X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংক নিয়ে ভাবনা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৪৪আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৫৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,  ব্যাংক খাত নিয়ে মিটিংয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও আর্থিক বিভাগকে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, চারদিকে এত কথাবার্তা উঠছে, আসল চিত্রটা কী সেটা নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন সরকার প্রধান। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়াসহ নানা আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা এসেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম একযুগেরেও বেশি সময় ধরে আলোচনায়। শুরু হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে। এরপর অনেক ঘটনা ঘটেছে। বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক লোপাট হয়েছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ অনেক দিনের। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। এখন শোনা যাচ্ছে বেনামি কোম্পানি খুলেও হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে অনেকে। ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে  ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৭০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, যদিও সেই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। তবে প্রতিবাদ জোরালো নয় ততটা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক থেকেও বেরিয়ে গেছে অনেক টাকা।

নাবিল গ্রুপসহ আট প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে আগ্রাসী ঋণ দেওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছাড় বন্ধ রাখতে বলেছে। এটি একটি প্রতিক্রিয়াধর্মী সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগেও বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো থেকে নিয়ম-নীতির বাইরে বড় অংকের ঋণ বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে সতর্ক থাকেনি এবং বহুদিন ধরে অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি।

ব্যাংকিং খাত ভালোভাবে চলছে না। এটি কোনও নতুন কথা নয় যদিও বিষয়টি স্বীকার করতে চাইবে না হয়তো অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বা বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। ব্যাংক খাতে অনিয়মের আলোচনায় টেক্সটবুক দৃষ্টান্ত হিসেবে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির বিষয়টি এতদিন আলোচনায় ছিল। এখন নাম উঠে এসেছে ইসলামি ব্যাংকের।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব দৃশ্যমান অনেক দিন ধরেই। আর্থিক খাতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের প্রভাবই দুর্নীতির বড় কারণ বলে মনে করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে, কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকাও কম নয় এসব ক্ষেত্রে। অথচ এরা বরাবরই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

ঋণ পাওয়ার যোগ্য না হলেও কীভাবে ঋণ পাচ্ছে অনেক গ্রুপ বা কোম্পানি, তার তদন্ত আদৌ হবে কিনা কে জানে, কিন্তু এগুলো চলছে। পরিস্থিতি খুবই নাজুক বলেই প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দিয়েছেন। ফলে আমরা আশা করতে পারি একটা কিছু ইতিবাচক ফলাফল আসবে এ ক্ষেত্রে।

কিন্তু কিছু কথা আলোচনায় আসবেই। একটা হলো সরকারি ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ পদ্ধতি। আমরা দেখলাম না কোনও সরকারের আমলেই সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ এবং ঋণখেলাপি নয় এমন ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হয়। ফলে শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপরাধ প্রবণতা কেবল বাড়ছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পরিণত হয়েছে মালিকদের সংগঠনে। আইন করেই এমন একটা অবস্থা করা হয়েছে যে এখন উদ্যোক্তারা তাদের পরিবার পরিজনসহ আজীবন রাজত্ব করবেন। তাই এমডি বা ব্যাংকাররা স্বাধীনভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা পারছেন না।

 

সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রায় সবক’টি দুর্বল অবস্থায়। তাই সরকারি ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সুপারিশ ছিল অনেক আগে থেকেই। সেটা হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা বন্ধ না করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না, সেটা যেমন সত্য তেমনি আছে ভিন্ন এক সত্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাইতেও শক্তিশালী ভূমিকায় এই খাতে। ফলে আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো সহজ হয়। এটি একটি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই বিভাগটি কেন থাকবে, সেটি এক বড় প্রশ্ন।  

প্রশ্ন হলো, এত এত ঋণ যে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে, তার তদারকিটা কোথায়? ব্যাংকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতর যাচাই-বাছাই করা, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা দেখা শেষে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। সেটা হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো বা পূর্ব অনুমতি নেওয়ার নিয়মটি তুলে দেওয়াতেই সমস্যা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এই নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। আর বড় কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও পরিচালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এখন সময়ের দাবি।    
সুশাসনের ঘাটতি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতিকে বাড়তে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব পাক সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে, এই প্রত্যাশা।  

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ