X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন: আঞ্চলিক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্ন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১২ জুলাই ২০২৩, ১১:১৩আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ১১:১৩

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ঢাকায় এসেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনও জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধির ঢাকা সফর। উজরা জেয়ার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যার নাম ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজে পরিচিত পেয়েছে ‘লু হাওয়া’ নামে।

শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবপাচার ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করছেন উজরা জেয়া। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশ সফরের সময় নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্বল গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। তবে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের আগ্রহ নির্বাচনের প্রসঙ্গ নিয়ে। কী বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র? এর উত্তরে বলা যায়, তাদের ভিসানীতিতেই তা স্পষ্ট। কিন্তু তবু আলোচনা হচ্ছে এবং আরও চলবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এরমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন– ইইউ’র ছয় সদস্যের একটি প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল এখন বাংলাদেশে রয়েছে। তারা থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা সিদ্ধান্ত নেবে।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন বিদেশিরা তৎপর, তখন আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ১ দফা চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কেমন আন্দোলন করবে, শাসক দল আওয়ামী লীগ কতটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে, আর কতটা প্রশাসনিকভাবে করবে, সেটাই ঠিক করবে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠবে কিনা। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে এখন বিদেশিরা কী বলছেন সেটা নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি। প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সরব হয়ে ওঠে কূটনীতিক পাড়া। বলা যায়, রাজনীতির মাঠ বাংলাদেশের, তবে খেলোয়াড় বিদেশি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাস পাড়ার অভিজাত কূটনীতিক মহল খুবই তৎপর এখন।

এটি নতুন নয়। বাংলাদেশে নির্বাচনের মেঘ ঘনালেই আমেরিকা, পশ্চিমের দেশগুলো ছাতা খুলতে থাকে। তবে এবার বেশ খোলামেলা কথা বলছে চীন ও রাশিয়া। তুলনামূলক কম কথা আসছে দিল্লির সাউথ ব্লক থেকে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত যে অতি গুরুত্বপূর্ণ সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানে। তাই উজরা জেয়া ও লু ঢাকা আসার আগে দিল্লি হয়ে এসেছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটা আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে নয়। বাংলাদেশের নির্বাচন এবং আগামীতে কারা ক্ষমতায় এলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশের জন্যই। সেটার ইঙ্গিতও পাওয়া যায় উজরার কথায়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠকের পর টুইটে তিনি মুক্ত ও অবাধ ভারত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষেত্র, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন।

শুধু নির্বাচন তো নয়, বাংলাদেশে যেকোনও রাজনৈতিক ইস্যুতে তৎপর থাকেন এ দেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে যার শুরু। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে পরবর্তীতে একাধিক সামরিক শাসন, ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতন, এমনকি ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরে প্রতিটি রাজনৈতিক উঠাপড়ায়, ২০০৭-এর ১/১১-এর আগে পরে কমবেশি সব নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি শক্তির সক্রিয়তা প্রকাশ্যে এসেছে। এর বড় কারণ এই যে আমরা তাদের কাছে যাই, নালিশ করি, ব্রিফিং করি এবং এবার তো বিরোধী পক্ষ থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও সরকার পক্ষের রাজনীতিবিদদের তালিকাও সরবরাহ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ যেন বৃহৎ শক্তিগুলোর খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত গুরুত্ব তো আছেই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নয়নও এ ক্ষেত্রে অনেকখানি অবদান রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই গ্লোবাল সাউথ-এ নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার লড়াই করছে। অন্যদিকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে ব্রিকস সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি ব্রিকসে যোগও দিয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে অনেক দেশেই সমস্যা আছে। তবে কী যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ব্যতিক্রম হিসেবে নিচ্ছে? এবং যদি নেয় তবে কেন? দেশের মানুষ একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। দেশের সরকার, রাজনৈতিক দলকেই তো সেটা করতে হবে, বিদেশি চাপ লাগবে কেন?

২০২৪-এর জানুয়ারির গোড়ায় বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন। অর্থাৎ, এখনও বাকি সাত মাস। কিন্তু এ নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি চলছে। চলছে আমেরিকা ও রাশিয়ার টুইটের লড়াই। দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচনটা ইউক্রেনে, বাংলাদেশে নয়। বাইরের দেশের খবরদারি এবং চাঞ্চল্যের এই তরঙ্গ বাংলাদেশের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে পরিস্থিতিকে অস্থির, উত্তাল করে তুলছে। শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন আমেরিকা ও রাশিয়া এবং ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যের কূটনীতি। সেই ভারসাম্যের আলোকে আগামী নির্বাচন আঞ্চলিক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতার জন্য কী বার্তা দেয় দেখার অপেক্ষায়।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ