X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

সাবধান, বর্ষার আগেই ডেঙ্গুর থাবা

প্রভাষ আমিন
০২ জুন ২০২৩, ১৮:১৯আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ১৮:২৩

করোনার কারণে মাঝে দুই বছর ডেঙ্গুর বিস্তৃতি একটু আড়ালে ছিল। গত দুই বছর ধরে ডেঙ্গু আবার তার ভয়াল থাবা বিস্তার করছে। তবে এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে ভয় বাড়ছে। ডেঙ্গু মূলত বর্ষার রোগ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হলো এডিস মশার প্রজননকাল। আর এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এবার বর্ষার আগেই ডেঙ্গু চলে এসেছে। গত দুই বছরে প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গুতে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও এবার এই সংখ্যা এরই মধ্যে ১৩তে উন্নীত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬ গুণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আশঙ্কা, এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তার হবে ভয়াবহ।

এতদিন ডেঙ্গু ছিল শহুরে অসুখ। মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। কিন্তু এবার লক্ষণ যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ঢাকার বাইরের মফস্বল শহরগুলোতেও ডেঙ্গুর বিস্তারের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর উৎপাত শুরু হয়েছে ২০০০ সাল থেকে। প্রথম দিকে ডেঙ্গু যতটা প্রাণঘাতী ছিল। এখন ততটা নয়। কারণ ডেঙ্গু সম্পর্কে সব মানুষই কম বেশি জেনে গেছেন। ডেঙ্গুর চিকিৎসাটাও জটিল বা ব্যয়বহুল নয়। খালি সময়মত রোগটা শনাক্ত হতে হবে এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তাই এখন জ্বর হলে একদম খামখেয়ালি করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গুর টেস্টও ব্যয়বহুল নয়। সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকাতেই ডেঙ্গুর টেস্ট করা যাবে। আর ডেঙ্গু হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হবে এমনও নয়। এখন ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রটোকল বাংলাদেশের সকল চিকিৎসকেরই মুখস্ত। পরিমাপমত স্যালাইন দিলেই অনেক সময় সুস্থ হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে সময়মত সেই পরিমাপটা ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্লাটিলেট বেশি কমে গেলে রক্ত দিতে হতে পারে। তবে সতর্ক থাকলে এবং শুরুতেই শনাক্ত হয়ে গেলে অল্পতেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। সবাই সবকিছু জানার পরও মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে ১৩ জনের মৃত্যু আমাদের শঙ্কিত করেছে। এত সতর্কতার পরও ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু বেদনাদায়ক। সবাই মিলে চেষ্টা করলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। এবার যেহেতু আগে থেকেই আলোচনাটা শুরু হয়েছে, চলুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি, যাতে ডেঙ্গুতে আর একজন মানুষও মারা না যান।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু শূন্যতে নামিয়ে আনার উপায় একটাই, মশা থেকে দূরে থাকা। আপনার এলাকায় যদি মশার উৎপাত থাকে, দিনরাত মশারি টানিয়ে রাখুন। বিশেষ করে শিশুদের মশারির ভেতরে রাখুন। যথাসম্ভব হাত-পা ঢেকে রাখুন, যাতে মশা আপনার নাগাল না পায়। এখন নানারকম লিকুইড পাওয়া যায়, যা মাখলে মশা আপনার কাছে আসতে পারবে না। তবে অফিস-আদালত, চাকরি-বাকরি, স্কুল-কলেজ ফেলে সারাদিন তো আর মশারির ভেতরে কাটানো সম্ভব নয়। তাই মশা থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মশার বংশবিস্তার ঠেকিয়ে রাখা, আর বংশবিস্তার ঠেকাতে না পারলে মেরে ফেলা।

সবসময় আমরা বলি ভুল বা বিপদ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, আমরা আসলে কোনও শিক্ষাই নেই না। অনেকবছর ধরে ডেঙ্গুর কারণে মশা মারার বিষয়টা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু কখনোই ‘মশক নিধন অভিযান’ পুরোপুরি সফল হয় না। কখনও ওষুধ ফুরিয়ে যায়, কখনও ওষুধ কাজ করে না। মশা মারতে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ লাগে। এবার যেহেতু আগে ভাগেই আলোচনাটা শুরু হয়েছে। আশা করি এবার নগরপিতারা পরিকল্পনা করে মশা মারতে মাঠে নামবেন। কিন্তু আমাদের নীতি-নির্ধারকরা কথায় কামান দাগতে যতটা ওস্তাদ, মশা মারতে ততটা নন। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বাংলাদেশে ১২৩ প্রজাতির মশা রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা শহরেই রয়েছে ১৩ প্রজাতির। সব মশাই ক্ষতিকর, অন্তত বিরক্তিকর। মশার কামড়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেক রোগ জীবাণু। তবে মশার মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো– এডিস। এই মশা হলো ডেঙ্গুর বাহক।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীরা সম্ভব-অসম্ভব অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কেউ সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেন, কেউ লন্ডন। কিন্তু আমরা বুঝি, এসবই বাত কী বাত। সাদা চোখে সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ দুটি– প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার করা আর মশা মারা। এ দু’টি কাজ করতেই মেয়রদের নাভিশ্বাস। প্রতিদিন গৃহস্থালী বর্জ্য অপসারণের তবু একটা সিস্টেম দাঁড়িয়েছে, কিন্তু রাস্তাঘাট এখনও অনেক ময়লা, ঢাকার খালগুলো সব ময়লায় অচল হয়ে গেছে। আর এই ময়লা হলো মশার বংশবিস্তারের জন্য সবচেয়ে ভালো। সিটি করপোরেশন যদি এখন থেকেই প্রথমত পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে মৌসুমে মশার বিস্তার কম হবে।

তবে সব দায়িত্ব মেয়রদের হাতে দিয়ে, তাদের ব্যর্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে নিজেদের কাজটুকু করে রাখা ভালো। এডিস মশা ঠেকানোর কৌশল আমাদের সবার জানা। কোথাও ময়লা রাখা যাবে না, পানি জমতে পারে, এমন কোনও ব্যবস্থা যেন না থাকে। এখন থেকেই যদি আমাদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি; পরিত্যক্ত ডাবের খোসা, টায়ার, নজরের বাইরে থাকা ফুলের টব, নির্মাণকাজের খানাখন্দ যেন এখন দূর করে রাখি। ছাদ বাগানের দিকে যেন সতর্ক দৃষ্টি রাখি। যাতে বৃষ্টি হলেও পানি জমতে না পারে। স্বচ্ছ পানি জমতে না পারলে এডিস বংশবিস্তার করতে পারবে না। তবে সিটি করপোরেশন একা যেমন পারবে না আবার ব্যক্তি সচেতনতায়ও পুরোপুরি নিরাপদ থাকা যাবে না। সচেতনতার একটা সম্মিলিত প্রয়াস লাগবে। কারণ আপনি আপনার বাসা নিরাপদ রাখলেন কিন্তু পাশের বাসায় যদি এডিসের কারখানা থাকে, আপনি কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। তাই পরিচ্ছন্নতা অভিযানটা হতে হবে সর্বাত্মক।

আমরা দেখছি বাংলাদেশে যে কোনও কাজে হয় প্রধানমন্ত্রী, নয় হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ লাগে। এটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু এটাই এখন বাস্তবতা, তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আপনি এখনই সংশ্লিষ্টদের মশা মারার নির্দেশ দিন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে বলুন। হাইকোর্টকেও অনুরোধ মৌসুম শুরুর আগেই আপনারা প্রয়োজনেও স্বতপ্রণোদিত হয়ে হলেও মশা মারার নির্দেশ দিন। কারণ ডেঙ্গু যখন আসে, তখন কিন্তু ধনী-গরিব, মন্ত্রী-এমপি কিছুই মানে না। আপনার নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ডেঙ্গুর জন্য তার জীবনের প্রথম বাজেটটি ঠিকমত পেশ করতে পারেননি। আবারও সেই ভয়ঙ্কর জুন চলে এসেছে। বর্ষার আগেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যাতে আমরা জোর গলায় বলতে পারি, আসুক ডেঙ্গু মৌসুম, ডেঙ্গুরে আর ডরাই না। 

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ