষা ও দক্ষতার প্রয়োজন, অভিনেতা অভিনেত্রী হয়ে উঠতে অভিনয় দক্ষতা ও শিক্ষার প্রয়োজন। অথচ এমন একটা চেষ্টা নেই রাজনীতির বেলায়। নেই বলেই রাজনীতির মান বাড়ে না।

বিভিন্ন কারণে আমাদের ছাত্ররাজনীতি আর তার পুরনো জায়গায় নেই। ভালো ছাত্ররাজনীতিই রাজনৈতিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। আজকের ছেলেমেয়েদের যদি আমরা সুযোগ দেই ভালো রাজনৈতিক পরিবেশের তবে তারাই রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত সুখ ত্যাগ করে মানুষের অধিকারের কথা বলতে রাস্তায় নামবে, ভোটের প্রতি আগ্রহী হবে।

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সম্ভাবনার মধ্যেই আগামীর রাজনীতিকে দেখুক। আমাদের সংসদে, আমাদের স্থানীয় সরকারে এমন মানুষ দরকার, যারা ভালো ছাত্র রাজনীতি, ভালো শ্রমিক রাজনীতি থেকে উঠে আসবে। অন্যথায় অরাজনৈতিক নাগরিক সমাজই রাজনীতি করবে বেশি।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
মিয়ানমারে সংঘাতনাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ