X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার চোখে বঙ্গবন্ধু

রেজোয়ান হক
১৬ আগস্ট ২০২২, ১৪:৫৮আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৭

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এর সুবিধাভোগী তৎকালীন ডেপুটি আর্মি চিফ জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোভাব কী ছিল তা সবচেয়ে ভালো জানবেন তাদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা। বিএনপির এমন দুই সিনিয়র নেতার লেখায় তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর ছিলেন। ‘সৈনিক জীবন-গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পঁচাত্তর’ নামে লেখা তার আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে। জনাব হাফিজের নিজের ভাষায়– ‘ওই হত্যাকাণ্ড ছিল অভাবনীয় এবং বড় প্রলয়ংকরী ঘটনা।…বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। রাষ্ট্রপতিসহ তিনটি বাড়িতে পাইকারি হারে হত্যাকাণ্ড, রেডিও-টিভি স্টেশন দখল, ব্যাংক মুভমেন্ট, এত বড় ঘটনা ঘটার আগে কেউ টের পেলো না, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ কিছুই জানতে পারেনি–এটা অবিশ্বাস্য… অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত পরাশক্তির যোগসাজশেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা, ১৫ আগস্টের ঘটনায় আমেরিকা মদত দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের যেভাবে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটি সবাইকে স্তম্ভিত করেছে।’  

কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পরপরই খবরটি জানতে পেরে ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলের সঙ্গে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ডেপুটি আর্মি চিফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়ে তাকে খবরটি জানানোর পর তার মধ্যে কোনও ভাবান্তর দেখেননি তারা। জনাব হাফিজ ঘটনার বিবরণ দেওয়া ছাড়া এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এই বিবরণ থেকে খুবই স্পষ্ট যে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে দেশের প্রেসিডেন্ট খুন হওয়ার খবর শোনার পরও ডেপুটি চিফের স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা তা তার মধ্যে একেবারেই দেখা যায়নি, বরং তিনি ছিলেন অবিশ্বাস্য রকম ধীরস্থির, যেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করে রেখে এ খবরটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

হাফিজ লিখেছেন, ‘কল বেল টিপলে জিয়া নিজেই দরজা খুলে দিলেন। তার পরনে সাদা পাজামা, সাদা হাফ হাতা গেঞ্জি, শেভ করছিলেন, মুখে সাদা শেভিং ক্রিম, কাঁধে তোয়ালে। আমাদের দেখে বললেন, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ‘স্যার প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড, মেজর রশীদ এসে আমাকে জানিয়ে গেলো’–শাফায়াত বললেন। ‘সো হোয়াট? প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার, উই উইল আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন’–জিয়ার মন্তব্য।’

২৪ আগস্ট জেনারেল শফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয়। হাফিজ লিখেছেন, বছর দেড়েক আগে জিয়ার পিএস থাকার সময় তিনি তাকে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে কখনও সেনাপ্রধান করবে না। প্রমোশন পেয়ে জিয়া হাফিজকে ফোন করে বলেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছিলে, শেখ সাহেব কখনো আমাকে চিফ বানাবেন না।’

জনাব হাফিজ বইয়ে একাধিকবার লিখেছেন যে জিয়া সেনাপ্রধান হবার পরও বঙ্গবন্ধুর খুনি সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। শাফায়াত জামিল বারবার এ ব্যাপারে জিয়াকে অনুরোধ করলেও জিয়া প্রতিবারই সময় চান। হতাশ হয়ে শাফায়াত নিজেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন। হাফিজ বিষয়টি জিয়াকে জানিয়ে তার সমর্থন চান, কিন্তু জিয়া তাতেও রাজি হননি।

পরবর্তীতে খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া, বিএনপি গঠন, সেনাপ্রধানের পদে থেকেই জিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা, এ পদে থাকাকালে অনেকটা বঙ্গবন্ধুর মতোই নিহত হবার পর দলের হাল ধরা বেগম খালেদা জিয়ার বঙ্গবন্ধুর প্রতি কেমন মনোভাব ছিল? এটাও জানা যাবে বিএনপিরই আরেক নেতা, মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা থেকে।

এই বইয়ের শিরোনাম ‘কারাগারে কেমন ছিলাম: ২০০৭-২০০৮’। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও অনেক রাজনীতিকের মতো মওদুদ আহমদও গ্রেফতার হন। বইটি তখন কারাজীবনের ডায়েরি হিসেবে লেখা, যাতে আছে আত্মসমালোচনাও। বইটি শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল ২০০৭ তার গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে।

১৫ আগস্ট ২০০৭ তারিখের ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন– ‘সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী।’... আমার এ কারণে দুঃখ হয় যে আমার অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও (২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আইনমন্ত্রী ছিলেন) আমি সরকারের বিরোধিতার কারণে আপিল বিভাগে জমে থাকা সেই জঘন্য হত্যা মামলার শুনানি শুরু করতে পারিনি। আমি এমনও যুক্তি দেখিয়েছি যে মুজিব যখন নিহত হন, তখন বিএনপির জন্মই হয়নি। কাজেই আপিল শুনানি বন্ধ রেখে বিএনপি এর দায়ভার বহন করতে যাবে কেন? কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের আমি তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জিত এবং নিজেকেই আমার কাছে ছোট বলে মনে হয়।’ 

পরের বছরে একই দিনের ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন: ‘বিতর্কিত একটি জন্মদিন হিসেবে আজ বেগম জিয়ার ৬৩তম জন্মদিন। সঠিক হলেও আমি হলে আমার জন্মদিন একদিন আগে বা পরে পালন করতাম ও শেখ মুজিবের হত্যা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতাম। এটা একটা রুচিবোধের বিষয়। বেগম জিয়া তা করলে তিনি সকল শ্রেণির জনগণের কাছ থেকে আরও বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারতেন।’

লেখক: বার্তা প্রধান, মাছরাঙা টেলিভিশন

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ