X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবার বঙ্গবন্ধু

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৪৪আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৪৬

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে আবারও আমাদের সামনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সত্য হিসেবে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু। মৃত জাতির পিতা শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন আমাদের মাঝে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এটা জানে বলেই তারা বাঙালির জনককে সুযোগ পেলেই আঘাত হানে। তারা তার ভাস্কর্যকে ভয় পায়, কারণ তারা জানে তার ছবি, তার মুখ বাঙালিকে ঠিক পথে নিয়ে আসে বারবার। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বঙ্গবন্ধু ওপর আঘাত, তাই সুদৃঢ় ঐক্যের ধ্বনি চারদিকে। তিনি বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। কখনও তিনি শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর, কখনও তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে যে দৃঢ়তা লাগে তার দৃষ্টান্ত।
বঙ্গবন্ধুর আগে পরে অনেক রাজনীতিক এসেছেন। কিন্তু রাজনীতির সব ক্ষেত্রে তাঁর ওজন ও প্রভাব তাঁকে স্বাতন্ত্র্যে বিশিষ্ট করেছে। তাই আঘাতটা তার ওপরই আসে বারংবার। ১৯৭৫-এ তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেও দমে যায়নি পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্পের শক্তি। গোপালগঞ্জের গহিন গ্রাম থেকে উঠে এসে শেখ মুজিবুর রহমান অনায়াসে আপামর সকলের ‘মুজিব ভাই’ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

শেখ মুজিব ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর, কিন্তু মানুষের নেতা ছিলেন আজীবন। ব্যক্তিগত জীবনে চরম বন্ধু-বৎসল, পরম স্নেহশীল, আন্তরিক, রুচিসম্পন্ন, অভিজাত মুজিব ছিলেন ধর্মপ্রাণ, কিন্তু একইসঙ্গে উদার ও অসাম্প্রদায়িক। নিজের বর্ণময় ব্যক্তিত্বের উচ্চতা দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির জাতির পিতা।

আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তখন তারা প্রথম আঘাত হানে বঙ্গবন্ধুর ওপর। কারণ বঙ্গবন্ধু শুধু পাকিস্তান থেকে বের হয়ে আলাদা একটি দেশ চাননি, তিনি স্বাধীন দেশের ভবিষ্যৎ রচনার কাজটিকে বড় করেই ভেবেছিলেন। এই বৃহৎ ভাবনার একটি হলো তিনি সমাজে শ্রেণি, জাতি, ধর্ম বা বর্ণের বাইরে মানুষকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। এবং তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই পুঁজিবাদী আর সাম্প্রদায়িক শক্তি—উভয়েরই শত্রু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই বিরোধিতা অতিক্রম করতে তাঁর বলিষ্ঠতার অভাব ছিল না বলেই বুক পেতে গুলি গ্রহণ করেছিলেন।

গত ১০/১১ বছরে দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে নগ্ন সাম্প্রদায়িকতার বিকাশও ঘটেছে। এখানে যারা ইসলামের নামে শহিদ মিনার, ভাস্কর্য আর সংস্কৃতির বিরোধিতা করে তারা রাজনৈতিক ইসলামের সহিংস সৈনিক, প্রকৃত ধার্মিক নয়।

তাই এদের মোকাবিলা বা প্রতিরোধ সবসময়ই রাজনৈতিক বিষয়, ধর্মীয় ইস্যু নয়। কিন্তু সেই রাজনীতি রাজনীতি আছে কিনা, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ক্রান্তিলগ্নে এমন প্রশ্ন আসবেই। তবুও মনে রাখতে হয়, দেশজুড়ে যে রাজনীতি সাম্প্রদায়িক আগুন লাগাতে চায় সেই আগুনকে ছড়াতে না দেওয়াই সবার এখনকার কর্তব্য।   

নিকট অতীতে গোটা দেশেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বেড়েছে। রাজনীতির নানা কৌশল আর আপসে এটি হয়েছে। দেশের বেশ কিছু এলাকায় এই শক্তির দৌর্দণ্ড প্রতাপ। এদের রাজনীতি কতটা মারাত্মক, তার প্রমাণ আমরা কক্সবাজার, রংপুর, লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখেছি। দেখেছি ২০১৩ সালের ৫ মে খোদ রাজধানীতেও।

অস্থির সময় এখন। কিন্তু কারা উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে অস্থিরতা সাজায়, সেটা ভাবা দরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখবার ঐতিহ্য আমাদের আছে। প্রতিবেশী দেশে একাধিক ঘটনার সময় এর প্রতিক্রিয়ায় এখানকার একটি চক্র দেশজুড়ে দাঙ্গা লাগাবার উছিলা খোঁজে। অশান্তি হয়েছে, কিন্তু বারবারই সামলে উঠতে হয়েছে।

এই দফায়ও কাজটিকে হাল্কা করে দেখবার জো নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করে তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির শক্তি পরীক্ষায় নেমেছে হয়তো। উগ্রবাদের তুষের আগুন ঠেকাতে হবে। আমরা জানি চোরা আগুন নিভাবার কাজটি সহজ নয় মোটেও।

যে কথা আগেই বলেছি। নগ্ন সাম্প্রদায়িকতার জোর বেড়েছে, প্রকাশ বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যা হয়েছে সেই বেয়াদবি রুখে দিতে প্রশাসন সক্রিয়। সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেই হয়। কিন্তু বল প্রয়োগে সবকিছু অর্জন হয় না। প্রয়োজন সেই রাজনীতি যে রাজনীতি জনগণ গ্রহণ করে নিজেরাই উদ্যমী সত্য খুঁজবে, সম্প্রীতির পথের সৈনিক হয়ে দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করলে তাকে চেনা যায়। কিন্তু অরাজনৈতিক সংগঠনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিপজ্জনক দেশের জন্য। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি করে, তাদের নিজেদের ভেতরকার বিভেদমূলক রাজনীতির অবসান কী করে ঘটাবেন সেটা একবার ভাবুন।

যে রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেই রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলমান বিভেদের রাজনীতি উপজীব্য হতে পারে না। রাজনীতি ক্ষমতা বা ক্ষমতার বাইরে–এমন ভাবনাকে বাড়তে দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী দলগুলো একে অন্যের সমালোচনার বদলে  যে কোনও মূল্যে বিভেদের রাজনীতি ঠেকানোর পথ খুঁজুন। মান ও অভিমান আছে, থাকবে এবং থাকাটা স্বাভাবিক। ক্ষমসতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সব জায়গায় কার্যত একচেটিয়া দখল প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু তবুও সময়টা এরকম ভাবে দেখবার জন্য নয়। সময়টা এখন সমস্বরে বলবার–‘বাংলাদেশ চলবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নির্ধারিত অর্জিত উদার-অসাম্প্রদায়িক পথে’।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উন্নত বিশ্বের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত: পরিবেশমন্ত্রী
উন্নত বিশ্বের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত: পরিবেশমন্ত্রী
সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যসময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ