X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ বোমা হামলা: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভয়াবহ ব্যর্থতা

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
১৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৮আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০৯

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) পরিকল্পিত সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেদিন বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছাড়া ৬৩ জেলার প্রায় ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা।

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিদের বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি, আধা-সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে চালানো সেই হামলায় ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণে দুই জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। দেশে জঙ্গি কায়দায় ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা করেছিল জেএমবি।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় মোট ১৫৯টি মামলার মধ্যে ১১৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন ৪১টি মামলা বিচারাধীন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েক জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়নি। সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর হয়ে গেছে, তাই এসব মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে কার্যকর করা প্রয়োজন।

১৯৯৮ সালে গঠিত হয় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমান গ্রেফতারের পর জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছিল। তারা বাংলাদেশকে ছয়টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। পরে দাওয়াত ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। এভাবেই সারা দেশে কর্মী সংগ্রহ শুরু করে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠার প্রথম দুই বছর দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে কর্মী সংগ্রহ করে জেএমবি। এরপর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে।

২০০০ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও ক্যাম্পে জেএমবির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। জেএমবি প্রথম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার একটি সিনেমা হলে বোমা হামলা করে। ২০০২ সালে পহেলা মে নাটোরের একটি সিনেমা হলে, একই বছরের সাতই ডিসেম্বর ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা করা হয়। জেএমবির আরেক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই রাজশাহী ও নওগাঁজুড়ে তাণ্ডব চালালে আলোচনায় উঠে আসে।

২০০২ সালে ৩০ মে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে ৮ জঙ্গি ২৫টি বোমা ও জিহাদি পুস্তকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জেএমবির অস্তিত্ব নজরে পড়ে। থানা থেকে নথিপত্র গায়েব হয়ে যাওয়ায় বিচার সম্ভব করতে পারেনি তৎকালীন বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার। ২০০৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে দিনাজপুর শহরে ৭টি বোমা বিস্ফোরণে তিন জন আহত হয়। তখন তারা নিজেদের জাগ্রত মুসলিম জনতা বা জেএমবি বলে পরিচয় দিতো। দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ ও ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবি ও জেএমজেবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জোট আমলে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আশকারার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় বোমা তৈরি করে, সেসব বোমা এক জেলা থেকে আরেক জেলায় সরবরাহ করে সিরিজ হামলা করতে সক্ষম হয়েছিল জঙ্গিরা। ফলে জঙ্গিরা নিজেদের কর্মী সংগ্রহ, বোমা তৈরি, পরিবহন, পরিকল্পনা ইত্যাদি করে গেলেও সেই সময় তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। নির্মম সত্য হলো, এসব হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নেওয়ার পর হাওয়া ভবন ও সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় সারা দেশে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সরকারি এমপি-মন্ত্রীদের মদতে সারা দেশে শক্ত নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে জঙ্গিরা এবং বাংলাভাইকে দেখা যায় সরাসরি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসে মিটিং করতে। এই সিরিজ বোমা হামলা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করলেও সেসময় চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েকজন মন্ত্রী বলেছিলেন, জঙ্গিবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। এসব বলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছিল।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের মদতে ৫৪টি উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন এবং ইসলামি এনজিওর আড়ালে বিদেশি জঙ্গি-মৌলবাদী সংগঠন দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জঙ্গিদের শুধু উত্থানই নয়, আস্ফালনও দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যক্ষ করেছে।  

বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী ২০০৪ সালের ২১ মে শাহজালাল (রহ.) মাজার-মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর অতর্কিত জঙ্গিদের বোমা হামলায় আক্রান্ত হন। ওই হামলায় জড়িতদের ধরে বিচারে তিন জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ও আরও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে সময় বাংলাদেশে ১০ ট্রাক বিদেশি অস্ত্র ঘটনাচক্রে ধরা পড়ে যায়। বগুড়ার কাহালুতে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নানা ধরনের অস্ত্র মজুত এবং পাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।

২০০৫ সালের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। এর কয়েক দিন পর সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলায় তিনি এবং তার গাড়িচালক আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে এবং সোহেল আহম্মদ। এই হামলায় আহত হন অনেক মানুষ।

সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতী এক জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইনজীবীসহ ১০ জন নিহত হন। আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গিও নিহত হয় ।

একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন।

১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড় পুকুর পাড় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দু’নেতাসহ ৮ জন নিহত হন। শতাধিক আহত হন।

উল্লেখ্য, জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে করা অন্তত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন মানুষকে নিহত এবং ৮০০ জনকে আহত করে। এ সময় হুজিও বেশ কয়েকটি নাশকতামূলক হামলা চালায়। জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ‘বাংলাভাইয়ের’ নেতৃত্বে জেএমবি রাজশাহীর বাঘমারা, নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই এলাকায় নিজেদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আত্রাইয়ে মানুষ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখে।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি ও জঙ্গিদের উত্থানের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশকে অনিরাপদ রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে জোট সরকার কয়েকজন জঙ্গি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করলেও আটক জঙ্গি নেতারা আদালতে সরকারের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় ফাঁস করে দেওয়ায় জঙ্গি গ্রেফতার বন্ধ হয়ে যায়। জোট সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও মদত দেওয়ার প্রমাণ সে সময় মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাতেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছিল। ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে বসেই ২১ আগস্টের হামলার মূল পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেনেড হামলার দুই-তিন দিন আগে তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় পরিকল্পনা-সভা করেছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) নেতারা। হাওয়া ভবনে বসেই তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিস চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু, শাহ কায়কোবাদ, জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও জঙ্গি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানরাই শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হামলার পরিকল্পনা করে। এই হামলার গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে।

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্দোলনকারীদের খালেদা জিয়া ‘নাস্তিক’ বলেছিলেন। গুলশানে হলি আর্টিজানে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর খালেদা জিয়া প্রথমে বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত অভ্যুত্থান’ বলেছিলেন, যদিও পরে আবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় ঐক্যের হাস্যকর আহ্বান জানান। বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাই এই দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে এবং যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধর ও তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসীরাই এই দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। এরপর দেশে ব্যাপকভাবে জঙ্গি দমন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার পর কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজারে প্রায় ৩০টি অপারেশন পরিচালনা করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও র‌্যাব। এসব অভিযানে ৭৩ জন জঙ্গি নিহত হয়। পাশাপাশি, সারা দেশে ২৬ শতাধিক জঙ্গিকে আটক করা হয়।

গত কয়েক বছরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৫ থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৯টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিএমপিতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট নামে নতুন একটি জঙ্গিবিরোধী ইউনিট গঠন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে RAB ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ধর্মীয় নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, আনসার ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে বেশ কয়েকজন উগ্রবাদীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে। অনেকে আত্মসমর্থন করে স্বাভাবিক জীবনাচার শুরু করেছে।

গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী জঙ্গিবাদ দমনে এবারও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে।

ধর্মকে ব্যবহার করে উগ্রবাদের দিকে যুবকদের উৎসাহী করার প্রবণতা কমাতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। এসবের সঙ্গে, জঙ্গিদের মদত দেওয়া বা অর্থ জোগানদাতা বা আড়ালের হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

শান্তির ধর্ম ইসলাম জঙ্গিবাদ বা উগ্রতাকে সমর্থন করে না। ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘শেষ জামানার এমন একটি গোষ্ঠীর আবির্ভাব হবে, যারা বয়সে নবীন, বুদ্ধিতে অপরিপক্ব ও নির্বোধ। তারা পবিত্র কোরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালিও অতিক্রম করবে না। তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে। কিন্তু দীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। (তিরমিজি অধ্যায়-২৪)।

বিদায় হজে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না।’ সুতরাং ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই। মানুষের নিরাপত্তা নষ্ট বা বিঘ্নিত করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনও মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)

ইসলাম বিশৃঙ্খলা, বেআইনি কার্যকলাপ, ফিতনা-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা, নির্যাতন ইত্যাদি ধরনের কাজকে ইসলামে ফিতনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিতনা একটি জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফিতনা হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৯১)। এমনকি পবিত্র ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ফিতনাবাজ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।

নতুন প্রতিষ্ঠিত মডেল মসজিদগুলোকে প্রকৃত ইসলামের প্রচার ও প্রসারে কাজে লাগালে আরও সুফল পাওয়া যাবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এই মডেল মসজিদগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে।

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এখানে উগ্রবাদকে সামাজিকভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হবার সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদ নির্মূলকে জাতীয় স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় সতর্ক, যাতে জঙ্গি বা উগ্রবাদ মাথাচাড়া না দিতে পারে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রতা বাংলাদেশের জন্য নয়। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হলে, বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে বাংলাদেশের জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে যেন ধর্মের নামে কেউ উগ্রতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উসকে না দেয়। কোনও রাজনৈতিক শক্তি যেন ইসলামকে ভুলভাবে ব্যবহার করতে না পারে, ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য রাজনীতিবিদসহ রাজনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষ ও তাদের আশপাশের সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।

লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ