X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রতিমন্ত্রী কেন?

রেজোয়ান হক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:১২আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:১২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দফায় ভারত সফরে যেতে না যেতেই বিতর্ক শুরু হয়, বিমানবন্দরে তাঁকে সে দেশের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী কেন অভ্যর্থনা জানালেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি কেন নয়, যেমনটা আমরা করি। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে কৌতূহল থেকে খোঁজ নিয়ে জানলাম, এর আগেরবার ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ও মোদি যাননি, সেবার বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়া শেষবার ২০০৬ সালে ভারত সফরে গেলে তাকেও একজন প্রতিমন্ত্রীই স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরে বলছি।

সরকারি সফরে আসা অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রোটোকল ব্যবস্থা একেক দেশে একেক রকম। বাংলাদেশে রীতি হচ্ছে, সমপদমর্যাদার কোনও ব্যক্তি বিমানবন্দরে অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান। কিন্তু ভারতের রীতি হচ্ছে কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান সে দেশে পৌঁছালে তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান একজন প্রতিমন্ত্রী। অতিথিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয় সফরের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি ভবনে। অতিথি সেখানে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী তাকে অভ্যর্থনা জানান।

তবে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এই রীতির ব্যতিক্রমও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে মি. মোদি নিজেই বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফরে গেলে তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী, সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। তবে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বিমানবন্দরে হাজির হন। এর কারণ ছিল, মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার পর সেটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর।

কিন্তু এবারের সফরে তাঁকে ভারতের রীতি অনুযায়ী একজন প্রতিমন্ত্রী স্বাগত জানানোয় অনেকেই অভিযোগ করছেন তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। বিরোধী দলের নেতারা বিষয়টিকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করছেন যে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার গুরুত্ব কমে গেছে। 

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়া শেষবার ভারত সফরে যান ২০০৬ সালের ২০ মার্চ ।

তাঁর বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট (সত্যিই এটা তার কিনা নিশ্চিত নই) থেকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে লেখা হয়েছে, ‘দেখুন- ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।’ সঙ্গে তিনি একটি ছবি সংযুক্ত করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে বেগম জিয়া গাড়ি থেকে নামছেন এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ছবিটি সত্য, তবে সেটি বিমানবন্দরের নয়, পরদিন ২১ মার্চ রাষ্ট্রপতি ভবনে সংবর্ধনার। বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে স্বাগত জানান সেই সময় ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ।

তবে এরপরও কথা থাকে। ভারতের পক্ষ থেকে সবসময়, বিশেষ করে মোদি আমলে, বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ  সে দেশের নেতৃবৃন্দ প্রায়ই বলেন, এবারও বলেছেন দুই দেশের সম্পর্কটি বিশেষ। নরেন্দ্র মোদি একবার বলেছিলেন, প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের অগ্রাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশ এক নম্বরে। সম্পর্কটা যদি এমন ‘বিশেষ’-ই হয় তাহলে বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে কেন প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানোর সাধারণ রীতি অনুসরণ করা হবে, কেন বিশেষ ব্যবস্থা নয়? প্রধানমন্ত্রী মোদি সবসময় নিজে না গেলেও অন্তত একজন পূর্ণমন্ত্রীকে তো পাঠাতে পারতেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, মাছরাঙা টেলিভিশন

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কী থাকছে হিমায়িত মাংস আমদানি নীতিমালায়
কী থাকছে হিমায়িত মাংস আমদানি নীতিমালায়
‘নিখোঁজ’ এমপি আনোয়ারুলের সর্বশেষ অবস্থান ভারতের মুজাফফরাবাদ: ডিবি
‘নিখোঁজ’ এমপি আনোয়ারুলের সর্বশেষ অবস্থান ভারতের মুজাফফরাবাদ: ডিবি
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বন্ধ রুশ তেল শোধনাগার
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বন্ধ রুশ তেল শোধনাগার
রাখাইনের বুথিডাউং শহর দখলে নিলো আরাকান আর্মি
রাখাইনের বুথিডাউং শহর দখলে নিলো আরাকান আর্মি
সর্বশেষসর্বাধিক