X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতি: সংঘাতেই সমাধান!

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০২ নভেম্বর ২০২২, ১৬:২১আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২, ১৬:২১

বিশ্বব্যাপী রাজনীতির ময়দানে সংগ্রামের উপস্থিতি চিরন্তন। আমাদের রাজনীতির মাঠে অবশ্য সংগ্রামের চেয়ে উন্মাদনা বেশি থাকে। রাজপথ আর সংসদ উভয়কে সমানতালে উত্তপ্ত করতে পারলে খেলাটা জমজমাট হয়।

ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে এখন সংসদ ঘিরেও উত্তেজনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা আছে। বিএনপি এখন বিভাগীয় মহাসমাবেশের পাশাপাশি তার সদস্যদের সংসদ থেকে বের করে আনতে চাচ্ছে। সরকারের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় পার্টিও এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছে। দলীয় প্রধান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত দলটি সংসদে যাবে না, এমন একটা কথা বলছিল। অবশ্য একদিনের ব্যবধানেই সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি।

গতকাল স্পিকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন। ২৬ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দল। জি এম কাদেরের ভাবি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা।

রাজনীতির অঙ্গনে এখন উত্তেজনা। প্রতি পাঁচ বছর পর পর যখন নির্বাচন আসে তখন বিরোধী রাজনীতির এই আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়। বিএনপিও এবার আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সেটাই করছে। বিএনপি নেতারা বলছেন তাদের দাবি একটাই– এই সরকারকে পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। দলের মহাসচিব বলছেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা যেকোনও সময় জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত। কেবল দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তাঁরা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও স্পষ্ট করে বলছে, এই দাবি মানা হবে না।

বিএনপি যখন যে বিভাগে সমাবেশ ডাকছে, সেখানেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকছেন মালিক শ্রমিকরা। এতে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড না হলেও জনদুর্ভোগ হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলছেন, তাদের দাবির ফায়সালা হবে রাজপথেই। তার জবাবে এখন শাসক দল আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়েছে, তারাও রাজপথে থাকবে। এই যে রাজপথে ফায়সালা করার রাজনীতি, সেই রাজনীতি সংঘাতের। পরিস্থিতি এখন এমন যে দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা উচ্চকিত স্বরে মিছিল মিটিং করছেন, লাঠিসোঁটা বের করছেন, রাজপথ রণক্ষেত্র করার অঙ্গীকারও উচ্চারিত হচ্ছে, মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে, জেলায় জেলায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। এমন দৃশ্যের সঙ্গে যোগ হলো শীর্ষ নেতৃত্বের হুমকি, পাল্টা হুমকি।

সত্যিকার অর্থে এগুলো কোনও রাজনৈতিক লড়াইয়ের নমুনা না। দাবি আদায় বা রাজনৈতিক বিরোধিতার নামে আক্রোশ চরিতার্থ করা কোনও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে পড়ে না। বিরোধীরা হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারলেই জীবন নিয়ে নেওয়া হবে, পালাতে দেওয়া হবে না। এমন ‘শাসানি’ দেওয়াও রাজনৈতিক রুচিবোধের পরিচায়ক নয়। কিন্তু এটা বাংলাদেশে বরাবর হয়ে আসছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তো সে সময়কার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের পুরো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার প্রচেষ্টা ছিল। সেই শাসনামলেই বোমা আর গ্রেনেড মেরে হত্যা করা হয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম কিবরিয়াকে, শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে, খুলনার প্রবীণ নেতা মঞ্জুরুল ইমামসহ অনেককে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এই আমলে তারা প্রতিহিংসার শিকার। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের গুম খুনের অভিযোগও বিস্তর।  

দুই রাজনৈতিক দলের বিবাদে শুধু রাজনৈতিক রুচিবোধের ক্ষতি হচ্ছে বা নৈতিকতার বিসর্জন ঘটছে, এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় বিষয়টি। এই হিংসার মাঝে আটকে পড়া সাধারণ নাগরিকের সন্ত্রস্ত মুখটাও ভেসে উঠছে দৃশ্যপটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, চিকিৎসা ও শিক্ষার লাগামহীন খরচসহ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে জনজীবন এমনিতেই পর্যুদস্ত। এর ওপর এমন সংঘাতের পূর্বাভাস তাদের জীবন সম্পর্কে আরও হতাশ করছে। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। বিএনপি আগে ছিল। দুই দলই ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে, বিরোধী রাজনীতির যন্ত্রণাও জানে। তাই দু’দলের কাছ থেকেই অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু সেটা আমরা দেখছি না।

একটা সর্বগ্রাসী সর্বব্যাপ্ত রাজনীতির দাপট চলছে অনাদিকাল ধরে। এর শেষ কোথায় আমরা জানি না। বলছি না যে রাজনীতির পরিবেশ এমন হবে যেখানে সবকিছু খুব শান্ত থাকবে, প্রতিবাদ থাকবে না, মিছিল থাকবে না, মশাল থাকবে না। সবই থাকতে হয়, কিন্তু নিয়মের মাঝে। বিতর্ক থাকবে, কিন্তু সংঘাত নয়। বছরের পর বছর এমন রাজনীতি চলে আসায় রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে রাজনীতি করতে চাওয়া যোগ্য মানুষ। বোমা, গুলি, গ্রেনেড আর আগুন সন্ত্রাসের হাড়-হিম-করা সহিংসতার দৃশ্য দেখে দেখে মানুষ রাজনীতিকেই ভয় করতে শিখেছে। শান্ত রাজনীতিই করতে হবে এমনটা কেউ বলছে না, কিন্তু সহিংসতার পথ কেন এত প্রিয় সেটাও মানুষ আসলে বুঝতে চায়।

রাজনীতি মানেই শুধু ক্ষমতা চর্চা নয়। রাজনীতি মানে শুধু দেশের প্রতিষ্ঠান আর মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলা নয়। আমাদের ফিরতে হবে। নৈরাজ্যের পথটা খুলে যাচ্ছে দেখেও যদি অর্গলটা বন্ধ না করি তাহলে বিপদ অনিবার্য। মানুষের কষ্ট হবে তো বটেই, যদি সহিংসতার পথটা বড় হয় তাহলে রাজনীতির ময়দানটা ভবিষ্যতে কতখানি বিপদসংকুল হয়ে উঠবে, সেটা ভাবাও জরুরি। একটা কথা মনে রাখা দরকার, নিজের সৃষ্ট বিপদ সর্বাগ্রে হানা দেবে রাজনীতির ঘরেই।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ