X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫১তম বিজয় দিবসেও যে চ্যালেঞ্জগুলো দুশ্চিন্তার

মো. জাকির হোসেন
১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৩৮আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৩৮

আজ ১৬ ডিসেম্বর, ৫১তম বিজয় দিবস। ‘১৬’ বাঙালির জীবনে কেবল একটি গাণিতিক সংখ্যা কিংবা একটি তারিখ নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও নজিরবিহীন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বপ্নপূরণের এক গর্বিত দিন এটি। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাশক্তি সমর্থিত ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান দখলদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের পরাজিত করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবস থাকলেও বিজয় দিবস থাকে না। বাংলাদেশ সেই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। এমন একটি দিনের জন্য কত জাতি-জনগোষ্ঠী কত বলিদান দিয়েছে, কিন্তু বিজয় অধরাই রয়ে গেছে। এমনকি কোনও জনগোষ্ঠী বিজয় অর্জনের পর আবার তা হারিয়ে ফেলেছে, পরাধীনতার শৃঙ্খলে পুনরায় আবদ্ধ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একইসঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের জন্য।

বিজয়ের এই দিবসে তাই বাঙালির এক চোখে আনন্দ, অন্য চোখে অশ্রু। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের; আর যেসব কন্যা-জায়া-জননী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের। কোনও ভিক্ষা নয়, কারও দয়ার দানে নয়, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বিজয়। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মাহেন্দ্রক্ষণ ১৬ ডিসেম্বর একদিনে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব, দীর্ঘসময় ও অসংখ্য মানুষের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে চূড়ান্ত বিজয়। বিজয়ের ইতিহাস সৃষ্টিতে অনেক মাইলস্টোন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবিধান প্রণয়ন, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ এবং ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই মাইলস্টোনের সবকটিতেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ওতপ্রোত সম্পৃক্ততা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ইতিহাসের এসব বাঁকবদল আমাদের নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস। এর কোনোটিকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে বিশ্বাসী হওয়া যায় না।

চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের এই মাইলফলকগুলোকে যারা স্বীকার করে না, বঙ্গবন্ধুকে যারা অসম্মান ও অস্বীকার করে তারা আর যাহোক বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। তাদের বিশ্বাসের দেশ বাংলাদেশ নয়, ‘বাংলাস্তান’। কোনও বিষয়ে বিশ্বাসী হতে হলে মৌলিক কিছু ধারণায় অবশ্যই বিশ্বাসী হতে হবে ও তা কাজে প্রমাণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে হলে কিছু শর্তপালন আবশ্যিক। অন্যথায় তিনি সেই মতবাদে বিশ্বাসী বলার কোনও সুযোগ নেই। যেমন- কমিউনিজমের রাজনীতি কখনোই ধর্মাশ্রয়ী হতে পারে না। আবার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বিশ্বাসী হতে হলে সেই বিশ্বাসের কিছু প্রতিফলন অবশ্যই থাকতে হবে।

বিজয়ের ৫১ বছরে দেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ অনেক ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ চমকে দেওয়ার মতো অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হয়েছে। বাণিজ্যিক দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যান’ শীর্ষক এক খসড়া প্রতিবেদনে প্রকাশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বেড়েছে চলতি মূল্যে ৬২০ গুণ। অর্থাৎ দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৬৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা।

তুলনামূলক হিসাব করলে এটি ৬২০ গুণ বেশি হয়। সেই সঙ্গে রূপান্তর ঘটেছে অর্থনীতিরও। পরিবর্তন হয়েছে দেশের কৃষিনির্ভরতার। এখন অর্থনৈতিক কাঠামোগত রূপান্তরের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি হয়েছে শিল্পনির্ভর। বৃহৎ তিনটি খাতের মধ্যে জিডিপিতে (স্থূল দেশজ উৎপাদন) কৃষি খাতের অবদান কমেছে। এক্ষেত্রে মোট জিডিপিতে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে কৃষির অবদান ছিল ৪৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশে। ফলে মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে বেড়েছে শিল্প খাতের অবদান।

জিডিপিতে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে শিল্পের অবদান ছিল ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ব্যাপক শিল্পায়নের কারণে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দেশের পুরো অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে এ খাতের জন্য অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছে। জিডিপিতে বেড়েছে সেবা খাতেরও অবদান। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে হয়েছে ৫৩ দশমিক ০১ শতাংশ। নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বেড়েছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১১০ মার্কিন ডলার। এটি বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। যেটি তুলনামূলক হিসাবে ২৬ গুণেরও বেশি। তবে টাকার অংকে হিসাব করে দেখা যায়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬৮ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা। এক্ষেত্রে বড়েছে ২৮১ গুণেরও বেশি। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। যে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন নাক সিঁটকাতো, সেই বাংলাদেশ এখন এক সমীহের নাম।

এতকিছুর পরও বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকীতে এমন কিছু ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ চোখ রাঙাচ্ছে, যা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রাণভোমরা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনককে বিজয় অর্জনের তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যারা হত্যা করেছে, নির্মম হত্যাকাণ্ডে যারা সহযোগিতা করেছে এবং হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করতে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে যারা আইন তৈরি করেছে ও সংবিধানে সেই আইনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং খুনিদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের কোনও অনুশোচনা হয়নি। বরং, হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পরও তারা স্লোগান দেয় ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতিতে এরা দম্ভ করে বলে ‘পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি’কে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না।

এসবই ইঙ্গিত দেয় পঁচাত্তরের খুনি ও তাদের সহযোগীরা সংখ্যায় ও শক্তিতে দুর্বল নয়, পরাক্রমশালী হয়েছে। আরেকটি বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো, মুক্তিযুদ্ধের মুখোশধারী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা যখন ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তখন বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা চরমে। আর এই বিভেদের সুযোগ নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে তাদের রাষ্ট্রদূতরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও আন্তর্জাতিক নানামুখী মেরুকরণের কারণে ভূ-রাজনৈতিক ক্রসফায়ারের ঝুঁকিতে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্র নীতি মেনে নিতে নারাজ। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক সংকট ও অর্থপাচারের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট রাষ্ট্রে নানা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজসাধ্য নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর বিভক্তির পাশাপাশি জাতীয় প্রশ্নে অনৈক্য আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। দেশে দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমাদের বড় দুটি দলের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক স্বাভাবিক রাজনৈতিক বিরোধ নয়, এটি রীতিমতো জিঘাংসা। দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভয়ংকর বিরোধ রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি, নির্বাচন, শিক্ষা, মানবাধিকার, সুশাসন, পররাষ্ট্রনীতি, সার্বভৌমত্ব- সবকিছুর ওপর মারাত্মক অভিঘাত সৃষ্টি করেছে।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল কিছু বাংলাদেশবিরোধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দল বাদে মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ। এ জন্যই সম্ভব হয়েছিল পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সমর্থিত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মাত্র নয় মাসে পরাজিত করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি। স্কটিশ লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসন ১৮৮৬ সালে তার জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইড’ প্রকাশ করেন। লুইস স্টিভেনসন তার গ্রন্থে মানুষের দু’টি রূপের কথা উল্লেখ করেছেন। ভালো সত্তাটি ‘ডক্টর জেকিল’ এবং খারাপ সত্তাটি ‘মিস্টার হাইড’।

গ্রন্থটির মূল বক্তব্য এক কথায়: মানুষ একই সঙ্গে দেবতা ও দানব। এই চিত্র যদিও আমরা সমগ্র মানব জাতির ক্ষেত্রেই দেখতে পাই, তবে বাঙালির ক্ষেত্রে এটি বোধকরি আরও প্রবল। বাঙালির প্রতি অতল ভালোবাসায় ও বাঙালির সবটুকু কল্যাণের নিমিত্তে একবারের জন্য পাওয়া জীবনের সকল ব্যক্তিগত সাধ-আহ্লাদকে দুপায়ে দলে বঙ্গবন্ধু জীবনের এক-চতুর্থাংশ কারাগারে কাটিয়েছেন। পরিবারের সুখ-স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে জেল-জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন সবই হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালির একটি স্থায়ী নিবাস গড়তে। ফাঁসির রজ্জু মাথার ওপর ঝুলেছে, বুলেট তাড়া করেছে। কিন্তু কোনও কিছুই বাংলা ও বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অদম্য ভালোবাসার পথে বাধা হতে পারেনি। অথচ সেই বঙ্গবন্ধুকে কী নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। হত্যার পর আইন তৈরি করা হলো খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী ও তাদের দোসররা মানুষরূপী দানব নয়তো কি? বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকাকালীন তাঁর অনুপস্থিতিতে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে মুজিবনগর সরকার দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রশাসন পরিচালনা করেছেন।

পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমর্থনপুষ্ট এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসম মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন মুজিবনগর সরকার। এই মুজিবনগর সরকারের প্রধান চালিকাশক্তি বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে যারা হত্যা করেছে তারা সন্দেহাতীতভাবে ‘হাইড’, ‘ডক্টর জেকিল’ নয়। ৫১তম বিজয় দিবসে প্রত্যাশা করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে আবারও ’৭১-এর ন্যায় ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রতিষ্ঠা হোক।

মুক্তিযুদ্ধের মুখোশধারী শক্তি ও আত্মঘাতী বাঙালির শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যেসব চ্যালেঞ্জ ভয় জাগানিয়া চোখ রাঙাচ্ছে তার অবসান হোক। বিজয়ের এই দিবসে শপথ হোক, সব ধরনের হানাহানি ও বৈরিতা-বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে, দেশের ও জনগণের কল্যাণে সবাই এক হয়ে কাজ করার। চেতনায় উন্মেষ ঘটুক অমল দেশপ্রেম ও অতল প্রীতি।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ